'দেশাল, কালাইয়া' নামে স্পটে স্পটে বিক্রি হচ্ছে গাঁজা

রাজধানীর বিভিন্ন স্পটে হাত বাড়ালে সহজেই পাওয়া যাচ্ছে নানা ধরণের মাদকদ্রব্য। একশ্রেণীর প্রভাবশালীর ছত্রছায়ায় ব্যবসায়ীরা মাদকের নীল বিষ ছড়িয়ে দিচ্ছে তরুণ সমাজে। ইদানিং কৌশলী হয়েছে মাদক ব্যবসায়ীরা। তারা মাদকের নাম বদলে দিয়ে দেদারসে বিক্রি করছে মরণ নেশা।

বর্তমানে বিভিন্ন পার্ক কিংবা মাদকের স্পটগুলোতে সহজেই হাত বাড়ালে পাওয়া যাচ্ছে গাঁজা। এটিই নগরীর বহুল প্রচলিত, সহজলভ্য এবং কমমূল্যের নেশাজাত দ্রব্য। অনুসন্ধানে জানা গেছে, বর্তমানে রাজধানীতে ব্যাপক জনপ্রিয় নাটোরের গাঁজা। যেটি ধনীর দুলাল বা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়াদের কাছে কালাইয়া, কালা ভুনা বা দেশাল নামে পরিচিত। আর নরমাল গাঁজা বিক্রি হচ্ছে পোটলা, ডন বা সবজি নামে।

গাঁজা ব্যবসায়ীদের একটি সিন্ডিকেট আবার ফোনের মাধ্যমেও সরবরাহ করছে মাদকটি। সিন্ডিকেটটি ইদানিং রাজধানীর বেশ কিছু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েটসহ অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজের শিক্ষার্থীদের কাছে ফোনে দেশাল পৌঁছে দিচ্ছে। নামটি নতুন হওয়ায় সহজেই তারা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ফাঁকি দিতে সক্ষম হচ্ছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরও বলছে 'দেশাল' সম্পর্কে তাদের কাছে কোনো তথ্য নেই।

গাঁজা সেবী এবং ব্যবসায়ীরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বর্তমানে উত্তরবঙ্গের জেলা নাটোরের গাঁজার চাহিদা সবচাইতে বেশি। এটি মানেও উন্নত। বলা হচ্ছে, নাটোরের গাঁজা বা দেশাল নামের গাঁজার গন্ধ গদবাঁধা গন্ধের চাইতে আলাদা। গন্ধ গাঁজার মতো না হওয়ায় ক্রমাগত বাড়ছে এই দেশালের চাহিদা।

জানা গেছে, দেশালের ব্যবসায়ীরা প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিতে কখনও সরাসরি নাটোর থেকে ঢাকা আবার কখনও সিরাজগঞ্জের মামুদপুর, কান্দাপাড়া ও সুইপার কলোনি থেকে রাজধানীতে প্রবেশ করে। এই গাঁজার দামও অনেক বেশি নাটোরে স্থানীয়ভাবে ২৫ গ্রাম দেশাল বিক্রি হয় ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায়, সিরাজগঞ্জে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকায় এবং রাজধানীতে বিক্রি হয় ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকায়।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর বলছে, বাংলাদেশে ১৯৮৭ সালে গাঁজার চাষ নিষিদ্ধ করা হয়। এরপর ১৯৮৮ সালে গাঁজার বেচাবিক্রি বন্ধ করা হয়। তবে এরপরও দাম কম আর বহন সুবিধার কারণে গাঁজার বিস্তার কমেনি। দেশের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলো থেকে প্রতিনিয়ত আন্তনগর ট্রেন ও বাস, ট্রাক ও প্রাইভেট কারে করে রাজধানীতে আসছে গাঁজার বড় বড় চালান।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের ঢাকা মেট্রো উপ-অঞ্চলের পরিচালক মুকুল জ্যোতি চাকমা বলেন, 'সব ধরণের মাদকে বিরুদ্ধে আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি। যারা মাদকের চোরাচালান বা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। গাঁজার যে নতুন নাম দেশালের কথা বলা হলো, সে বিষয়ে আমাদের কাছে এখনো কোন তথ্য নেই। তবে আমরা এ বিষয়ে খোঁজ-খবর নিচ্ছি।'