ঢাবির এফ রহমান হলে ফের ছাত্রলীগের সংঘর্ষে আহত ১৩

তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে অন্তত ১৩ জন আহত হয়েছেন। হল ক্যান্টিনে ব্যাপক ভাংচুর করা হয়েছে। আহত হয়েছেন হল ক্যান্টিন বয়রাও।

ঘটনাটি এমন সময় ঘটলো যখন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ ক্যান্টিনের পরিবেশ ও খাবারের মান উন্নয়ন নিয়ে ছাত্রবান্ধব ১৯ দফা কর্মসূচি প্রচার করে বেড়াচ্ছে। মাসখানেক আগে এই হলেও খাবারের মান উন্নয়ন নিয়ে সভা করেছিল ছাত্রলীগ।

রোববার (২৩ এপ্রিল) রাত ৮টার কিছুপর খাবার টেবিলে বসার ইস্যুকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনাটি ঘটে। সংঘর্ষে হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি হাফিজ গ্রুপের সাত জন ও সাধারণ সম্পাদক তুষার গ্রুপের চার কর্মী আহত হন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, রোববার দুপুরে হল ক্যান্টিনে হাফিজ গ্রুপের দুই কর্মী রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের ফারুক ও নাহিদ খাবার খেতে যায়। এসময় খাবার টেবিলে বসার আসন ফাঁকা পেয়ে সেক্রেটারি গ্রুপের জামিলকে দ্রুত খাবার খেয়ে উঠার জন্য চাপ দেয়। জামিল তাদের কথামত উঠে না পরায় জামিলের সাথে হাফিজ গ্রুপের কর্মীদের কথাকাটি হয়।

ওই ঘটনার সূত্র ধরে রাত ৮টার দিকে হাফিজ গ্রুপের কর্মীরা ক্যান্টিনে ব্যাপক শোরগোল ও ভাংচুর শুরু করে। পরে উভয় গ্রুপ মুখোমুখি সংঘর্ষে জড়ায়। রড়, লাঠি দিয়ে পিটিয়ে আহত করা হয় ১৩ জনেক। ক্যান্টিন বয় মাসুদ ও মহসিনকে পিটিয়ে যখম করা হয়।

তুষার গ্রুপের আহত চার কর্মী হলেন প্রথম বর্ষের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের শাহাদাত হোসেন, ইসলাম শিক্ষা বিভাগের সজিব আহমেদ, শিল্প কলার ইতিহাস বিভাগের ফখরুল হোসেন সোহাগ ও দি্বতীয় বর্ষের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের সুজন হোসেন।

এছাড়া হাফিজ গ্রুপের প্রথম বর্ষের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের নাহিদ ও রাকিব হোসেন, শিক্ষা ও গবেষণা বিভাগের সুলাইমান, দর্শন বিভাগের বিল্লাল ,গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের রুবেল , সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অটল ও আইন বিভাগের রিফাত হোসেন।

ক্যান্টিন পরিচালক মোহাম্মাদ বাবুল মিয়া বলেন, ‍'দুই গ্রুপ মিলে আমার ক্যান্টিন ভেঙ্গে চুরমার করে দিয়েছে। ৬৫ থেকে ৭০টির মত বাটি প্লেট ভেঙ্গে ফেলেছে। রাতের খাবার সব নষ্ট করেছে। আমার অনেক টাকার লস। গত ১৭ বছরে কখন এমন কাজ কেউ করেনি।'

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষাথী বলেন, 'কিছুদিন আগে হলের টিভি রুম ভাংচুর করা হলো। এখেনা পর্যন্ত কারো বিচার হয়নি। এখন আবার ক্যান্টিন ভাংচুর করা হলো। এমন হলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের থাকার এবং পড়ার পরিবেশ উভয় নষ্ট হবে। সিসিটিভি দেখে এর বিচার করা উচিত।'

হল ছাত্রলীগের সভাপতি হাফিজুর রহমান ঘটনার বিষয়ে বলেন, 'ঘটনার সময় আমি হলে ছিলাম না। খবর পেয়ে হলে আসি। পরে মেডিকেলে আহতদের দেখতে গেছি। এই ঘটনায় যারা জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।'

হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান তুষার বলেন, ‌‍'হলে সামান্য বিষয় নিয়ে পরিকল্পিতভাবে আমার কর্মীদের উপর হামলা চালানো হচ্ছে। আগের ঘটনার বিচার যাতে না হয় সে জন্য এমন হামলা চালানো হয়েছে। এই ঘটনায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না।'

এফ রহমান হল ক্যান্টিনে ভাঙ্গচুর, খাবার নষ্ট ও ক্যান্টিনবয়দের মারধরের বিষয়ে বিশ্বিবদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আবিদ আল হাসান বলেন, 'যারা এই ঘটনার সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর আগের ঘটনায় আমরা কেন্দ্রীয় কমিটিতে বহিস্কার করার জন্য নাম জমা দিয়েছি।'

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্স বলেন, 'এবারের ঘটনা খুবই দুঃখজনক। যারা ক্যান্টিনের খাবার নষ্ট করে, কর্মচারীদের মারধর করে তাদের বিষয়ে কোন আপোষ করা হবে না।'

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এম আমজাদ আলী বলেন, 'ঘটনার সাথে জড়িতদের বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।' হল প্রভোষ্ট আফতাব উদ্দিনের বিরুদ্ধে বরাবরের মত এবারো দায়িত্বে অবহেলার অভিযােগ তুলেছে শিক্ষার্থীরা। ঘটনার পরপরই তিনি তার ব্যবহৃত মুঠোফোন বন্ধ রেখেছেন। প্রসঙ্গত, গত ৬ এপ্রিল বাংলাদেশ-শ্রীলংকা শেষ টি টুয়েন্টি ম্যাচের খেলা দেখার সময় হলে দুই গ্রুপ সংঘর্ষে জড়ালে পাঁচ জন আহত হয়। সেই ঘটনার সময়ও হল প্রভোষ্ট নিরব ভূমিকা পালন করেন।