কয়লাসহ জাহাজডুবি: হুমকির মুখে জলজ প্রাণী

চলতি মৌসুম সুন্দরবনের কুমিরের প্রজননের সময়। এর মধ্যেই কয়লাবাহী লাইটারেজ জাহাজ ডুবে যাওয়ার বিষয়টি প্রভাব ফেলতে পারে কুমিরের স্বাভাবিক প্রজননে। কয়লামিশ্রিত বিষাক্ত পানি পান ও তাতে ডিম ছাড়ার কারণে হুমকির মুখে কুমিরের জীবনচক্র। পরিবেশ ও জীব বিজ্ঞানীরা বলছেন, বার বার সুন্দরবনের মোংলা সমুদ্রবন্দরের পশুর চ্যানেলে নৌযান ডুবিতে কুমির ছাড়াও ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে ডলফিনসহ অন্যান্য জলজ প্রাণীর স্বাভাবিক জীবন।

শনিবার রাতে মোংলা বন্দর থেকে প্রায় ৬০ নটিক্যাল মাইল দূরে পশুর নদের হাড়বাড়িয়া এলাকার ৫ নম্বর অ্যাংকারের কাছে এমভি বিলাশ নামের জাহাজটি ডুবে যায়। জাহাজটিতে ৭৭৫ মেট্রিক টন কয়লা ছিল। এই ঘটনায় পরিবেশ দূষণের বিষয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আবদুল্লাহ হারুন জানান, যেখানে কয়লাবাহী জাহাজ ডুবেছে সেখানে সাথে সাথে বেশকিছু জীব-বৈচিত্র আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারে। এছাড়া কয়লার মধ্যে থাকা রাসায়নিক দ্রব্য। যেমন, সালফার, সীসা, পারদ, নিকেন, অ্যালুমনিয়াম কনা পানিতে মিশে পরিবেশ বিষাক্ত করে তুলতে পারে। ফলে তা মাছ ও জলজ প্রাণীর জীবন চক্রে প্রভাব ফেলতে পারে। যা সামগ্রিক ইকো-সিষ্টেমকে পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারে।

গবেষকরা বলছেন, প্রায়ই সুন্দরবনের পশুর নদে জাহাজ ডুবছে। এতে জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি হচ্ছে। কয়লাতে থাকা সালফার পানিতে ক্ষতির পরিমাণ বেশি ঘটায়। এ ছাড়া রাসায়নিক দ্রব্যের কারণে পানির প্লাংটন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া আশঙ্কাও করছেন তারা।

এতে জলজ প্রাণীর খাবারের ওপর বড় ধরণের প্রভাব পড়তে পারে। আবদুল্লাহ হারুন বলেন, 'সুন্দরবনের হারবাড়িয়া এলাকা ইরাবতী ডলফিনের বিচরণ ক্ষেত্র। কয়লামিশ্রিত পানির সংষ্পর্শে এলে প্রাণীটির অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এ ছাড়া এ সময় কুমিরের প্রজনন মৌসুম হওয়াতে ঠিকমতো ডিম ফুটতে নাও পারে। তাই এই দুর্ঘটনা ডলফিন ও কুমিরের জীবন চক্র হুমকিতে ফেলতে পারে।'

এই পরিবেশ বিজ্ঞানী বলেন, 'সুন্দরবনের পশুর নদীতে নিয়মিতভাবেই দুর্ঘটনা ঘটছে। এতে পরিবেশ ও জলজ প্রাণীর ওপর কী পরিমাণ প্রভাব পড়েছে বা পড়তে যাচ্ছে তা নিয়ে দেশে দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় ও গবেষণা না হওয়াতে এই অঞ্চলের ওপর ক্ষতির প্রভাব জানা সম্ভব হয়ে উঠে না। তাই ক্ষতি নিরুপণে তা নির্ণয়ের ওপর জোর দিয়েছেন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনিরুল এইচ খান বলেন, 'সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে জাহাজ চলাচল কখনোই উচিত না। কারণ দুর্ঘটনা ঘটলে সেখানকার জীব-বৈচিত্রের বাস্তুতন্ত্রের ওপর  প্রভাব পড়ে। পানির গুণাগুন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে গাছপালা থেকে শুরু করে বসবাসরত প্রাণীদের জীবন হুমকিতে পড়ে।

জাহাজ ডুবির বিষয়ে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মাহমুদুল হাসান বলেন, 'কার্গোটি যেখানে ডুবেছে, তা সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের হাড়বাড়িয়া টহল ফাঁড়ি ও ইকো-টুরিজম কেন্দ্রের কাছে। প্রাথমিকভাবে জলজ প্রাণী ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার তথ্য নেই।' ডলফিন, কুমিরসহ জলজ প্রাণীর ওপর প্রভাবের বিষয়ে তিনি জানান, ডলফিন ও কুমিরের প্রজননে ক্ষতির আশঙ্কা কম। তবে সোমবার বনবিভাগ একটি প্রতিনিধি দল ঘটনাস্থল সরেজমিনে পরিদর্শনে যাবেন। এছাড়া সহকারী বনসংরক্ষককে ক্ষয়-ক্ষতির বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।