রাজনৈতিক মহলে আগাম নির্বাচনের গুঞ্জন!

খালেদা জিয়ার কারাদণ্ডের পর আগাম নির্বাচনের গুঞ্জন ডালপালা ছড়িয়েছে। বিশেষ করে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বক্তব্যের পর এই আলোচনা এখন আরও জোরালো। রোববার রাজধানীর বনানীতে দলের কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে এরশাদ বলেছেন, ‘দেশে আগাম নির্বাচন হতে পারে বলে কথা ভেসে বেড়াচ্ছে বাতাসে, তার জন্য আমরা প্রস্তুত আছি।’

এরশাদের ওই বক্তব্যে বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। বিএনপিকে অপ্রস্তুত রেখে দ্রুত নির্বাচনি বৈতরণী পার হওয়ার আশায় সরকার আগাম নির্বাচনের চিন্তা করতে পারে বলে ধারণা করছেন তারা।

এর আগে বিদায়ী বছরের শেষ দিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা যেকোনও সময়ে নির্বাচনের ইসির প্রস্তুতির কথা জানিয়েছিলেন। ওই সময়ই আগাম নির্বাচনের প্রসঙ্গটি সামনে চলে আসে। তবে সপ্তাহখানেক পরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আগাম নির্বাচনের সম্ভাবনা নাকচ করে দিলে এ নিয়ে আলোচনা বন্ধ হয়। ওবায়দুল কাদের তখন বলেছিলেন, ‘আগাম নির্বাচনের কোনও সম্ভাবনা নেই, এ বিষয়ে সরকারের কোনও পরিকল্পনাও নেই।’

কিন্তু গত রোববারের এরশাদের বক্তব্যের কারণে আবারও আগাম নির্বাচন বিষয়ক আলোচনা নতুনভাবে শুরু হয়েছে। এ নিয়ে চায়ের কাপেও ঝড় উঠছে।

সংসদ ভেঙে নির্বাচন? অভ্যন্তরীণভাবে প্রস্ততি থাকলেও সংসদ ভেঙে নির্বাচন হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। সরকার এ ঝুঁকি নেবে কিনা তা সময়ই বলে দেবে। কারণ, সংসদ বহাল রেখে আগাম নির্বাচনের কোনও সুযোগ সংবিধান অনুযায়ী নেই। এক্ষেত্রে আগাম নির্বাচন করতে চাইলে সংসদ ভেঙে দিয়েই করতে হবে।

সংবিধান কী বলছে? সংবিধানে সংসদ নির্বাচনের দু’টি বিধান রয়েছে। সংসদ ভেঙে যাওয়ার ক্ষেত্রে পরবর্তী ৯০ দিন আর মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার ক্ষেত্রে মেয়াদ পূর্তির পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান হতে হবে। তাই ৩১ অক্টোরের আগে নির্বাচন করতে চাইলে সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচন করতে হবে। আর সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন করতে চাইলে সরকারকে এ বছরের ৩১ অক্টোবর থেকে আগামী বছরের ২৮ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। আর সেক্ষেত্রে সরকার বিদ্যমান থাকলেও সংসদ বিলুপ্ত থাকবে।

বিশিষ্টজনদের মতামত: এ ব্যাপারে সাবেক নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ বলেন, ‘নির্বাচন কবে হবে, তা সরকারের ওপর নির্ভর করছে। সরকার চাইলে যেকোনও সময় নির্বাচনের আয়োজন করতে পারে। সেই ক্ষমতা সরকারের আছে। তবে সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার ৯০ দিনের আগে নির্বাচন করতে হলে অবশ্যই সংসদ ভেঙে দিতে হবে। আর সংসদের মেয়াদের শেষ ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে চাইলে সংসদ ভেঙে দেওয়ার প্রয়োজন হবে না।’

এ বিষয়ে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, ‘নির্বাচনের বিষয়টি সংবিধানে ১২৩ অনুচ্ছেদে বলা রয়েছে। যদি সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়, তাহলে ভেঙে দেওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন হবে। আর যদি সংসদ তার ৫ বছরের মেয়াদ পূর্ণ করে, সেক্ষেত্রে মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের ভেতরেই নির্বাচন আয়োজন করতে হবে।’

আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্য: আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করছেন, সংসদ ভেঙে নির্বাচন দেওয়া হলে তা বিএনপির নৈতিক বিজয় হবে। কারণ নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে গিয়েও এই দাবিটিকে প্রাধান্য দিয়েছিল বিএনপি। এটি করা হলে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীরা হতাশ হতে পারেন। তারা মনে করেন, আগাম নির্বাচন হতে পারে, কিন্তু সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচন করা ঠিক হবে না।

এ বিষয়ে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘সরকার সুবিধাজনক যেকোনও সময় নির্বাচন করতে পারে। এখন নির্বাচনের বছর। এ বছরের যখনই নির্বাচন হবে, সেটাই যথাসময়ে নির্বাচন। বছরের যেকোনও সময়ে নির্বাচন হলে তাকে আগাম নির্বাচন বলার সুযোগ নেই। তবে, এটা বলতে পারি— সংবিধান অনুযায়ী সময়মতো নির্বাচন হবে।’