আপনি পড়ছেন

টানা দুইদিনের বৃষ্টিপাতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় তীব্র জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন নগরবাসী। প্রধান সড়ক ও দোকান-পাট থেকে শুরু করে অলি-গলি পর্যন্ত পানিতে থৈ থৈ করছে।

flood in mirpur kazi para

গতকাল শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ার কারণে বৃষ্টিতে অনেকে নাক ঢেকে ঘুমিয়েছেন অথবা পরিবারের সঙ্গে চিত্তবিনোদনে সময় দিয়েছেন। আর আজ শনিবার প্রায় সব প্রতিষ্ঠানই খোলা। কিন্তু বাসা থেকে বের হওয়ার জো নেই। পানিতে থৈ থৈ করছে রাজধানীর বিভিন্ন অলিগলির পথ।

আর বৃষ্টির কারণে রাজপথও ভালো নেই। রাস্তাগুলোর তিনভাগের দুই ভাগই অকেজো হয়ে পড়েছে। যার কারণে তীব্র যানজটের সৃষ্টিও হয়েছে ব্যস্ত সড়কগুলোতে। এই প্রতিকূল পরিবেশেও ঘর থেকে বের হতে হচ্ছে কর্মজীবী নগরবাসীদের। জীবিকার টানে কর্মস্থলমুখী আর নানা প্রয়োজনে রাস্তায় নামা মানুষের দুর্ভোগের যেন শেষ নেই।

বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে শুরু হওয়া টানা বৃষ্টিতে রাজধানীর মিরপুরের বিভিন্ন এলাকায় চরম জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে কাজিপাড়া, শেওড়াপাড়া ও কালশির সাংবাদিক আবাসিক এলাকা বৃষ্টিতে ডুবে গেছে। জায়গার মূল সড়ক ডুবে গেছে হাটু পানির নিচে। কোনো কোনো জায়গায় কোমড় পানিও জমে গেছে। এছাড়াও বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিল, শান্তিনগর, মালিবাগ, কারওয়ান বাজার, নিউমার্কেট এলাকায় জলাবদ্ধতার কারণে চরম দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও রাসেল স্কয়ার, সংসদ ভবন এলাকা, গ্রীন রোডসহ বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা আতংকে রূপ নিয়েছে।

কাকরাইলের বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের জুনিয়র কর্মকর্তা মঞ্জুরুল কাদের রামপুরা এলাকায় ছাতা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। প্যান্ট হাঁটু পর্যন্ত উঠিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ওই কর্মকর্তা বাস-মিনিবাসের জন্য অপেক্ষায় রয়েছেন। ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘বাসার সামনে কোমর সমান পানি। তা ডিঙিয়ে মেইনরোডে এসে দেখি গুলিস্তান রুটের বাস নেই। নতুনবাজার থেকে জ্যামের কারণে হেঁটে এসেছি। রিকশার ভাড়া খুব বেশি। এখন যদি বাস-মিনিবাসে উঠতে পারি তাহলে রক্ষা। না হয় এই রাস্তায় রিকশা করে যেতেও ৭০/৮০টাকা লাগবে।

মালিবাগ থেকে মৌচাক পর্যন্ত ফুটপাত একেবারই ফাঁকা। চা বিক্রেতা হাকিম উদ্দিন বললেন, ‘খুবই খারাপ দিন যাইতাছে। কালকেও বিক্রি নাই। আজকেও হবে বলে মনে হইতেছে না।’ টানা বৃষ্টির কারণে ধানমণ্ডির মতো অভিজাত এলাকায়ও ব্যাপক জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। ধানমণ্ডি ২৭ নম্বর, শুক্রবাদ, ফার্মগেট, ইন্দিরা রোড, পূর্বরাজাবাজারসহ বিভিন্ন এলাকার রাস্তাঘাট চলাচল অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে।

রামপুরা থেকে মাদারটেক, ত্রিমোহনী বা ডেমরাগামী যাত্রীরাও সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে রামপুরা ব্রিজে অপেক্ষারত এক যাত্রী বলেন, ‘আধা ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করছি। ডেমরা রুটের বাস পাচ্ছি না।’ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মালিবাগের চৌধুরীপাড়া এলাকায় কোমর সমান পানি। আর খিলগাঁও ডিসিসি মার্কেট থেকে আবুল হোটেল মার্কেট পর্যন্ত রাস্তা পানিতে তলিয়ে গেছে। মালিবাগ রেলগেইটেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। এছাড়া যাত্রাবাড়ী, মাতুয়াইল, কাজলা ও ডেমরা এলাকার বিভিন্ন সড়কেও জলাবদ্ধতা বিষয়টি মোবাইলফোনে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

এছাড়া ঢাকা-গাজীপুর মহাসড়কের দুই তৃতীয়াংশই তলিয়ে গেছে। যতটুকু অংশ দিয়ে যানবাহন চলাচল করছে তাতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। ময়মনসিংহ থেকে ঢাকাগামী শরীফ নামে এক যাত্রী বলেন, ‘গাজীপুর থেকে টঙ্গী আসতে চার ঘণ্টা লেগেছে।’

এদিকে টানা বৃষ্টিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবন, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি, রাজু ভাস্কর্য, মল চত্বর, টিএসসি ও কার্জন হল এলাকা পানিতে থৈ থৈ করছে। এছাড়া জহুরুল হক হল, সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, হাজী মোহাম্মাদ মুহসিন হল, কবি জসীমউদদীন হল, বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হল, ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ব্যাপক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে পড়তে আসা জহুরুল হক হলের এক আবাসিক শিক্ষার্থী বলেন, ‘লাইব্রেরির সামনে ব্যাপক পানি জমে আছে। ময়লাযুক্ত ওই পানি পার হতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে।’

প্রসঙ্গত, আবহাওয়া অধিদফতরের দেয়া বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটি উত্তর ও উত্তর পূর্ব দিকে অগ্রসর হচ্ছে। যার ফলে রোববারের আগে বৃষ্টিপাত কমছে না। আবহাওয়াবিদ মোহাম্মদ শাহীদুল ইসলাম বলেন, ‘বৃষ্টিপাতের চলমান প্রবণতা অব্যাহত থাকবে আজ শনিবার পর্যন্ত। রোববার কমার সম্ভাবনা রয়েছে।’

উপকূলীয় অঞ্চলে এখনও তিন নম্বর সতর্কতা সংকেত বলবৎ রয়েছে। উপকূলে জলোচ্ছ্বাসের শঙ্কাও করছে আবহাওয়া অফিস। দেশের কোথাও কোথাও অতিভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে, বলছে আবহাওয়া অফিস। জলোচ্ছ্বাসের বিষয়ে আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বলেন, ‘এখনো জলোচ্ছ্বাস বলবৎ আছে। তবে জলোচ্ছ্বাস কোথায় কি পরিমাণ হচ্ছে বিষয়টি এখনো পর্যালোচনা চলছে। এ অবস্থায় সাগর উত্তাল থাকায় সব মাছ ধরার নৌকা, ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।’

আবহাওয়া বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, রংপুর, দিনাজপুর, রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, ঢাকা, ফরিদপুর, যশোর, কুষ্টিয়া, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও সিলেট অঞ্চল দিয়ে ঘন্টায় ৬০ খেকে ৮০ কিলোমিটার বেগে অস্থায়ীভাবে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। সেই সঙ্গে বজ্রসহ বর্ষণ হতে পারে। এসব এলাকার নদী বন্দরগুলোকে দুই নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.