আর্সেনিক দূর করবে মোমিনুলের বিশেষ ফিল্টার

দেশের নিরাপদ পানির সহজলভ্যতা নিশ্চিতে বিশেষ একটি ফিল্টারের উদ্ভাবন করেছেন মেহেরপুরের মোমিনুল ইসলাম নামের এক যুবক। মেহেরপুর ও এর আশপাশের জেলাগুলোতে ফিল্টারটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বিশেষ এই ফিল্টারটি আর্সেনিকের পাশাপাশি আয়রন ম্যাঙ্গানিজ, টারবেডিটি, রং দুর্গন্ধসহ অন্যান্য ক্ষতিকর উপাদান ও ব্যাক্টিরিয়া দূর করতে সক্ষম। আর্সেনিকমুক্ত নিরাপদ পানি পেতে ফিল্টারটি বেশ কার্যকর হবে বলে জানিয়েছেন উদ্ভাবক মোমিনুল। খবর ইউএনবি।

মোমিনুল ইসলাম জানান, তিনি ফিল্টারটির নমুনা পরীক্ষা করিয়েছেন। সরকারি ও বেসরকারিভাবে এটি পরীক্ষা করা হলে এর ফলাফল ডব্লিউএইচও'র গাইড লাইনের মধ্যেই পাওয়া গেছে।

মেহেরপুর সদর উপজেলার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী মাকবুলার রহমানের সহায়তায় উদ্ভাবকের প্রতিবেশীর অগভীর নলকূপ ও নমুনা ফিল্টারের পানি পরীক্ষা করা হয়।

ঝিনাইদহ আঞ্চলিক পানি গবেষণাগারেও ওই পানির পরীক্ষা করা হলে ভালো ফল পাওয়া যায়। নলকূপের পানিতে শূন্য দশমিক ২১৮ মিলিগ্রাম প্রতি লিটারে আর্সেনিক পাওয়া গেলেও নমুনা ফিল্টারটিতে এর পরিমাণ ছিল শূন্য দশমিক ০১ মিলিগ্রাম।

পরে আঞ্চলিক পানি গবেষণা কেন্দ্রে উদ্ভাবকের নলকূপের পানি ও নমুনা ফিল্টারের পানি পরীক্ষা করা হয়। নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের মাত্রা শূন্য দশমিক ৩৯৬ মিলিগ্রাম, আয়রন ১৩ দশমিক ০৬ মিলিগ্রাম, ম্যঙ্গানিজ ১ দশমিক ০২ মিলিগ্রাম পাওয়া যায়।

তবে ফিল্টার করার পরে ওই পানিতে আর্সেনিকের মাত্রা শূন্য দশমিক ০৬৯ মিলিগ্রাম, আয়রন শূন্য দশমিক ৭৪ মিলিগ্রাম, ম্যঙ্গানিজ শূন্য দশমিক ০৫ মিলি গ্রাম পাওয়া যায়।

পরবর্তীতে ওই নমুনা ফিল্টারটি উন্নত করা হলে ওই আর্সেনিকের মাত্রা শূন্য দশমিক ৩৯৬ থেকে শূন্য দশমিক ০৯ মিলিগ্রাম, আয়রন ১৩ দশমিক ০৬ থেকে শূন্য দশমিক ০০ মিলিগ্রামে নেমে আসে।

মোমিনুল জানান, নমুনা ফিল্টারটি তৈরিতে একটি টিনের ড্রাম ব্যবহার করা হয়েছে। ড্রামের মাঝখানে একটি ফিল্টার বসানো হয়। তবে এতে বিদ্যুৎ ও কেমিকেলের ব্যবহার করা হয়নি। মধ্যাকর্ষণ শক্তিকে কৃত্রিম শক্তিতে রূপান্তর করে কাজ করা হয় ফিল্টারটিতে।

ফিল্টারের মধ্যে বালি ও কাঠ কয়লা নির্দিষ্ট পরিমাণে ব্যবহার করা হয়। ফিল্টারেশনের কারণে পানিতে যে ময়লা জমা হয় তা একটি পাইপের মাধ্যমে উপর দিয়ে বের হয়ে ডাস্ট পটে জমা হয়। তার পাশেই রয়েছে নিরাপদ পানি বের হওয়ার পাইপ। এর মাথায় দুটি সুইচ ব্যবহার করা হয়েছে।

সাধারণ মানুষ ১৬০০ থেকে ১৮০০ টাকার মধ্যে ফিল্টারটি ক্রয় করতে পারবেন। আয়রনের কারণে বন্ধ হয়ে গেলেও ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে ফিল্টারটি যে কেউ পরিষ্কার করতে পারবেন। পানি শেষ হওয়ার পূর্ব মুহূর্তে ফিল্টারটি টিউন স্যিগনাল দেবে।

মেহেরপুর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল গফুর মোল্লা জানান, হাউজহোল্ড ফিল্টার ও কৃত্তিম কূপটি যথাযথভাবে মূল্যায়ণ করা দরকার। বাজারে যে সব ফিল্টার পাওয়া যায় সেগুলো আয়রন ফিল্টার করতে পারলেও আর্সেনিক ফিল্টারে কার্যকরী নয়। ফিল্টারটি বাজারজাত হলে ভুক্তভোগীরা নিরাপদ পানি পেতে পারেন। সরকারের নির্ধারিত বিভাগে এটি নিবন্ধন করে বাজারজাত করতে পারবেন।