হাওর পরিস্থিতি: কর্মকর্তাদের উদাসীনতায় ক্ষোভ প্রকাশ ত্রাণমন্ত্রীর

ত্রাণ ব্যবস্থাপনায় সরকারি কর্মকর্তাদের অদক্ষতা এবং উদাসীনতায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ত্রাণমন্ত্রী। গত কিছুদিন ধরে পাহাড়ী ঢল এবং অতিবৃষ্টির ফলে সৃষ্ট অকাল বন্যায় হাওর অঞ্চলের কৃষকদের ফসলের ক্ষতি এবং দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবেলায় করণীয় নিয়ে সরকারী একটি সভায় সরকারী কর্মকর্তাদের চরম উদাসীনতার চিত্র প্রকটভাবে ফুটে উঠে।

সোমবার রাতে নেত্রকোণা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বিদ্যমান পরিস্থিতি মোকাবেলায় নেত্রোকোণায় সকল শীর্ষ কর্মকর্তা এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় বসেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী।

সভার আলোচনায় কর্মকর্তাদের কথায় অকাল বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ, পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিভিন্ন পদক্ষেপের ঘাটতি প্রকটভাবে চোখে পড়ে। সে সময় স্থানীয় সরকারী কর্মকর্তাদের প্রশাসনিক দুর্বলতা, উদাসীনতা এবং দায়সারা বক্তব্যে চরম বিরক্তি প্রকাশ করেন মন্ত্রী এবং জনপ্রতিনিধিরা।

রাত ৮টায় শুরু হওয়া সভায় বিভিন্ন পরিসংখ্যান তুলে ধরে সভা সঞ্চালক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব জেলা কৃষি কর্মকর্তার কাছে হাওরের ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের জীবনযাত্রা উন্নয়নে কী করা যায় জানতে চান।

উত্তরে কৃষি কর্মকর্তা অসংলগ্ন বক্তব্য দিতে শুরু করলে ত্রাণমন্ত্রী বিরক্ত হয়ে বলেন, ‘বার বার সচিব মহোদয় বলছেন যে জরুরি কী কী লাগবে সে বিষয়ে কথা বলেন। আর আপনি বলছেন পানি নেমে গেলে কী কী করবেন।' এরপর জেলা মৎস্য কর্মকর্তাকে হাওরে পোনা ছাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মৎস্য কর্মকর্তা একবার ৩০ মেট্রিক টন বলে আবার ৬০ মেট্রিক টন পোনার কথা বলেন।

কৃষি কর্মকর্তা এবং জেলা মৎস্য কর্মকর্তার অদক্ষতায় বিরক্তি প্রকাশ করে ত্রাণসচিব একদিনের মধ্যে তাদের রিপোর্ট করতে বলে পরিস্থিতি মোকাবেলায় তাদের করণীয় এবং চাহিদাপত্র পেশ করার নির্দেশ দেন।

একইভাবে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের ডেটার সঙ্গে বাস্তবতার পার্থক্য দেখা যায়। ইউনিয়ন পর্যায়ে অসুখ-বিসুখের রিপোর্ট দিতে না পারায় এবং চিকিৎসক না পাঠানোয় সিভিল সার্জনকে এসময় ভৎর্সনা করেন ত্রাণ সচিব।

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বন্যা কবলিত এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো পরিদর্শনে গিয়েছিলেন কিনা জানতে চাইলে উত্তর এড়িয়ে কর্মকর্তা উপবৃত্তির পরিমাণ ৬০ শতাংশ বাড়াতে বলেন। এ সময় উপবৃত্তির পরিমাণ সংখ্যায় বলতে বললে তিনি নিশ্চুপ থাকেন।

সভা শেষে সরকারী কর্মকর্তাদের উদাসীনতায় ক্ষোভ প্রকাশ করে ত্রাণ সচিব বলেন, ‘চাহিদা অনুযায়ী যা থাকা উচিত ছিল তা তারা রাখেননি, যা চাওয়ার ছিল তারা চাইতেও পারেননি। তারা ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন, এদের ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা উচিত। প্রশাসন পিছিয়ে পড়বে এটা হতে পারে না। কর্মকর্তারা সঠিক তথ্য রাখছেন না এটা আজ উঠে এসেছে।'

সমাপনী বক্তব্যে ত্রাণমন্ত্রী বলেন, 'ত্রাণ সচিব সুচারুভাবে প্রত্যেক সরকারি কর্মকর্তার দায়িত্ব ও করণীয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। ছয় জেলায় ছয় থেকে আট লাখ মানুষ এখন পানির সাথে লড়াই করছে; তাদের মুখে এখন হাসি থাকার কথা, কিন্তু মাথায় হাত। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন, এদের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য। আপনারা যা চাইবেন, তাই দেব, কোনো অভাব নাই।'