এবার সরকারি কর্মকর্তাদের বাড়ির ঋণ দিবে সরকার

ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তাদের বিনা সুদে গাড়ির ঋণ দেওয়ার পর এবার তাদের বাড়ির ঋণ দেয়ার কথা ভাবছে সরকার। নতুন এই ঋণসুবিধা আগামী অর্থবছরের প্রথম দিন ১ জুলাই থেকে কার্যকর হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর আগে উপসচিব থেকে তার ওপরের পদের কর্মকর্তাদের গাড়ির জন্য বিনা সুদে ঋণ দেয়া হয়েছিলো।

অর্থ বিভাগের তৈরি ‘সরকারি কর্মচারীদের জন্য ব্যাংকিং-ব্যবস্থার মাধ্যমে গৃহনির্মাণ ঋণ প্রদানসংক্রান্ত নীতিমালা, ২০১৮ ’-এর খসড়ায় এই সুবিধার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এই ঋণ গাড়ির ঋণের মতো বিনা সুদের হবে না বলে জানা গেছে।

বাড়ির ঋণ হিসেবে ২০ বছর মেয়াদি সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ টাকার এই ঋণে সুদ থাকবে ১০ শতাংশ। তবে সরকারি কর্মচারীদের কাছ থেকে সুদ নেওয়া হবে ৫ শতাংশ, বাকি ৫ শতাংশ সরকার পরিশোধ করবে। এছাড়া এই ঋণ হবে সরল সুদে, অর্থাৎ সুদের ওপর সুদ নেওয়া হবে না।

অর্থসচিব মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী জানান, খুব শীঘ্রই নীতিমালাটি অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভায় পাঠানো হবে। নতুন এই ঋণসুবিধা আগামী অর্থবছরের প্রথম দিন ১ জুলাই থেকে কার্যকর হতে পারে।

মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদপ্তর, পরিদপ্তর ও কর্তৃপক্ষগুলোতে যেসব কর্মকর্তারা স্থায়ী পদে চাকরি করেন শুধুমাত্র তারাই এই ঋণ নিতে পারবেন। সামরিক, রাষ্ট্রায়ত্ত ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি, পৃথক বা বিশেষ আইন দ্বারা তৈরি প্রতিষ্ঠানে নিযুক্ত কর্মচারীরা এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন। এছাড়া সরকারি চাকরিতে চুক্তিভিত্তিক, খণ্ডকালীন ও অস্থায়ী ভিত্তিতে নিযুক্তরাও এই ঋণ সুবিধা পাবেন না।

খসড়া নীতিমালা অনুযায়ী, জাতীয় বেতন স্কেলে যেসব কর্মকর্তারা পঞ্চম থেকে প্রথম ধাপে বেতন-ভাতা পান তারা রাজধানী ঢাকা, দেশের সব সিটি করপোরেশন ও বিভাগীয় সদরে বাড়ি তৈরির জন্য ৭৫ লাখ টাকা ঋণ পাবেন। জেলা সদর হলে পাবেন ৬০ লাখ টাকা এবং অন্যান্য এলাকা হলে পাবেন ৫০ লাখ টাকা। তবে ফ্ল্যাট কিনতে হলে ঋন পাবেন ৬০ লাখ টাকা।

জাতীয় বেতন স্কেলে যেসব কর্মকর্তারা নবম থেকে ষষ্ঠ ধাপে বেতন-ভাতা পান তারা রাজধানী ঢাকা, দেশের সব সিটি করপোরেশন ও বিভাগীয় সদরে বাড়ি তৈরির জন্য ৬৫ লাখ টাকা ঋণ পাবেন। জেলা সদর হলে পাবেন ৫৫ লাখ টাকা এবং অন্যান্য এলাকা হলে পাবেন ৫৫ লাখ টাকা।

যেসব কর্মকর্তারা দশম থেকে ত্রয়োদশ ধাপে বেতন-ভাতা পান তারা রাজধানী ঢাকা, দেশের সব সিটি করপোরেশন ও বিভাগীয় সদরে বাড়ি তৈরির জন্য ৫৫ লাখ টাকা ঋণ পাবেন। জেলা সদর হলে পাবেন ৪০ লাখ টাকা এবং অন্যান্য এলাকা হলে পাবেন ৩০ লাখ টাকা।

যেসব কর্মকর্তারা চতুর্দশ থেকে সপ্তদশ ধাপে বেতন-ভাতা পান তারা রাজধানী ঢাকা, দেশের সব সিটি করপোরেশন ও বিভাগীয় সদরে বাড়ি তৈরির জন্য ৪০ লাখ টাকা ঋণ পাবেন। জেলা সদর হলে পাবেন ৩০ লাখ টাকা এবং অন্যান্য এলাকা হলে পাবেন ২৫ লাখ টাকা।

আর যেসব কর্মকর্তারা অষ্টাদশ থেকে বিংশতম ধাপে বেতন-ভাতা পান তারা রাজধানী ঢাকা, দেশের সব সিটি করপোরেশন ও বিভাগীয় সদরে বাড়ি তৈরির জন্য ৩৫ লাখ টাকা ঋণ পাবেন। জেলা সদর হলে পাবেন ২৫ লাখ টাকা এবং অন্যান্য এলাকা হলে পাবেন ২০ লাখ টাকা।

চাকরি স্থায়ী হওয়ার পাঁচ বছর পর থেকে ৫৮ বছর বয়স পর্যন্ত সরকারি চাকরিজীবীরা এই ঋণ পাওয়ার যোগ্য হবেন। এক্ষেত্রে কোনো কর্মচারীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা থাকলে বা দুর্নীতি মামলার চার্জশিট দাখিল হলে মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তিনি ঋণের অযোগ্য হবেন বলে খসড়ায় বলা হয়েছে।

এছাড়া সুদ পাওয়ার জন্য ফ্ল্যাট কেনা বা নিজস্ব জমিতে বাড়ি নির্মাণে নিজেদের কাছে মোট টাকার অন্তত ১০ শতাংশ টাকা থাকতে হবে। ফ্ল্যাট কেনার জন্য ঋণের পুরো টাকা এক কিস্তিতে ছাড় করলেও বাড়ি নির্মাণের ঋণের টাকা চার কিস্তিতে ছাড় করবে ব্যাংক।