ভারত সফরে আ.লীগের দুটি প্রতিনিধি দল, কী ভাবছে বিএনপি?

দুই মাসের ব্যবধানে প্রতিবেশি দেশ ভারত সফরে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায়ের দুটি প্রতিনিধি দল। দেশটির প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের সম্মেলনে যোগ দিতে একটি দল আজ ইতোমধ্যেই ভারতে পৌঁছেছে আর অন্য একটি দল আগামী মাসে যাবে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পাটি বিজেপি’র আমন্ত্রণে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারি দলের এই সফরকে বেশ গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন বিশ্লেষকরা। বিষয়টি কিভাবে দেখছে দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি? এমন প্রশ্নও রাজনীতির অন্দরমহলে ঘোরপাক খাচ্ছে।

উপমহাদেশের প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল কংগ্রেস বর্তমানে ভারতের প্রধান বিরোধী দল। নয়াদিল্লির ইন্দিরা গান্ধী ইনডোর স্টেডিয়ামে ন্যাশনাল কংগ্রেসের ৮৪তম প্ল্যানারি সেশন অনুষ্ঠিত হবে ১৭ ও ১৮ মার্চ। এতে যোগ দিতে আজ শুক্রবার ঢাকা ছেড়েছে আওয়ামী লীগের তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল। প্রতিনিধি দলের সদস্যরা হলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি ও উপ-দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া।

আওয়ামী লীগ সূত্র জানিয়েছে, আওয়ামী লীগ নেতারা ন্যাশনাল কংগ্রেসে যোগদানের পাশাপাশি দলটির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গেও বৈঠকে মিলিত হবেন। এ তালিকায় আছেন কংগ্রেসের সাবেক সভাপতি সোনিয়া গান্ধী, সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মূর্খাজী ও কংগ্রেসের বর্তমান সভাপতি রাহুল গান্ধী। কংগ্রেসের সভাপতি হওয়ার পর রাহুল গান্ধীর সঙ্গে এটিই হবে আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রথম সাক্ষাৎ। এসব বৈঠকে আগামী নির্বাচন, বিএনপি নেত্রীর কারাদণ্ড ও বিদ্যমান রাজনৈতিক বিভিন্ন বিষয় স্থান পেতে পারে। আগামী ১৯ মার্চ প্রতিনিধি দলটির ঢাকায় ফিরবে।

এদিকে ক্ষমতাসীন বিজেপির আমন্ত্রণে আগামী মাসে ভারত সফরে যাবে আওয়ামী লীগের আরেকটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল। জানা গেছে, সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের ২২ জন কেন্দ্রীয় নেতা এই প্রতিনিধি দলের সমস্য হচ্ছেন। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন দলটির উপ-দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া।

আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, সফরে ভারতীয় জনতা পাটি-বিজেপি’র উচ্চপর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রতিনিধি দলের নেতারা। সাক্ষাতের কথা রয়েছে দেশটির রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ ও পররাষ্ট্র সচিব বিজয় কেশব গোখলের সঙ্গে। সফরটি গত ১১ মার্চ হওয়ার কথা থাকলেও তা পিছিয়ে ২১-২৭ এপ্রিলে নেয়া হয়েছে।

চলতি বছরের ডিসেম্বর কিংবা আগামী বছরের জানুয়ারির দিকে বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। বিএনপির বরাবরই অভিযোগ করে আসছে, ক্ষমতায় থাকতে কংগ্রেসের সমর্থন নিয়েই ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। তবে আওয়ামী লীগ এই অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে বলছে, ভারত বিদ্ধেষ থেকেই এ ধরনের কথা বলছে বিএনপি।

আওয়ামী লীগের ভারত সফরের দিকে বিএনপিও যে কড়া নজর রাখছে, তা স্পষ্ট বিএনপি নেতাদের বক্তব্যেও। গত ০৯ মার্চ বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘আওয়ামী লীগের ক্ষমতার উৎসই হচ্ছে বিদেশ। কাদের সাহেব যখনই ‘বিদেশিদের পরামর্শ নেই না’ বললেন, তার পরক্ষণেই শুনলাম প্রতিনিধি দল নিয়ে তিনি তদবির করতে ভারতে যাচ্ছেন।’

এর পাল্টা বক্তব্যে আজ শুক্রবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপি জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। তাই তারা এখন জনগণের ওপর ভরসা বাদ দিয়ে ক্ষমতায় যেতে বিদেশিদের নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে।’