বেসিস: হোক পরিবর্তন, খুলে যাক সম্ভাবনার দরজা

আগামী ৩১ শে মার্চ বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) পরিচালনা পর্ষদের ২০১৮-২০ অর্থ বছরের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই নির্বাচনকে সামনে রেখে বেশ আলোচনায় ‘উইন্ড অব চেঞ্জ’ প্যানেল। দক্ষ কর্মী আর পরিকল্পিত রোডম্যাপ বাস্তবায়নের মধ্যদিয়ে দেশের আইটি ইন্ডাস্ট্রিকে এগিয়ে নেয়াই যাদের লক্ষ্য।

নির্বাচনে ‘উইন্ড অব চেঞ্জ’ প্যানেলের সদস্য হিসেবে পরিচালক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারীদের মধ্যে আলোচনায় দোহাটেক নিউ মিডিয়ার চেয়ারম্যান লুনা শামসুদ্দোহা ও বাংলাদেশ সফটওয়্যার টেস্টিং বোর্ডের (বিএসটিবি) সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও সংগঠনটির মহাসচিব মোহাম্মদ নুরুজ্জামান। লুনা শামসুদ্দোহা নির্বাচনে স্লোগান রেখেছেন, চ্যালেঞ্জ অনেক, বাড়ছে না ব্যবসা পারবে নতুন নেতৃত্ব, ভাঙতে এই অচলাবস্থা। আর মোহাম্মদ নুরুজ্জামানের স্লোগান, হোক পরিবর্তন ভেঙে এই অচলাবস্থা সরে যাক পুরনো জীর্ণতা খুলে যাক নতুন সম্ভবনার দরজা। ইতোমধ্যেই প্যানেলটির প্রত্যেকের বিশেষ করে লুনা শামসুদ্দোহা এবং মোহাম্মদ নুরুজ্জামানের স্লোগান বেশ সাড়া জাগিয়েছে।

উদ্যোক্তা হিসেবেই যাত্রা শুরু হয় লুনা শামসুদ্দোহার। তথ্যপ্রযুক্তি সেক্টরে তার কাজের অভিজ্ঞতা ২৬ বছরের। তথ্য-প্রযুক্তিতে নারীর এগিয়ে যাওয়া এবং নারীর ক্ষমতায়ন বৃদ্ধির কারণে ২০১৩ সালের ২৯ নভেম্বর তিনি গ্লোবাল উইমেন ইনভেন্টরস অ্যান্ড ইনোভেটরস নেটওয়ার্ক (গুইন) সম্মাননা পান। বর্তমানে এই নারী উদ্যোক্তা রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজ বিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) নির্বাহী কমিটির ২০১৮-২০ মেয়াদের নির্বাচনে ‘উইন্ড অব চেইঞ্জ’ প্যানেলের নেতৃত্বে রয়েছেন তিনি।

‘উইন্ড অব চেঞ্জ’-এর আরকেজন অন্যতম সদস্য মোহাম্মদ নুরুজ্জামান ২০০৬ সাল থেকে ইন্টারন্যাশনাল সফটওয়্যার টেস্টিং বোর্ডে (আইএসটিবি) বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন। একই সঙ্গে তিনি বহুল আলোচিত ড্যাফোডিল ফ্যামিলি গ্রুপের সিইও। নির্বাচনে সকলের দোয়া ও সমর্থন চেয়েছেন নুরুজ্জামান। তিনি নির্বাচিত হলে বাংলাদেশের সব প্রমিনেন্ট সফটওয়্যারকে প্যাকেজের আওতায় এনে প্রোডাক্টগুলোকে সারা পৃথিবীতে মার্কেটিং করার ব্যাপারে কাজ করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।

বেসিসের দায়িত্ব পেলে কী করবেন এমন প্রশ্নে ড্যাফোডিল পরিবারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নূরুজ্জামান বলেন, ‘দায়িত্ব পেলে ৩ মাসের মধ্যে সম্পূর্ণ নিজস্ব উদ্যোগে আমাদের বিশাল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, দুবাইসহ ৬টি দেশকে লক্ষ্য নির্ধারণ করে বেসিস এবং বাংলাদেশের আইটি ইন্ডাস্ট্রিকে ব্র্যান্ডিং এবং সফটওয়্যার মার্কেটিং করার লক্ষ্যে লিয়াজোঁ অফিস স্থাপন করবো। যেখানে বেসিসের কোনো আর্থিক বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে না।’

ড্যাফোডিল গ্রুপের এই প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘জয়ী হলে আমার প্রথম অ্যাজেন্ডা হবে ইন্ডাস্ট্রি এবং অ্যাকাডেমিয়ার মধ্যে বিদ্যমান ফারাকটি দূর করা। দ্বিতীয়ত, দেশের সফটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রিকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া। তৃতীয়ত, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশের সফটওয়্যারের বাজার সম্প্রসারিত করা।’ 

এই তথ্য-প্রযুক্তিবিদ বলেন, ‘ন্যাসকমের মতো আউটসোর্সিং ইন্ডাস্ট্রিতে বেসিসও আমাদের দেশে বড় ধরনের অবদান রাখতে পারবে। কারণ বাংলাদেশের আউটসোর্সিং ইন্ডাস্ট্রির বেশিরভাগ নিয়ন্ত্রকই ডিআইআইটির শিক্ষার্থী। তারা বেসিসের ছায়াতলে আসতে পারলে ডিআইআইটির এ নেটওয়ার্ককে কাজে লাগিয়ে বেসিসকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিয়ে দেশের জন্য সফটওয়্যার শিল্পের অবাধ বাজার সৃষ্টি করতে পারবো আমরা। ন্যাসকম যদি সারা পৃথিবীতে তাদের নেটওয়ার্ক তৈরি করতে পারে তাহলে বেসিসের পক্ষেও সারা পৃথিবীতে মার্কেটিং নেটওয়ার্ক তৈরি করা সম্ভব।’

নির্বাচনে ‘উইন্ড অব চেঞ্জ’ প্যানেলের সদস্য এনরুট ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও আবু দাউদ খান। ঝিনাইদাহ ক্যাডেট কলেজের পাঠ শেষ করে ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ) থেকে মাস্টার অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এমবিএ) ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ২০ বছর ধরে টেলিকম, জাতীয় ও অান্তর্জাতিক অনেক প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন। কর্মজীবনে ব্রিটিশ অামেরিকান টোব্যাকো, সনি এরিকসন মোবাইল কমিউনিকেশন ইন্টারন্যাশনাল, নকিয়া ইমার্জিং এশিয়া লিমিটেডে উচ্চ পর্যায়ে কর্মরত ছিলেন।

বেসিসে নির্বাচনে নির্বাচিত হলে আবু দাউদ খান আইটি ইন্ডাস্ট্রির জন্য হিউম্যান রিসোর্স ক্যাপাসিটি তৈরি করতে চান। তিনি বেসিস,সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সমন্বয় তৈরি করতে চান। আবু দাউদ খান বলেন, ‘অনলাইনে প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রের পরিসীমা বৃদ্ধি করতে হবে। অনেক কন্টেন্ট রয়েছে ইংরেজিতে, যা আমাদের দেশের ছেলেমেয়েদের জন্য কিছুটা কঠিন হয়ে যায়। এজন্য কন্টেন্ট বাংলায় দিতে হবে। এসব ক্ষেত্রে অনেক কাজ করার জায়গা রয়েছে।'

বেসিস নির্বাচনে ‘উইন্ড অব চেঞ্জ’ প্যানেলের আরেক সদস্য ডিভাইন আইটি লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইকবাল আহমেদ ফখরুল হাসান। দেশের সফটওয়্যার সেক্টরে যিনি চঞ্চল তরুণ আইটি উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিত। তিনি বলেন, আমার অগ্রাধিকার থাকবে তিনটি বিষয়ে। প্রথমটি হলো- সফটওয়্যার শিল্পে ক্লায়েন্টের ক্রয় সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করব। দ্বিতীয় বিষয়টি হলো, বেসিস মার্কেট রিসার্চ উইং তৈরি করব। আর তৃতীয়টি হলো, স্টার্টআপগুলোকে সহযোগিতা করতে চাই। কেননা আমাদের দেশের স্টার্টআপগুলো অপরিকল্পিতভাবে ব্যবসা করতে আসে, যার ফলে এসব প্রতিষ্ঠান ক্ষণস্থায়ী হয়, যা দেশীয় সফটওয়্যার শিল্পের জন্য ক্ষতিকর। আমি নির্বাচিত হলে স্টার্টআপ সদস্যদের সহযোগিতায় বেসিসের নেওয়া উদ্যোগ আরও বাড়ানোর ব্যবস্থা করবো।

এক নজরে উইন্ড অব চেঞ্জ প্যানেলের সদস্যরা-

লুনা শামসুদ্দোহা
চেয়ারম্যান, দোহাটেক নিউ মিডিয়া
ব্যালট নাম্বার: ০৯

মোহাম্মদ নুরুজ্জামান
সিইও, ড্যাফোডিল ফ্যামিলির গ্রুপ
ব্যালট নাম্বার: ০৭

ইকবাল আহমদ ফখরুল হাসান
ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ডিভাইন আইটি লিমিটেড
ব্যালট নাম্বার: ০৮

আবু দাউদ খান
ব্যবস্থাপনা পরিচালক, এনরুট ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড
ব্যালট নাম্বার : ১১

রেজওয়ানা খান
প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও), স্টার কম্পিউটার সিস্টেমস লিমিটেড
ব্যালট নং: ২৩

মোহাম্মদ সানোয়ারুল ইসলাম
ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ইনোভেশন ইনফরমেশন সিস্টেম লিমিটেড
ব্যালট নং : ১৪

নূর মাহমুদ খান
প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, রাইট ব্রেইন সল্যুশন লিমিটেড
ব্যালট নং : ১৮

এম আসিফ রহমান
প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, এ আর কমিউনিকেশনস
ব্যালট নং : ০১