রাজধানীর ক্লিনিকে শিশু বিক্রির করুণ কাহিনী...

রাজধানীতে বিনামূল্যে চিকিৎসার কথা বলে ক্লিনিকে এনে শিশু বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে। কদমতলীর পারভীন নামক ক্লিনিকে চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি ঘটেছে। আলোচিত এই ক্লিনিকটি কদমতলীর ৯৫ বউ বাজার গ্যাস রোডে অবস্থিত।

লোমহর্ষক এই ঘটনায় পারভীন ক্লিনিকের মালিক মোছা. পারভীন (৫৫) পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারও হয়েছেন। এছাড়াও পারভীনের ছেলে কুসুম (৩১) এবং চক্রের সদস্য জোবেদা (৪০) ও জহুরাকে (৩৫) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এদের বাড়ি গাজীপুর জয়দেবপুরের বালিয়াপাড়া গ্রামে। পুলিশের বিশেষ টিম তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে।

যেভাবে বিক্রি হয় শিশু: ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটের নাগলা গ্রামের বাগান বাড়ির মেয়ে প্রিয়া খাতুন (২২)। স্বামী আইনাল হক কোনো কাজকর্ম না করায় তাদের অভাব-অনটনের সংসার। অভাব ঘুচাতে বাধ্য হয়ে এক মাস বয়সী ছেলে শিশু সন্তান হোসাইনকে নিয়ে কাজের সন্ধানে গাজীপুরের জয়দেবপুরে আসেন প্রিয়া। প্রিয়ার আরেকটি পাঁচ বছরের মেয়ে রয়েছে। মেয়েটি তার বাবার সঙ্গে গ্রামের বাড়িতেই থাকে।

জয়দেবপুর এসেও তার ভাগ্যের চাকা ঘুরেনি। কোনো কাজ জুটাতে পারেননি তিনি। এরই মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়ে ছোট্ট শিশু হোসাইন। এমনিতেই থাকা-খাওয়ার টাকা নেই। তার ওপর চিকিৎসার টাকা আসবে কোত্থেকে?

এই অসহায়ত্ব এক প্রতারক চক্রের নজরে পড়ে। প্রিয়াকে প্রলোভন দেখানো হয় যে, তার ছেলেকে বিনামূল্যে চিকিৎসা দেয়া হবে। এজন্য প্রিয়াকে তার সন্তানসহ রাজধানীর কদমতলীর একটি ক্লিনিকে নিয়ে আসা হয়। সেখানে ক্লিনিকের মালিক পারভীনের কাছে শিশু হোসাইনকে বিক্রি করে দেয় প্রতারক চক্র। পরে পারভিন শিশুটিকে আবার ওয়ারী এলাকায় বিক্রি করে। এ ঘটনায় মঙ্গলবার রাজধানীর কদমতলী থানায় মামলা করেছেন প্রিয়া। বৃহস্পতিবার অভিযুক্ত তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

শিশুর মায়ের কথা: বিক্রি হয়ে যাওয়া শিশুর মা প্রিয়া পুলিশকে বলেন, ‘আমার অভাবের সুযোগ লইয়্যা ছেলের চিকিৎসার লাইগ্যা জোবেদা এবং জহুরা এ মাসের এক তারিখ (১ নভেম্বর) আমারে জয়দেবপুর থেকে ঢাকায় লইয়া আয়। জওরের (দুপুর) সময় তারা আমারে লইয়া ফারভীন ক্লিনিগে যায়। নিচতালায় আমরা বইয়া রইছি (অপেক্ষা করছিলাম)। এমুন সময় ফারভীন এবং তার পুত (ছেলে) কুসুম এসে জহুরাকে বলে, বাচ্চাকে নিয়ে উপরে আস। তাকে চেকআপ করাইতে অইবো। জহুরা বাচ্চাকে নিয়ে উপরে গেলে আমি নিচতলায় সোফায় বইয়া অপেক্ষা করছিলাম। সন্ধ্যা পর্যন্ত হুসাইনরে না ফাইয়্যা চিল্লাচিল্লি করছি. কানছি (কাঁদছি)। পরে জোবেদা কয় চল বাইরে যাই। তোমারে ছ্যারারে মনে অয় কেউ লইয়্যা গেছেগা। আও খুইজ্যা দেই। পরে কৌশল কইরে সে আমারে গাজীপুরে নিয়ে যায়। এর দুই দিন আবার জিগাইলে জোবেদা জানায়, তোমার ছ্যাড়ারে (ছেলেকে) বেইচ্যালচে (বিক্রি করে দেয়া হয়েছে)।’

পুলিশ প্রশাসনের কথা: পুলিশের ওয়ারী বিভাগের উপ-কমিশনার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন জানান, শিশুটিকে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। পুলিশের ওয়ারী বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। প্রতারণার মাধ্যমে চিকিৎসার জন্য এনে শিশুটিকে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে শিশুটির মায়ের দরিদ্রতাকে পুঁজি করা হয়েছে। ঘটনাটিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।

শ্যামপুর জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) ফজলুর রহমান জানান, এ চক্রের মূল হোতা ক্লিনিক মালিক পারভীন। সে বাচ্চাটিকে নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে অন্যত্র বিক্রি করে দিয়েছে।