এবার আমরণ অনশনে যাচ্ছেন মাদ্রাসাশিক্ষকেরাও

নিবন্ধিত স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা জাতীয়করণের দাবিতে টানা আট দিন অবস্থান ধর্মঘট পালনের পর মঙ্গলবার থেকে আমরণ অনশনের ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষকেরা।

১ জানুয়ারি থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছেন তারা। তাতে সাড়া না পাওয়ায় দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অনশন কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয়া হল।

কয়েকদিন আগে একই স্থানে এমপিওভুক্তির দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালনের পর আমরণ অনশনে যান নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারীরা। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশ্বাস নিয়ে ঘরে ফেরেন তারা।

সোমবার সকালে আন্দোলনরত বাংলাদেশ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতির মহাসচিব কাজী মোখলেছুর রহমান বলেন, সোমবারের মধ্যে জাতীয়করণের দাবি আদায় না হলে মঙ্গলবার থেকে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করা হবে।

টানা আট দিন অবস্থান ধর্মঘটে থাকা শিক্ষকরা ঠাণ্ডাজনিত রোগে ভুগলেও প্রধানমন্ত্রীর সুস্থতা এবং দেশ ও জাতির শান্তি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করেন। এ সময় অনেককেই কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা যায়।

শিক্ষক নেতারা জানান, জাতীয়করণের দাবিতে ২০১৭ সালের ১০ নভেম্বর প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন পালনের পর প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হয়। ওই বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে দাবি আদায়ের আল্টিমেটাম দিয়ে কর্মসূচি স্থগিত করা হয়। কিন্তু সাড়া না পাওয়ায় ১ জানুয়ারি থেকে অবস্থান ধর্মঘট শুরু করেন তারা।

এর আগে রবিবার বেলা একটার দিকে শিক্ষক সমিতির সভাপতি কাজী রুহুল আমিন চৌধুরীর নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের নতুন শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত আলীর সাথে দেখা করে স্মারকলিপি দেন। এ সময় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

ওই প্রতিনিধিদলে থাকা সমিতির দপ্তর সম্পাদক ইনতান বিন হাকিম বলেন, স্মারকলিপি দেয়ার সময় শিক্ষামন্ত্রী জাতীয়করণ প্রক্রিয়া উল্লেখ করে আন্দোলন বন্ধ করে ঘরে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করেন। কিন্তু তখন তাকে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা জানানো হয়।

জানা গেছে, ১৯৯৪ সালে জারি হওয়া একটি পরিপত্রে রেজিস্টার্ড বেসরকারি প্রাথমিক ও স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা শিক্ষকদের বেতন ৫০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। পরবর্তীতে ধাপে ধাপে বেতন বাড়তে থাকে। কিন্তু প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মতো বেতন না বাড়ায় বৈষম্যের শিকার হন ইবতেদায়ী মাদ্রাসা শিক্ষকেরা।

২০১৩ সালের ৯ জানুয়ারি বর্তমান মহাজোট সরকার ২৬ হাজার ১৯৩টি বেসরকারি প্রাইমারি স্কুল জাতীয়করণ করে। কিন্তু ইবতেদায়ী মাদ্রাসাতেও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো একই সরকারি সিলেবাসে পড়ানো হয় এবং সমাপনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে।

সারা দেশে নিবন্ধিত স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা ১৮ হাজার ১৯৪টি হলেও চালু আছে ১০ হাজারের মতো। এসব মাদ্রাসায় শিক্ষক আছেন প্রায় ৫০ হাজার। এর মধ্যে ১ হাজার ৫১৯টি মাদ্রাসার ৬ হাজার ৬৭৬ জন শিক্ষক সরকার থেকে কিছু ভাতা পান। এর মধ্যে প্রধান শিক্ষকেরা মাসে আড়াই হাজার টাকা এবং সহকারী শিক্ষকেরা পান ২ হাজার ৩০০ টাকা। অন্যরা সরকার থেকে কোনো বেতন-ভাতা পান না।

শিক্ষক নেতা কাজী রুহিল আমিন চৌধুরী বলেন, ইবতেদায়ী মাদ্রাসার শিক্ষকরাও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মতো সরকারের সব কাজে অংশগ্রহণ করে। অথচ মাস শেষে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ২৫-৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত বেতন পায়। কিন্তু ইবতেদায়ী মাদ্রাসার শিক্ষকরা তেমন কোনও বেতন ভাতা পান না। তবুও তারা শিক্ষকতা চালিয়ে যাচ্ছেন। মাত্র ১৫১৯টি ইবতেদায়ী মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক ২৫০০ টাকা, সহকারী শিক্ষক ২৩০০ টাকা ভাতা পান। বাকি মাদ্রাসা শিক্ষকরা এত বছর ধরে বেতন ভাতা থেকে বঞ্চিত। এটা অমানবিক এবং শিক্ষকদের অবমাননা ছাড়া কিছুই না।