নিজস্ব স্যাটেলাইট থেকে কী কী সুফল পাবে বাংলাদেশ?

বিশ্বের ৫৭তম দেশ হিসেবে প্রথমবারের মতো নিজস্ব স্যাটেলাইটের মালিক হলো বাংলাদেশ। শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা থেকে সফলভাবে উৎক্ষেপণ করা হয় বাণিজ্যিক স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১। প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি এ স্যাটেলাইট থেকে দেশের মানুষের আসলে কী সুবিধা হবে তা নিয়েই এই লেখা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, নিজস্ব স্যাটেলাইট থেকে মূলত তিন ধরনের সুফল দেশের মানুষ পেতে পারে। প্রথমত, এ স্যাটেলাইটের সক্ষমতা বিক্রি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা যাবে, সাশ্রয়ও হবে। দ্বিতীয়ত, এর মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেট ও টেলিযোগাযোগ সেবার সম্প্রসারণ করার সুযোগ তৈরি হবে। তৃতীয়ত, এটি দুর্যোগ মোকাবিলা ও ব্যবস্থাপনায় কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

এ ছাড়াও জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিতে এ স্যাটেলাইট কাজে লাগানো যাবে। তবে এসব সম্ভাবনাকে ছাপিয়ে গেছে বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি। কেননা, এর মাধ্যমে স্যাটেলাইট প্রযুক্তির অভিজাত দেশের ক্লাবে যুক্ত হলো বাংলাদেশের নাম।

বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ৩০টি স্যাটেলাইট চ্যানেল সম্প্রচারে রয়েছে। প্রতি মাসে একটি চ্যানেলের ভাড়া আসে তিন থেকে ছয় হাজার মার্কিন ডলার। সব মিলিয়ে বিভিন্ন দেশকে স্যাটেলাইট ভাড়া হিসেবে চ্যানেলগুলো দিয়ে থাকে ২০ লাখ ডলার বা প্রায় ১৭ কোটি টাকা। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট চালু হলে এ ভাড়া যেমন কমবে, তেমনি মোটা অঙ্কের এই অর্থ দেশেই থাকবে।

সেইসঙ্গে স্যাটেলাইটের ৪০টি ট্রানসপন্ডার বা সক্ষমতার মধ্যে ২০টিই অন্য দেশের কাছে ভাড়া দেয়া যাবে। এখান থেকে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে পারবে বাংলাদেশ। এজন্য বঙ্গবন্ধু কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি (বিসিএসবি) লিমিটেড গঠন করেছে সরকার। এ প্রতিষ্ঠানটি ইতিমধ্যে ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনের কাছে স্যাটেলাইটের ট্রান্সপন্ডার বিক্রির জন্য কাজও শুরু করেছে।

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের আরেকটি বিক্রয়যোগ্য পণ্য হবে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথ। বিটিআরসি বলছে, এ স্যাটেলাইটে ৪০টি ট্রান্সপন্ডারের মধ্যে ২৬টি কেইউ-ব্যান্ড ও ১৪টি সি-ব্যান্ড। ৪০টি ট্রান্সপন্ডারের মোট ফ্রিকোয়েন্সি ক্ষমতা হবে ১ হাজার ৬০০ মেগাহার্টজ। এর মধ্য থেকে কমপক্ষে ১ হাজার ৪০০ মেগাহার্টজ ব্যবহার করা সম্ভব হবে। তবে এখান থেকে পাওয়া ইন্টারনেট বেশ ব্যয়বহুল।

এছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা ঝড়ের সময় যোগাযোগব্যবস্থা রক্ষায় কার্যকর ভূমিকা পালন করবে স্যাটেলাইট। ব্যাংকিং সেবা, টেলিমেডিসিন ও দূরনিয়ন্ত্রিত শিক্ষাব্যবস্থার প্রসারেও ভূমিকা রাখতে পারবে বঙ্গবন্ধু-১। এখন এই স্যাটেলাইট থেকে দেশের মানুষ কতটা সুফল পাবে তা সময়ই বলে দিবে।