থ্রিজিই পাই না আবার ফোরজি!

সপ্তাহ খানেক আগে ঢাকঢোল পিটিয়ে বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করলো দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা ফোর জি। কিন্তু সেই ফোর জি সেবা না পাওয়া নিয়ে বিস্তর অভিযোগ গ্রাহকদের। দেশের অনেক জায়গাতেই পাওয়া যাচ্ছে না ফোরজি নেটওয়ার্ক। আবার নেটওয়ার্ক থাকলেও সেটি ব্যবহার করা যাচ্ছে না। তবে মোবাইল ফোন অপারেট প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, গ্রাহকদের এই সমস্যা সাময়িক।’

গত ১৯ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে ফোর জি (চতুর্থ প্রজন্মের টেলিযোগাযোগ প্রযুক্তি) যুগে প্রবেশ করে বাংলাদেশ। এদিন দেশের শীর্ষস্থানীয় ৩টি মোবাইল ফোন অপারেটর ফোর জি সেবা চালু করে। গ্রাহকদের অবহিত করতে বিজ্ঞাপনও দিচ্ছে গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংক। ফোর জি চালুর পর অনেক গ্রাহক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেছেন, ‘থ্রিজিই ঠিকমতো পাইনা আবার ফোর জি; সবই আসলে নতুন গ্রাহক টানার ধান্দাবাজি।’

ফোর জি চালুর পরপরই দেশের ৬৪টি জেলা শহরে এই সেবা দেয়া হচ্ছে বলে জানায় রবি। কিন্তু শনিবার নারায়ণগঞ্জের গ্রাহকরা জানান, সেখানে ফোর জি নেটওয়ার্ক পাওয়া যাচ্ছে না। অভিযোগকারীদের একজন জাহাঙ্গীর আলম। তিনি ফোর জি সেবা পেতে নতুন সিম সংগ্রহ করেছেন। কিন্তু সেবা পাচ্ছেন না।

আহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ফোরজি চালুর ঘোষণা শুনেই নারায়ণগঞ্জ শহরের একটি রবি কাস্টমার কেয়ার সেন্টার থেকে নতুন সিম সংগ্রহ করেছি। সেটি ফোরজি উপযোগী হ্যান্ডসেটও কিনেছি। কিন্তু ফোরজি নেটওয়ার্ক পাওয়া যাচ্ছে না। যোগাযোগ করা হলে কাস্টমার কেয়ার থেকে জানানো হয়, আপাতত থ্রিজিই চালাতে হবে।’

আরেকজন গ্রাহক জানান, ‘এখানে ফোর জির নেটওয়ার্ক দেখা যাচ্ছে না। এমনকি ভিডিও দেখতে গেলেও আগের মতোই আটকে যাচ্ছে।’ তিনি কবে নাগাদ ফোর জি সুবিধা পাবেন সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারছেন না। 

রাজধানীর ফার্মগেটে গ্রামীনফোন ও বাংলালিংকের ফোর জি সুবিধার সিম চালু করেও নেটওয়ার্ক পাওয়া যায়নি। তবে গুলশান, বনানী ও ধানমন্ডি কয়েকটি স্থানে কোনো কোনো গ্রাহক ফোর জি নেটওয়ার্ক পাওয়ার কথা জানিয়েছেন।

প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাব্বির বলেন, ‘ধানমন্ডিতে রবির ফোর জি নেটওয়ার্ক পাওয়া গেলেও গ্রামীণফোনের নেটওয়ার্ক পাচ্ছি না। তবে গুলশানে সবগুলো অপারেটরের নেটওয়ার্ক পাচ্ছি। কিন্তু কানেক্ট করার কিছুক্ষণ পর সিগন্যাল চলে যাচ্ছে।’

থ্রিজি সেবা নিয়ে গ্রাহকদের নানা অভিযোগের মধ্যেই ফোরজি সেবা চালু করে মোবাইল ফোন অপারেটন কোম্পানিগুলো। এ নিয়ে অনেক গ্রাহক আশংকার মধ্যে থাকলেও কোম্পানিগুলো বলছেন, শুরুর এসব সমস্যা পরে আর থাকবে না।

বিভাগীয় শহরগুলোতে ফোরজি চালু করার কথা জানান গ্রামীণফোনের ডেপুটি সিইও ইয়াসির আজমান। তিনি বলেন, ‘তবে এটা এখনি শতভাগ কাভার করছে না।’ বিভাগেীয় শহরগুলোতে নির্ধারিত সময়সীমার আগেই শতভাগ নেটওয়ার্ক কাভারেজের আওতায় নিয়ে আসার আশা প্রকাশ করেন এই কর্মকর্তা।

শুরুতে কিছুটা সমস্যা হতে পারে বলে মনে করেন রবি’র হেড অব রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স সাহেদ আলম। তিনি বলেন, ‘গ্রাহকদের একটু ধৈর্য ধরতে হবে। প্রথম দিনের তুলনায় দ্বিতীয় দিন ২০ শতাংশ এলাকায় নেটওয়ার্ক দেয়া হয়েছে। চলতি মাসের মধ্যে আরো দুই হাজারের মতো সাইট চালু হওয়ার কথা, তখন সমস্যা কমে আসবে।’

যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ‘ওপেন সিগনাল’র তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের মোবাইল ফোনে ইন্টারনেটের গড় গতি ১৬ এমবিপিএসের বেশি। কিন্তু বাংলাদেশে থ্রিজির গড় গতি ৩.৭৫ এমবিপিএস। এদিকে বিটিআরসি বলছে, গ্রাহকদের দ্রুত গতির ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিত করা হবে।

বিটিআরসি চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ বলেন, ‘গ্রাহকরা ফোরজি সেবা কতটা পাচ্ছেন তা মনিটর করা হবে। গতির বিষয়টি সুনির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। তবে এটি সময়ে সময়ে পরিবর্তনও হতে পারে।’ তিনি আরও বলেন, ‘নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে কাঙ্ক্ষিত সেবা না দিতে পারলে অভিযুক্ত অপারেটরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’