উন্নয়নের ভোগান্তি 'মেট্রো রেল', যানজটে অতিষ্ট মিরপুরবাসী

ঘনবসতিপূর্ণ নগরী ঢাকায় নিত্যদিনের সঙ্গী যানজট। রাজধানী ঢাকার যানজট হ্রাস করতে ম্যাস র‍্যাপিড ট্রান্সপোর্ট (MRT) বা মেট্রোরেল প্রকল্পের মতো মেগা প্রজেক্ট গ্রহণ করা হয়েছে। চলমান প্রকল্পটি মিরপুর সড়ক ব্যবহার করা যাত্রীদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ সড়কটিতে প্রকল্পের কাজ চলায় যানজট দিন দিন বেড়েই চলছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় নষ্ট হচ্ছে কর্মজীবীদের।

সরেজমিন দেখা যায়, আগারগাঁও থেকে মিরপুর ১২, ১১, ১০ নাম্বার, শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া ও তালতলায় সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে ছোট-বড় অসংখ্য গাড়ি যানজটে অপেক্ষমান। যাত্রীবাহী গাড়িগুলোতে প্রচণ্ড গরমে বসে থাকতে দেখা যায়, নানা শ্রেণি-পেশার যাত্রীদের। প্রকল্পের কাজ এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গে ভোগান্তিও প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ইতোমধ্যে মেট্রোরেল প্রকল্পের দৃশ্যমান কাজ শুরু হয়েছে আগারগাঁও থেকে মিরপুর পর্যন্ত। সড়কের মাঝ বরাবর ব্যারিকেড দিয়ে এমআরটি প্রকল্পের কাজ চলছে। বর্তমানে রাস্তার প্রায় দুই- তৃতীয়াংশ ব্যারিকেড এর মধ্য চলে যাওয়ায় রাস্তাটি সিঙ্গেল লেনের রাস্তায় পরিণত হয়েছে। উক্ত সিঙ্গেল লেন রাস্তা দিয়ে একটি করে গাড়ি চলছে কচ্ছপ গতীতে। এই রোডে ১০ মিনিটের রাস্তা কখনো কখনো শেষ হয়না এক ঘণ্টাতেও।

আগারগাঁও থেকে মিরপুর ১১ পর্যন্ত সরেজমিন দেখা যায়, প্রকল্পের কাজের জন্য বসানো হয়েছে বিশাল আকৃতির ক্রেন, এসকেভেটর। প্রকল্পের পাইলিংয়ের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে অসংখ্য যন্ত্রপাতি। এসব যন্ত্রপাতি প্রকল্পের স্থানে নেওয়ার সময়ও সৃষ্টি হয় বিশাল যানজট। এছাড়াও প্রকল্পে ব্যবহৃত নির্মাণসামগ্রী ইট, সিমেন্ট, বালু, সুরকি পরিণত হয়েছে সাধারণ মানুষের ভোগান্তিতে।

ভোগান্তির বিষয়ে মিরপুরের বাসিন্দা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী নাজরুল ইসলাম মামুন বলেন, ‘মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজের শুরু থেকে দিন দিন আমাদের ভোগান্তি বাড়ছে। প্রতিদিন দুই ঘণ্টা অতিরিক্ত সময় নিয়ে ক্লাসে যেতে হচ্ছে। অনেক সময় ক্লাস এবং পরীক্ষাগুলোতে সময় মতো উপস্থিত হতে পারছি না। প্রথম দিকে শুনেছিলাম রাত-দিন কাজ হবে এখন তেমন কিছুই দেখি না, কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত ভোগান্তি কমবে এমন আশা করাও আকাশকুসুম ব্যাপার।’

বিকল্প পরিবহনের চালক মো: রফিক বলেন, ‘এই সড়কে গাড়ির লোকসান প্রতিদিন বাড়ছে। আগের তুলনায় বর্তমানে দুই টিপ কম দিতে পারি। ২৫-৩০ মিনিটের রাস্তায় এখন সময় লাগছে এক ঘন্টা ৩০ মিনিট, কখনো তারচেয়েও বেশি। সংকুচিত রাস্তা দিয়ে মানুষের চলাচলের কারণে দুর্ঘটনা নিয়ে সব সময় ভয় থাকে আমাদের। অতিরিক্ত গাড়ির চাপে আস্তে আস্তে চলাচলের ছোট রাস্তাটির বেহাল দশা হচ্ছে। ব্যারিকেড থাকার পরও কাজের সময় ধুলা বাইরে চলে আসছে। অতিরিক্ত ধুলায় গাড়ি চালাতে যেমন সমস্যা তেমনি যাত্রীদেরও বিরক্ত হতে দেখা যায়।’

শেওড়াপাড়া এলাকার ফার্নিচার ব্যবসায়ী সুজন চৌধুরী বলেন, ‘কাজ শুরু হওয়ার পর ব্যবসাবাণিজ্য কমে গেছে, আগের মতো বেচাকেনা হচ্ছে না।পরিবহণ খরচ বেশি দিয়ে মাল আনতে হচ্ছে। আবার বৃষ্টিবাদলার দিনে এমনিতেই এসব রাস্তা ডুবে যায়। এ বছর হয়তো ব্যবসা গুটিয়ে নিতে হবে। কারণ রাস্তার কাজ সম্পন্ন না হলে পানি হয়তো মার্কেটে প্রবেশ করবে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছরের ২৬ জুন মেট্রোরেল প্রকল্পের লাইন-৬ এর নির্মাণ কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে উত্তরা তৃতীয় ফেইজ থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত কাজ শেষ করার সময়সীমা চূড়ান্ত করা হয়েছে। মেট্রোরেল প্রকল্পের লাইন-৬ এর পুরো কাজ আটটি প্যাকেজে ভাগ করা হয়। এর মধ্যে প্যাকেজ ৩ ও ৪-এর আওতায় উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার উড়ালপথ ও নয়টি স্টেশন নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই প্যাকেজের কাজ শেষ হয়েছে প্রায় ২৪ শতাংশ। এছাড়া ২০২৪ সালের মধ্যে মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

মিরপুর তালতলা এলাকার স্থানীয় জনপ্রতিনিধি আজিজুল হক বলেন, ‘মেট্রোরেল সরকারের বড় একটি প্রকল্প। আমাদের সবারই কষ্ট হচ্ছে, তবে কাজ দ্রুত শেষ হলে কষ্ট থাকবে না। ভোগান্তি কমাতে যারা মূল দায়িত্বের রয়েছে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে নানা ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। বড় কাজে ভোগান্তি একটু বেশি মনে হবে এমনটা স্বাভাবিক ঘটনা। আমার এলাকার মানুষকে কষ্ট মেনে নিয়ে প্রকল্পের কাজের সার্বিক সহযোগিতার কথা বলা হচ্ছে।’

প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, ২০.১০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হবে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা) দেবে ১৬ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা। আর বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন হচ্ছে পাঁচ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা।