ছাত্রী নিপীড়নের বিচারের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরকে অবরুদ্ধ করে রাখা ও সংক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের ফটক ভাঙচুরের ঘটনায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

বৃহস্পতিবার অজ্ঞাতনামা ৫০ থেকে ৬০ জন শিক্ষার্থীকে আসামি করে শাহবাগ থানায় ওই মামলাটি দায়ের করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা কামরুল আহসান খান। শাহবাগ থানার কর্তব্যরত কর্মকর্তা মঞ্জুর হোসেন মানিক (উপপরিদর্শক) মামলার বিষয়েটি নিশ্চিত করে বলেন, ‘প্রক্টরের কার্যালয়ের কলাপসিবল গেট ভাঙচুরের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন লাখ টাকার সম্পত্তির ক্ষতি হয়েছে উল্লেখ করে থানায় একটি মামলা করা হয়েছে।’

মামলার ঘটনায় মধ্যরাতে বিক্ষোভ: বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়ের করা মামলার প্রতিবাদ জানিয়েছে আন্দোলনকারীরা। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পসে ব্যাপক বিক্ষোভ করে তারা প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করেছেন।

বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে ফুলার রোডে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীরা স্লোগানে স্লোগানে প্রক্টর গোলাম রাব্বানির পদত্যাগ দাবি করতে থাকেন। পরে সেখান থেকে মিছিল নিয়ে জহুরুল হক হল, নীলক্ষেত, স্যার এ এফ রহমান হল, মুহসীন হল, বঙ্গবন্ধু হল এবং মল চত্বর হয়ে রাত সোয়া ১২টার দিকে সন্ত্রাস বিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এসে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা।

প্রক্টরের পতদ্যাগ ও মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি: শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের পদত্যাগ ও মামলা প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করেন শিক্ষার্থীরা।

রাতে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে জড়ো হয়ে চার শিক্ষার্থী প্ল্যাকার্ড হাতে অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। এ সময় তাদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে শতাধিক শিক্ষার্থী 'যেই প্রক্টর মামলা করে সেই প্রক্টর চাই না', এই বলে স্লোগান দিতে থাকেন।

নিপীড়ন বিরোধী আন্দোলনকারীদের অন্যতম মাসুদ আল মাহদী বলেন, ‘ছাত্রীদের ওপর যৌন নিপীড়নের বিচার চাইতে গিয়ে উল্টো আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধেই মামলা করা হয়েছে; এর থেকে লজ্জাজনক ঘটনা আর কিছু হতে পারে না। প্রশাসনের এই প্রহসনের নিন্দা জানাই এবং এই স্বৈরাচারী প্রক্টরের পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।’

মুক্তির দাবিতে আলার মিছিল: শিক্ষার্থীদের ভাষ্যমতে, প্রশাসন উদোর পিন্ডি বুদের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছে। ছাত্রীদের নিপীড়নের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে উল্টো নিপীড়নকারীদের বিচার দাবি করা শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে।

এই অন্ধকার ও অবিচারের বিরুদ্ধে মুক্তির দাবিতে আলোর মিছিল করবে শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনকারীরা জানিয়েছে, আজ শুক্রবার বিকেল ৫টায় ক্যাম্পাসে তারা মশাল মিছিল করবে।

প্রশাসনের তদন্ত কমিটিতে নেই ছাত্র প্রতিনিধি: ছাত্র প্রতিনিধি ছাড়াই ক্যাম্পাসে সৃষ্ট ঘটনা তদন্তে পৃথক দুটি কমিটি করা হয়েছে। এর মধ্যে গত ১৭ জানুয়ারি, বুধবার কলাভবনের দক্ষিণ-পূর্ব দিকের কলাপসিবল গেট ভেঙে নিজ কার্যালয়ে প্রক্টরকে অবরুদ্ধ করে রাখার ঘটনা তদন্তে একটি এবং ১৬ জানুয়ারি, মঙ্গলবার সাত কলেজ বাতিলের দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্রীদের ওপর ছাত্রলীগ কর্তৃক নিপীড়নের ঘটনা তদন্তে আরেকটি কমিটি করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান তদন্ত কমিটি করার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এর আগে বুধবার দিনভর বিক্ষোভ শেষে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের কাছে ‘ছাত্র প্রতিনিধি’ নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দুই কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন প্রকাশ করার জোর দাবি জানিয়েছিলেন। তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তদন্ত কমিটি হলেও তাতে কোন ছাত্র প্রতিনিধি না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা।

ঢাবিতে কলাপসিবল ভেঙে প্রক্টরকে অবরুদ্ধ