র‌্যাম্প মডেল থেকে জঙ্গি কমান্ডার!

মডেলিংয়ের আগ্রহটা তাকে দারুণভাবে টানতো। তাই হয়েছেন র‍্যাম্প মডেল। তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ এই যুবক পাশাপাশি ব্যবসাও করতেন। ঢাকার দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ সম্পন্ন করেছেন। অনর্গল কথা বলতে পারেন ইংরেজিতে, লেখাতেও বেশ দক্ষ। উচ্চ মাধ্যমিকে থাকতেই মডেলিং জগতে প্রবেশ।

বলছিলাম ২৯ বছর বয়সী যুবক মেহেদী হাসানের কথা। তার বাবা খোরশেদ আলম, ছিলেন পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই)। ১৯৯৯ সালে তিনি অবসরে যান। কিন্তু হাঠাৎ করেই মেহেদী তার ব্যবসা, পছন্দের মডেলিং সব ছেড়ে দিয়ে ঝুঁকে গেলেন মরণ নেশায়। জড়িয়ে পড়লেন জঙ্গিবাদে।

বড় কোন দুর্ঘটনা ঘটানোর আগেই তার অবস্থান জানতে পারে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)। বুধবার রাত ১২টার পরে রাজধানীর খিলগাঁওয়ের দক্ষিণ বনশ্রী এলাকার একটি বাসা থেকে মেহেদীকে আটক করেছে র‍্যাব-৩। তার কাছ থেকে দুটি ল্যাপটপ, একটি মোবাইল ফোন, একটি পাসপোর্ট ও উগ্রবাদী বই উদ্ধার করার কথা জানিয়েছে র‌্যাব।

পরিবারের বক্তব্য: তবে মেহেদীর পরিবার দাবি করেছে, গত মে মাসের ৪ তারিখ থেকে মেহেদী নিখোঁজ ছিলেন। তার সন্ধান চেয়ে খিলগাঁও থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিল তার পরিবার। মেহেদীর বড় ভাই ওয়ালিউর আলম বলেন, ৪ মে সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে বের হন মেহেদী। এরপর থেকে তাঁর কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না। জিডি করার পর থানা ও র‍্যাব-৩ কার্যালয়ে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু মেহেদীর কোনো সন্ধান থানা-পুলিশ কিংবা র‍্যাব থেকে তাঁদের দেওয়া হয়নি।

তিনি বলেন, ‘মেহেদীর জঙ্গি কর্মকাণ্ডে জড়িত হওয়ার বিষয়ে কিছু জানা নেই। মেহেদী বিয়ে করেছেন ঢাকার এক মেয়েকে। তাঁর স্ত্রী বর্তমানে অন্তঃসত্ত্বা। চার বোন, দুই ভাইয়ের মধ্যে মেহেদী সবার ছোট। মডেলিংয়ে পরিবার থেকে নিরুৎসাহিত করা হয়। একসময় পুরান ঢাকার চকবাজার থেকে খেলনাসামগ্রী কিনে বিভিন্ন দোকানে সরবরাহ করতেন। পাশাপাশি দেশের বাইরে থেকে চকলেট এনে বিভিন্ন দোকানে বিক্রি করতেন। আগে মডেলিংয়ে যুক্ত থাকলেও কয়েক বছর ধরে তিনি সেসব ছবি নষ্ট করে ফেলেন।’

র‌্যাবের বক্তব্য: মেহিদে কে আটকের পর বৃহস্পতিবার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে র‍্যাব-৩-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল তুহিন মোহাম্মদ মাসুদ জানিয়েছে, ইমাম মেহেদী হাসান ওরফে আবু জিব্রিল নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবির সারোয়ার-তামিম গ্রুপের ‘ব্রিগেড আদ-দার-ই-কুতনী’র কমান্ডার। তার গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর রাজাপুরে। বনানী থানায় সন্ত্রাস দমন আইনে করা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি তিনি। একই আইনে উত্তরা পশ্চিম থানায় দায়ের করা আরেকটি মামলার তদন্তে করতে যেয়ে বেরিয়ে এসেছে তার নাম।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে ব্রিফিংকালে তিনি বলেন, ‘মেহেদী হাসান ২০১৫ সালে জেএমবির সারোয়ার-তামিম গ্রুপের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়। তাঁর সঙ্গে নিবরাসসহ হোলি আর্টিজান ও কল্যাণপুরের আস্তানার জঙ্গিদের সংশ্লিষ্টতা ছিল বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন।’

লে. কর্নেল তুহিন মোহাম্মদ মাসুদ বলেন, মেহেদীর কাছ থেকে উদ্ধার করা আলামত থেকে জানা যায়, ‘আদ-দার-ই-কুতনী’ অপারেশনাল সক্ষমতা অর্জন ও যেকোনো স্থানে নাশকতার জন্য সক্ষম। জঙ্গি কর্মকাণ্ডের জন্য কর্মী, অর্থ সংগ্রহ, জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করা, হিজরতপূর্ব প্রস্তুতিমূলক পর্ব সম্পন্ন করা, সাংগঠনিকভাবে বিয়ের ব্যবস্থা করার কাজ করতেন মেহেদী হাসান। এছাড়া দেশে ও দেশের বাইরে জঙ্গি কর্মকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ, অর্থ ও অস্ত্র সংগ্রহের কাজও করতেন তিনি।