জলাবদ্ধ ঢাকা যেন একটি 'নদী', দুর্ভোগ চরমে

মঙ্গলবার দিবাগত রাতে প্রচুর বৃষ্টিপাতের পর আজ বুধবার রাজধানীতে বসবাসকারী মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে। রাজধানীর রাজপথ, পাড়া-মহল্লার গলি তলিয়ে গেছে পানিতে। জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে অধিকাংশ এলাকায়। অবস্থা এমন পর্যায়ে গেছে, যে অনেকে মজা করে বলছেন, ঢাকাকে নদী ঘোষণা করা এখন সময়ের দাবি।

রাজধানীর মিরপুর কাজী পাড়ার একটি রাস্তায় দুর্ভোগের চিত্র

আবহাওয়া অফিস বলছে, গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে আজ বুধবার সকাল ৬টা রাজধানীতে ৬০ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। এই বৃষ্টিপাতেই পানিতে 'তলিয়ে' গেছে ঢাকা। আজ সকাল থেকে রাজধানীর অধিকাংশ সড়কে ছিল তীব্র যানজট। অফিসগামী অনেকেই জলাবদ্ধতার কারণে নানামুখি বিপদে পড়েছেন। অনেকে আবার জুতা হাতে নিয়ে প্যান্টগুটিয়ে রওনা হয়েছে কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে। তবে রাস্তাঘাটে যানবাহনের ব্যাপক সংকট দেখা গেছে।

আবহাওয়াবিদ রুহুল কুদ্দুস জানান, গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে আজ বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় মোট ১০৩ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অফিস। যা সারাদেশের মধ্যে সবচাইতে বেশি। বলা হচ্ছে, বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আরো কয়েকদিন থাকবে। ফলে জলাবদ্ধতা থেকে সহসাই মুক্তি মিলিছে না নগরবাসীর।

আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, রাজধানী ঢাকার পর দেশে সবচাইতে বেশি বৃষ্টিপাত হচ্ছে রাজশাহীতে। বিগত ২৪ ঘণ্টায় ৩০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে সেখানে। এছাড়াও ময়মনসিংহে ২৮, সিলেটে ১৯, খুলনায় ৬, বরিশালে ৬, চট্টগ্রামে ৫ ও রংপুরে ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

রাজধানীতে জলাবদ্ধতা বিষয়ক সকল সমস্যা দেখভাল করে মূলত আটটি সংস্থা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজধানীর এই জলাবদ্ধতার জন্য দায়ী এই সংস্থাগুলোই। সংস্থাগুলো হলো- রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), ঢাকা ওয়াসা, ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন, পরিবেশ অধিদপ্তর, ভূমি অধিদপ্তর, রেলওয়ে ও পানি উন্নয়ন বোর্ড। এই সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতা আর অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই ভেসে যাচ্ছে রাজধানী।

জানা গেছে, রাজধানীতে জমে থাকা বিভিন্ন এলাকার পানি বাইরে বের করে দেওয়ার জন্য ২৫০টি পাম্প ব্যবহার করার কথা। তবে দু:খের বিষয় ২৫০টি পাম্পের মধ্যে চালু আছে মাত্র ১৫৬টি। পাশাপাশি বৃষ্টির পানি ধরে রাখার মতো পর্যাপ্ত জলাধারও নেই রাজধানীতে। সামান্য বৃষ্টিতেই উপচে পড়ে রাজধানীর ড্রেনগুলো। পরিবেশবিদরা বলছেন, রাজধানীর খাল এবং লেকগুলো সংস্থার না করাও জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ। পাশাপাশি নগরীর চার হাজার টন কঠিন বর্জ্য অপসারনে সিটি কর্পোরেশনের অদক্ষতাকেও দোষ দিচ্ছেন অনেকে।

বৃষ্টি মুখর ঢাকা। বৃষ্টিপাত আরো তিনদিন থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস

রাজধানী ঘুরে দেখা গেছে, মতিঝিল, মালিবাগ, মগবাজার, শান্তিনগর, শাহজাহানপুর, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, মিরপুরসহ বিভিন্ন নিচু এলাকায় ব্যাপক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। রাজধানীতে বর্তমানে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি আর সংস্কারের নামে চলছে উন্নয়নের মহাযজ্ঞ। ফলে এই বৃষ্টিপাতে রাজধানী বাসীর ভোগান্তির শেষ নেই।

বিশিষ্ট পানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত জানান, রাজধানীর স্যুয়ারেজ ও ড্রেনেজ সিস্টেম একেবারে অকার্যকর। পাশাপাশি রাজধানীতে অপরিকল্পিত ঘরবাড়ি নির্মাণ, জলাধার দখল, অতিরিক্ত বর্জ্য, বর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থায় অব্যবস্থাপনা আর রাজধানীকে দেখভালের দায়িত্বে থাকা সংস্থাগুলোর দায়িত্বহীনতাই এই জলাবদ্ধতার মূলকারণ।