কয়েক ঘন্টার মধ্যেই খালেদা জিয়ার মামলার রায়

দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলার রায় ঘোষণা করা হবে আজ। এ রায় নিয়ে ইতোমধ্যে রাজনীতিতে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। ঢাকাসহ সারা দেশে কঠোর নিরাপত্তা নেয়া হলেও সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরণের আতঙ্ক রয়েছে।

এই মামলার রায়কে কেন্দ্র করে রাজধানীসহ সারা দেশে বিশেষ অভিযান চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এতে বিএনপির অনেক নেতা-কর্মী এবং সাধারণ নাগরিকও আটক হয়েছেন বলে জানা যাচ্ছে। আজ ঢাকায় মিছিল সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছে পুলিশ। ফলে আতঙ্কে সড়কে যানবাহন চলাচলও অনেক কম দেখা যাচ্ছে।

বিগত সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৮ সালের ৩রা জুলাই মাসে বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে রমনা থানায় মামলাটি করেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এর প্রায় ১০ বছর পর আজ এই মামলার রায় হতে যাচ্ছে।

মামলাটির তদন্ত শেষে ২০০৯ সালে অভিযোগ পত্র দেয়া হয়। পরে ২০১৪ সালের মার্চে এ মামলায় খালেদা জিয়াসহ অন্যদের আসামি করে অভিযোগ গঠন করা হয়।

মামলার অভিযোগপত্র থেকে জানা যায়, বিদেশ থেকে ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা এসেছিল এতিমদের জন্য। কিন্তু ক্ষমতার অপব্যবহার করে সেই অর্থ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টকে দেন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। অভিযোগ, সেই অর্থ এতিমদের জন্য ব্যয় না করে নিজেদের হিসাবে জমা রেখে আত্মসাৎ করা হয়েছে।

মামলায় অন্য আসামিরা হলেন- বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ছেলে লন্ডনে অবস্থানরত তারেক রহমান, সাবেক মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান, মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ। এদের মধ্যে তারেক রহমান, কামাল উদ্দিন সিদ্ধিকী ও মমিনুর রহমান বর্তমানে পলাতক রয়েছেন। আর কাজী সালিমুল হক কামাল ও শরফুদ্দিন আহমেদ রয়েছেন কারাগারে।

পুরান ঢাকার বকশি বাজারের স্থাপিত বিশেষ জজ আদালতে প্রায় ১০ বছর ধরে চলছে এই মামলার কার্যক্রম। এ মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন ৩২ জন। ১৬ দিন ধরে চলেছে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন। এর মধ্যে খালেদা জিয়া আদালতে হাজির না হওয়ায় কয়েকবার তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করা হয়েছিল।

যুক্তিতর্ক উপস্থানের সময় আদালতে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা বলেছেন, যে ঘটনায় মামলাটি করা হয়েছে, তার সাথে খালেদা জিয়া জড়িত নন। আর যে টাকা আত্মসাৎ করা অভিযোগে মামলাটি হয়েছে, সে টাকা আত্মসাৎ হয়নি। তা এখনো ব্যাংকের হিসাবে জমা রয়েছে এবং এর পরিমাণ বেড়েছে কয়েক গুণ।

আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থনে দীর্ঘ বক্তব্য রাখেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। এ সময় তিনি দাবি করেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এর কোন আইনি ভিত্তি নেই। এই মামলায় যে অভিযোগ আনা হয়েছে, এর সাথে তার কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। অথচ বানোয়াট তদন্ত প্রতিবেদনে তাকে আসামি দেখানো হয়েছে। আদালতে তাকে দোষী প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ।

খালেদা জিয়া আরও দাবি করেন, তাকে রাজনীতি ও নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে এই মামলাকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। সর্বশেষ রায়ের আগের দিন বুধবার সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলনেও একই ধরণের বক্তব্য রেখেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।

অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, তারা আদালতে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করেছেন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা এবং সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী এই মামলায় খালেদা জিয়ার শাস্তি দাবি করে প্রকাশ্যে বক্তব্য রেখে আসছেন। কেউ কেউ তার সাজা হওয়ারও আভাস দিয়েছেন।