বাস্তুহীন সেই মহিলা মেম্বার পেলেন সরকারি জমি

বাংলাদেশে একজন জনপ্রতিনিধির নিজস্ব বাড়ি নেই! শুনেই চোখ কপালে ওঠার কথা। তবে এমনই এক জনপ্রতিনিধি রহিমা বেগম। প্রায় ১ যুগ ধরে যিনি ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ ব্রিজের নিচে বসবাস করছেন। বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদটি প্রকাশিত হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার উদ্যোগে সরকারি খাসজমির ১২ শতক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে সেই আলোচিত রহিমা বেগমের নামে।

নিজের ঘরের সামনে মহিলা মেম্বার রহিমা বেগম

প্রাকৃতিক নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও দীর্ঘ ১২ বছর রহিমা বেগম পরিবার নিয়ে কোনমতে বসবাস করছেন ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সঈদপুর বাজার সংলগ্ন মনু খালের ব্রিজের নিচে। দিন-রাত সেই ব্রিজের ওপর দিয়ে চলাচল করে হাজার হাজার যানবাহন। শুকনা মৌসুমে অবস্থা মোটামুটি হলেও বর্ষায় খালে বেড়ে যায় পানি। আর রহিমা বেগমের কপালে দেখা দেয় চিন্তার ভাঁজ।

অবশেষ উপজেলা প্রশাসন থেকে জমি পেয়েছেন তিনি। তবে অর্থের অভাবে ঘরবাড়ি নির্মাণে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ এখনই নিতে পারছেন না এই নারী ইউপি সদস্য। হাজারো নাগরিকের নাগরিক সুবিধার দেখভাল করেন তিনি অথচ তার নিজেরই নেই মাথা গোঁজার ঠাঁই! হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি ইউনিয়নের নির্বাচিত সংরক্ষিত মহিলা সদস্য হলেন রহিমা বেগম।

জানা গেছে, নির্বাচনে সংরক্ষিত আসন থেকে ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পরও ভূমিহীনের তালিকা থেকে নাম মুছেনি তার। গত ৩ জানুয়ারি যমুনা টিভি বিষয়টি নিয়ে একটি প্যাকেজ প্রচারিত হয় এরপরই বিষয়টি নজরে আসে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের। ওই দিনই প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাজিনা সারোয়ার। তিনি ভূমিহীন হিসেবে রহিমা বেগমকে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেন।

এই ঘরটিতেই পরিবার নিয়ে কোনমতে দিন কাটান রহিমা বেগম

ফ্রেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে রহিমা বেগমের নামে সরকারি ১২ শতক জমি রহিমা বেগমের নামে রেজিস্ট্রেশন করা হয়। জমি পেলেও ঘর বাড়ি নির্মাণের কাজ শুরু করতে পারেননি রহিমা। শনিবার রহিমা বেগম জানান, সাংবাদিকদের কারণেই ইউএনও মহোদয় আমাকে মাথা গোঁজার ঠাঁই দিয়েছেন। জমি আনুষ্ঠানিকভাবে পেলে বাড়িঘর তোলার কাজ শুরু করবো। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাজিনা সারোয়ার বলেন, 'রহিমা বেগমকে ১২ শতক খাস জমি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, খুব শিগগিরই রহিমা বেগমকে জমিটুকু আনুষ্ঠানিকভাবে দেয়া হবে।'

তিন বার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেন রহিমা। সর্বশেষ ২০১৬ সালের ২৮ মে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সংরক্ষিত মহিলা আসনে ৩জন প্রার্থীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন তিনি। রহিমা মাইক প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে অপর দুই প্রার্থী অপেক্ষা এক হাজার আট শত ভোট বেশি পেয়ে নির্বাচিত হন। তিনি আউশকান্দি ইউনিয়নের জালালপুর গ্রামের মকদ্দুছ মিয়ার স্ত্রী। স্বামী অসুস্থ, এছাড়াও সংসারে তার ২ ছেলে ও ১ মেয়ে রয়েছে।