বাঙালিদের ভিড়ে মিশে যাচ্ছে রোহিঙ্গারা, নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন...

স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে যখনি মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর অত্যাচার-নিপীড়ন চলেছে তখনি তারা দলে দলে বাংলাদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। বিগত এক সপ্তাহে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান সহিংসতায় দুই লক্ষাধিক রোহিঙ্গা মুসলমান বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন। কক্সবাজার-টেকনাফের স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, চেহারায় মিল থাকায় রোহিঙ্গারা মিশে যাচ্ছেন সাধারণ মানুষের সঙ্গে।

চট্টগ্রামের ইস্পাহানি মোড়ে ৯ বা ১০ বছরের এক শিশুকে ভিক্ষা করতে দেখা যায়। পাঞ্জাবি পরা শিশুটির চেহারা স্থানীয় শিশুদের মতোই। কথা বলে জানা যায়, নাম তার মাইদুল হাসান, বাড়ি মিয়ানমারের মংডু’র নাটবিলে। সেনাবাহিনী তার বাবাকে হত্যার পর মা ও বোনসহ বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। কাজির দেউরি এলাকাতেও অনেককে ভিক্ষা করতে দেখা যায়, যাদের বাড়ি মিয়ানমারে। শরণার্থী ক্যাম্প থেকে পালিয়ে নগরীর আউটার স্টেডিয়ামসহ আশপাশের বিভিন্ন বস্তিতে রোহিঙ্গারা পরিবার নিয়ে খুঁটি গেড়েছে।

স্থানীয়রা বলছেন, চট্টগ্রামের বাসিন্দাদের সঙ্গে ভাষা ও শারীরিক গঠনগত মিল থাকায় নগরবাসীর সঙ্গে মিশে যাচ্ছে রোহিঙ্গারা। অভিযোগ আছে, অনেকে চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় কাজকর্ম করছে। যারা অত্যন্ত অসহায় তারা ভিক্ষাবৃত্তিতে জড়িয়ে পড়ছেন। তবে পুলিশ বলছে, নতুন করে কোন রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢোকার পর চট্টগ্রামে অনুপ্রবেশ করেনি।

গতকাল কাজির দেউরির স্টেডিয়ামের আশপাশে একাধিক নারীকে ছোট ছোট ছেলে-মেয়েসহ ভিক্ষা করতে দেখা যায়। মায়েরা ফুটপাতে বসে থাকছেন আর তাদের শিশু সন্তানরা শিশুপার্ক ও খাবারের হোটেলের সামনে পথচারীদের কাছে খাবার ও টাকা ভিক্ষা করছে। অভিযোগ আছে, অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গারা ভিক্ষাবৃত্তির পাশাপাশি নগরীতে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকছেন। তৈরি পোশাক কারখানাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেয়ার ঘটনাও ঘটছে অহরহ।

অভিবাসন ও মানবপাচার নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংগঠন ইয়ং পাওয়ার ইন সোশ্যাল অ্যাকশনের (ইফসা) সাবেক প্রোগ্রাম ম্যানেজার সিরাজ উদ্দিন বেলাল বলেন, 'রোহিঙ্গাদের ভাষা ও শারীরিক গঠন চট্টগ্রামের সাধারণ মানুষের মতোই। সহজেই তাদের চিহ্নিত করা সম্ভব নয়। এই সুবিধা আর মানুষের সহানুভূতিকে কাজে লাগিয়ে তারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ছে। আগামীতে এটা বাংলাদেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকির কারণ হতে পারে।'

সিরাজ উদ্দিন বেলাল বলেন, 'এক সময় দেশে প্রায় তিন লাখের মতো রোহিঙ্গা ছিল। এখন আর তাদের দেখতে পাওয়া যায় না। তারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবেই তাদের গণ্য করা হচ্ছে। সব বিবেচনা করে রোহিঙ্গাদের তালিকা করা জরুরি।'

নতুন ব্রিজ এলাকার অনেকেই বলেন, কারা রোহিঙ্গা আর কারা চট্টগ্রামের এটা বের করা মুশকিল। রোহিঙ্গারাও চট্টগ্রামের আঞ্চলিক বাসায় কথা বলতে পারে। তবে পুলিশ এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে। চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার নূরে আলম মিনা বলেন, 'রোহিঙ্গারা চট্টগ্রাম জেলার অভ্যন্তরে কোথাও যেন বসতি স্থাপন করতে না পারে সেজন্য আমাদের নজরদারি অব্যাহত রয়েছে। জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশনা দেয়া আছে, অপরিচিত কেউ বসতি গড়লেই যেন পুলিশকে খবর দেয়া হয়। অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের চট্টগ্রাম জেলায় প্রবেশের কোন সুযোগ নেই।'

নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (প্রশাসন) মাসুদুর রহমান বলেন, 'রোহিঙ্গারা চট্টগ্রামে ছড়িয়ে পড়ছে এমন তথ্য আমরা পাইনি। তবে মিয়ানমারের নাগরিকদের ধর্ম-বর্ণ আমাদের মতোই। নির্দিষ্ট তথ্য ছাড়া তাদের চিহ্নিত করা কঠিন। চেক পোস্ট থাকলেও কখনো তারা সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিচ্ছেন। আমরা এ ব্যাপারে সচেতন রয়েছি। চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারকে প্রধান করে একটি টাক্সফোর্সও গঠিত হয়েছে। রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশসহ অন্যান্য বেশকিছু বিষয়ে এই কমিটি কাজ করবে।'