আধুনিক সুবিধার ৩০টি বাস স্টপেজ তৈরি হচ্ছে ঢাকায়

ঢাকার বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে মানুষের আনাগোনা। এক সময়ের জঙ্গলাকীর্ণ ঢাকা এখন হয়ে পড়েছে কোলাহল পূর্ণ ঘিঞ্জি শহর। হাজার থেকে লক্ষ লক্ষ বেড়ে এখন কোটি জনসংখ্যার নগরীতে পরিণত হয়েছে ঢাকা। প্রায় দুই কোটি বাসিন্দা এবং প্রতিদিন বাইরে থেকে আসা বিপুল পরিমাণ মানুষের চাপে ঢাকা এখন পৃথিবীর দ্বিতীয় বসবাসের অনুপোযোগী শহর।

দেশের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন-সহযোগী জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) পরিচালিত এক গবেষণা প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ‘ঢাকায় প্রতিদিন প্রায় ১৯ লাখ যাত্রী গণপরিবহনে চলাচল করেন।’

অন্য দিকে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী যেখানে ঢাকার রাস্তায় সর্বোচ্চ দুই লাখ ১৬ হাজার গাড়ি চলাচল করার কথা, সেখানে শুধুমাত্র নিবন্ধনই আছে এর চেয়ে প্রায় ছয় গুণ বেশি গাড়ির। ফলে যানজট ঢাকার নিত্যসঙ্গী। সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও এই সমস্যা থেকে নিস্তার নেই নগরবাসীর।

এ দিকে গণপরিবহনের চাইতে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা দিন বাড়ার কারণে যানজট সমস্যা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। প্রতিটি রাস্তায় গাড়ির দীর্ঘ সারি। এর মধ্যে যেখানে-সেখানে গাড়ি পার্কিং এবং যাত্রী ওঠা-নামা করার কারণে ‘গাড়ি জট’ হয়ে পড়ছে অনিবার্য। বিশ্বব্যাংকের জরিপ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ‘যানজটের কারণে ঢাকা শহরে প্রতিদিন ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। এর ফলে বছরে যে পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হয়, অঙ্কের হিসেবে তার পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা।’

দীর্ঘ দিনের এই ভয়াবহ সমস্যা নিরসনে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হলেও ঢাকাকে যানজট মুক্ত করা যায়নি। নানা সময়ে নানা নিয়ম করে দিলেও যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামার চিত্র পাল্টেনি। এমন অবস্থায় রাজধানীতে ৩০টি আধুনিক বাস স্টপেজ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)। অত্যাধুনিক এসব বাস স্টপেজের নির্ধারিত স্থান থেকেই বাসে ওঠা-নামা করতে হবে। যাত্রীদের জন্য এখানে থাকবে মোবাইল ফোন চার্জের ব্যবস্থা, ওয়াইফাই, বিশুদ্ধ খাবার পানি ও টি-স্টল।

প্রকল্পটির বিষয়ে জানিয়ে ডিএসসিসি’র ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং সার্কেলের নির্বাহী প্রকৌশলী রাজিব খাদেম বলেন, ‘যাত্রী ওঠানামার জন্য অত্যাধুনিক ৩০টি বাস স্টপেজ নির্মাণের কাজ আগামী জুন মাসের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। তবে কাজ পুরোপুরি শেষ হতে আরো কিছুদিন বেশি সময় লাগতে পারে। স্টপেজগুলো নির্মিত হলে যত্রতত্র যাত্রী ওঠা-নামায় অনেকটাই শৃঙ্খলা আসবে যা যানজট কমাতে সাহায্য করবে।’

যেসব রুটে নির্মিত হবে: ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় এ ৩০টি স্টপেজ নির্মাণে সম্ভাব্য ব্যয় হবে ৮ কোটি ২৬ লাখ টাকা। ডিএসসিসি’র আওতাধীন এলাকাকে তিন ভাগে ভাগ করে এসব বাস স্টপেজ নির্মাণ করা হবে। মানিক মিয়া এভিনিউ থেকে আজিমপুর রুটে, যাত্রাবাড়ী,পল্টন, শাহবাগ ও পান্থকুঞ্জ রুটে এবং মগবাজার-মালিবাগ থেকে গুলিস্তান সদরঘাট রুটে এগুলো নির্মাণ করা হবে। নিচে রুটভেদে স্টপেজ সংখ্যা দেয়া হলো- 

মানিক মিয়া এভিনিউ থেকে আজিমপুর রুটে- ০৬টি, একই রুটের বিপরীত পাশে আরও ০৬টি।

যাত্রাবাড়ী,পল্টন, শাহবাগ পান্থকুঞ্জ রুটে -০৩টি, একই রুটের বিপরীত পাশে আরো ০৩টি।

মগবাজার-মালিবাগ থেকে গুলিস্তান সদরঘাট রুটে- ০৬টি, এই রুটের বিপরীত পাশে ০৬টি স্টপেজ নির্মাণ হবে।