আপনি পড়ছেন

অবশেষে উদ্ধার করা হয়েছে গত প্রায় সাতদিন ধরে রাজধানীর শাহজাদপুরের বড়ইতলাএলাকার ৬ নং কালভার্টের ম্যানহোলে আটকে পড়া কুকুরটিকে। কুকুরটি বর্তমানে সুস্থ আছে। কুকুরটিকে উদ্ধারে চেষ্টা করেছেন স্থানীয় মানুষেরা, তদবির করা হয় বিভিন্ন প্রাণী কল্যাণ গ্রুপ, সিটি করপোরেশন ও ফায়ার সার্ভিসে। কিন্তু বিষয়টিকে প্রথমে তেমন একটা গুরুত্ব দেয়া হয়নি। কিন্তু প্রাণিপ্রেমী স্থানীয় বাসিন্দা খেলাফত হোসেন প্রাণপণ চেষ্টা করেছেন। তার সাথে যুক্ত হন আরেকজন তরুণ প্রাণিপ্রেমী আদিম।

adventure to rescue a dog

এরপরই কুকুরটিকে উদ্ধারে প্রাণী কল্যাণ গ্রুপগুলোতে দাবি ওঠে। এ যায়, ও যায়.. এমন করতে করতে কেউ যায় না, উদ্ধারে গতিও পায় না... কারণ উদ্ধার করার মতো প্রয়োজনীয় উপকরণ ও দক্ষ জনবলের অভাব রয়েছে দেশে। যাইহোক এরপর শনিবার সন্ধ্যায় কয়েকজন প্রাণিপ্রেমী আমাকে ফোন করেন এবং অনুরোধ করেন কিছু একটা করার। প্রথমে আমি ফায়ার বিগ্রেডের কন্ট্রোল রুমে ফোন দেই। অবাক হলাম যখন তারা বললো, ভাই আমরা তো এ বিষয়ে এখনই আপনার কাছ থেকে জানলাম। কেউ আমাদের জানায়নি..! তারা আরো জানালো, ঠিকানা দিলে তারা রওনা হবেন। কিন্তু হতাশ হলাম ফায়ার সার্ভিস থেকে যখন ফোন করে আমাকে আবার জানালো, ওই কালভার্ট সিটি করপোরেশনের আওতাধীন। তাই এই উদ্ধার অভিযানে যাওয়া প্রটোকল অমান্য করার শামিল। যাইহোক পরে আমি ফায়ার সার্ভিসকে অনুরোধ করে বলি আজ কুকুরটি উদ্ধার না হলে মারা যাবে। তখন তারা বিষয়টি নিয়ে আবারো উদ্যোগ নিলো। এরপর ফায়ার সার্ভিস সিটি করপোরেশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে আমার সাথে ফোনে যোগাযোগ করিয়ে দিলো।

করপোরেশনের কর্মকর্তা আমাকে জানালেন, পরদিন অর্থ্যাৎ রোববার সকাল ছাড়া তাদের উদ্ধারে যাওয়া সম্ভব নয়। কারণ অনেক রাত হয়েছে (০৯.৩০ বাজে) এই সময় লোকবল নেই। তখন আমি ওই কর্মকর্তাকে প্রশ্ন করলাম, তাহলে যদি সকালের অপেক্ষায় থাকলে রাতেই যদি একটি প্রাণ জীবন হারায় তাহলে সেই দায় কে নেবে? আপনি নিবেন? তখন ভদ্রলোক কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে আমাকে বললেন, ভাই কি করতে হবে বলেন। আমি চেষ্টা করবো। আমি তাকে বললাম, যেহেতু ফায়ার সার্ভিস এমন অভিযান করার মতো যথেষ্ট। সুতরাং আপনারা তাদের অনুরোধ করেন আপনাদের হয়ে তারা যেন আজ রাতে কুকুরটিকে উদ্ধারের চেষ্টা করে। নাহলে সকালে আপনারাও যুক্ত হবেন। কথাটা তার পছন্দ হয়েছে হয়তো। উনি বললেন, ওকে ভাই। এরপরই ফায়ার সার্ভিস থেকে বারিধারা স্টেশন ম্যানেজার আশরাফ ভাই ফোন দিয়ে বললেন, মিঠু ভাই আমরা রওনা দিয়েছি। লোকেশন দিন বিস্তারিত এবং আপনাদের লোকদের নির্দেশনা দিতে মেইন রোডে থাকতে বলুন। এরপরই আমি সকলকে বিষয়টি জানাই, চিন্তা নেই উদ্ধার শুরু হচ্ছে।

adventure to rescue a dog 01

ততক্ষণে একজন সাংবাদিক ও পরিবেশ ও প্রাণী বিষয়ক সেচ্ছাসেবী সংগঠন ইকো- সেভার্স- ইসাবের চেয়ারম্যান হিসেবে আমি ও ইসাবের পরিচালক তাওসীফ ঈমাদ ঘটনাস্থলে পৌঁছাই। যাওয়ার পর দেখি হযবরল অবস্থা। কারণ ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি প্রাণিপ্রেমী ও আশপাশের মানুষ সবাই একসাথে কুকুরটিকে বের করার চেষ্টা করছে। কিন্তু যা কখনোই সঠিক উপায় মনে হয়নি আমার কাছে। তাই তাৎক্ষণিক সবাইকে বললাম, যারা এ বিষয়ে অভিজ্ঞ নন তারা সকলে দূরে সরে যান এবং যারা এ বিষয়ে দক্ষ তাদের কাজ করতে দিন। এর সাথে সকলেই একমত হলো। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা তখন পরিকল্পনা করলো কিভাবে ওকে সরু ম্যানহোল থেকে বাইরে বড় ড্রেনের দিকে আনা যায়। এই কাজে ফায়ার সার্ভিসকে সহযোগিতা করেন ডগ রেসকিউয়ার হিমু ও প্রাণিপ্রেমী আদিম। তবে কয়েকজনকে দেখা গেলো ফায়ার সার্ভিস ও অন্যান্যদের দোষারোপ করেতে শুরু করেছে। যা দেখে কিছুটা কষ্ট পাই। কারণ সেখানে থাকা সকলের উদ্দেশ্যই প্রাণীটিকে বাঁচানো। কিন্তু প্রাণিপ্রেমীদের কয়েকজনকে দেখলাম তারা ফায়ার সার্ভিসের সাথে উদ্ধার প্রক্রিয়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। এতে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরাও হতাশ হচ্ছিল। পরে বিষয়টি সামাল দিতে সকলকে বোঝালাম। এ সময় আদিম ও খেলাফত বিষয়টি নিয়ে একমত হন আমার সঙ্গে। পরে সকলে বুঝিয়ে বলাতে তারাও চুপ হলেন এবং যারা আসলে বিষয়টি নিয়ে মজা লুটছিল তাদের সবাইকে কালভার্টের ওপর থেকে সরিয়ে দেয়া হলো। এরপর টানা দেড় ঘণ্টার শ্বাসরুদ্ধকর এক অভিযান। কিন্তু কোনভাবেই কুকুরটিকে ধরা যাচ্ছিল না।

ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের চেষ্টার কোনো ক্রুটি ছিল না। তবে পুরো বিষয়টি কাছ থেকে দেখে মনে হলো, ফায়ার সার্ভিসের আরো কিছু উন্নয়ন প্রয়োজন। কারণ শুধু মানুষই নয় যেকোন প্রাণীকে উদ্ধারে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ফায়ার বিগ্রেডের নানা যন্ত্রপাতি ও দক্ষতার প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। কিন্তু আমাদের দেশে বিষয়টি নতুন হওয়াতে এখনো এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের এখনো প্রশিক্ষণ হয়তো হয়নি। যাইহোক এমন যখন পরিস্থিতি তখন কিছুটা দুরদর্শিতা দেখালো প্রাণিপ্রেমী আদিম। আর অপর দিক থেকে ম্যানহোলে নেমে পড়ে ডগ রেসকিউয়ার হিমু। যদিও এ ধরণের পরিস্থিতিতে এমন সিদ্ধান্ত কখনোই নেয়া উচিত নয়। ফায়ার কর্মীদের বদলে সে নিজেই কুকুরিটিকে উঠাতে নর্দমায় নেমে পড়লো। ছেলেটি অনেক চেষ্টা করলো, গাছের গুড়িতে আঘাত খেয়ে আহতও হলো। বহু চেষ্টার পর কুকুরটি বড় নর্দমায় নেমে আসে এবং আদিল কুকুরটিকে ধরার চেষ্টা করার সাথে সাথেই তাকে বেশ কয়েকটি কামড় দিয়ে দিলো। সঙ্গে সঙ্গে তাকে উঠিয়ে পাঠানো হলো স্থানীয় হাসপাতালে।

এদিকে কুকুরটি আবারো ভয় পেয়ে ম্যানহোলে ঢুকে পড়ে। আমরা সকলেই হতাশ হই এমন পরিস্থিতিতে। কারণ গ্রুপে আপডেট জানিয়েছিলাম, কুকুরটি বেরিয়ে এসেছে যেকোন মুহূর্তে উঠানো হবে। আশায় গুড়েবালি। তবে শেষ পর্যন্ত দমে যাননি দুর্বার ফায়ার বিগ্রেডের সমস্যরা, আবারো চাঙ্গা হলেন তারা। এর শেষ তারা দেখে ছাড়বেন, তাদের দু’জন নেমে পড়লেন নর্দমায়। নানা কসরতের পর ম্যানহোল থেকে যখন কুকুরটিকে বের করে দড়ি বেধে উঠানো হলো তখন সকলেরই মুখে এক প্রশান্তি। কিন্তু কুকুরটি অনেক ঘাবড়ে গিয়েছিল। উঠেই দিলো ভৌ-দৌড়, গলায় দড়িসহ পাশের এক বাড়ির ঝোঁপঝাড়ের আড়ালে লুকিয়ে যায়। পরে অবশ্য খোঁজাখুজি করে তাকে পাওয়া গেলো এবং গলার দড়ি কেটে দেয়ার ব্যবস্থা করা হলো। এরপর আবারো ভৌ-দৌড়। এবার ফেরার পালা, ক্লান্ত ফায়ার বিগ্রেডের কর্মীরা একে একে স্টেশনের উদ্দেশ্যে এগিয়ে যেতে লাগলেন। দৌড়ে গেলাম, অন্ধকারে দেখলাম স্টেশন ম্যানেজার আশরাফ ভাই, তাতে কৃতজ্ঞ চিত্তে ধন্যবাদ দিলাম। উনি পাল্টা ধন্যবাদ দিয়ে বললেন, ভাই খুব শান্তি লাগছে। একটা প্রাণীকে আমরা সকলে মিলে বাঁচাতে পারলাম। এবং তা সম্ভব হয়েছে প্রাণিপ্রেমীদের জন্য। তিনি সকল প্রাণিপ্রেমীদের স্যালুট দিলেন। আমিও বললাম স্যালুট ভাই আপনাদেরও। স্বল্প ও সীমিত সু্বিধার মধ্যে এত বড় একটা অভিযান সম্পন্ন হলো।

তবে একটি বিষয় লক্ষ্য করলাম ফেসবুক গ্রুপে অনেকেই উদ্ধারে যাচ্ছেন বলে পোস্ট দিয়েছেন। কিন্তু বাস্তবে এর প্রতিফলন ছিল না বললেই চলে। তবে এই অভিযানে যারা নিয়মিত খোঁজ-খবর রেখেছেন তাদের মধ্যে ছিলেন ইসাবের ভাইস চেয়ারম্যান তানভিনা মোহসিন, সাধারণ সম্পাদক ওয়াহিদা খান এবং প্রাণিপ্রেমী রুখসাত হক, শারমিন সাথীসহ আরো বেশ কয়েকজন। তাদেরকেও ধন্যবাদ। আশার কথা কুকুরটি এখন ভালো ও সুস্থ আছে। ইসাব টিম কুকুরটির অবস্থা পর্যবেক্ষণে যাবে ও তার শারীরিক অবস্থা দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.