রমজান সামনে রেখে চড়া কাঁচাবাজার

রমজানে বাজার স্থিতিশীল রাখা নিয়ে সরকারের আশ্বাসের পরও রাজধানীর কাঁচাবাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। ইউএনবি প্রতিবেদকরা শান্তিনগর, মালিবাগ, হাতিরপুল ও মোহাম্মদপুর কাঁচাবাজারে গিয়ে দেখতে পান- ডাল, ছোলা, মাংস, মাছ, মুরগি ও সবজির মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য গত কয়েক সপ্তাহের তুলনায় চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে।

‘শসা কিনেছি ৭০ টাকা কেজি। আর টমেটো নিয়েছে ৮০ টাকা কেজি,’ মালিবাগ কাঁচাবাজারে আসা মো. কামাল ইউএনবিকে এ কথা বলেন। তিনি জানান, অনেক নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য গত কয়েক দিনের তুলনায় এখন দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) রমজানের জন্য গরুর গোশতের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছিল ৪৫০ টাকা কেজি, গত বছরের তুলনায় তা ২৫ টাকা কম।

‘কিন্তু কর্তৃপক্ষের নির্দেশ তো মানা হচ্ছে না। মাংস বিক্রি হচ্ছে ৪৮০-৫০০ টাকা কেজি’, বলছিলেন রহমান আলী নামে আরেক ক্রেতা।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতিকেজি কাঁচা মরিচ ৪০-৬০, বেগুন ৬০-৭০, আলু ২৫, টমেটো ৮০, পেয়াজ ৪০, শসা ৭০-৮০ এবং ছোলা ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৬০ টাকা কেজিতে।

‘সবজির দামও বেড়েছে। আমরা যারা মধ্যবিত্ত তাদের প্রতিবছর রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামের কারণে ভুগতে হয়। এ নিয়ে প্রতিবছর সংবাদ হয় কিন্তু কোনো সমাধান হয় না। দাম স্থিতিশীল রাখা নিয়ে কোনো আন্তরিক চেষ্টা নেই,’ অভিযোগ মশিউর রহমান নামে এক ক্রেতার।

ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে সারা বছর, বিশেষ করে রমজানে নৈতিকভাবে ব্যবসা করার আহ্বান জানিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। সেই সাথে বিবেকহীন ব্যবসায়ীদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ছাড় দেবে না বলে হুশিয়ারিও দিয়েছিলেন তিনি।

অন্যদিকে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ গত ১৩ মে জানিয়েছিলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়ার সম্ভাবনা নেই। কারণ চিনি, ভোজ্য তেল, ছোলা, পেয়াজ, রসুন ও খেজুরের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। কেউ বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির চেষ্টা করলে কঠিন পদক্ষেপ নেয়ারও হুশিয়ারি দিয়েছিলেন তিনি।

রমজান সামনে রেখে মানুষের সুবিধার জন্য গত ৬ মে থেকে দেশব্যাপী খোলা বাজারে পণ্য বিক্রি শুরু করেছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। বিক্রি করা হচ্ছে সয়াবিন তেল, চিনি, মসুর ডাল, ছোলা ও খেজুর। দেশব্যাপী টিসিবির ১০টি বিক্রয় কেন্দ্র, ২ হাজার ৭৮৪ জন ডিলার ও ১৮৪টি ট্রাক থেকে এসব নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য কেনা যাচ্ছে।

টিসিবির মুখপাত্র মো. হুমায়ুন কবির ইউএনবিকে জানান, তাদের ট্রাকগুলোর মধ্যে ৩২টি রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন জায়গায়, ১০টি চট্টগ্রামে এবং বাকি বিভাগীয় শহরে ৫টি করে ও জেলা শহরে ২টি করে ট্রাক পণ্য বিক্রির কাজে নিয়োজিত রয়েছে।

তিনি আরো জানান, একজন গ্রাহক ট্রাক, ডিলার বা টিসিবির বিক্রয় কেন্দ্র থেকে সর্বোচ্চ ৪ কেজি দেশি চিনি, ৪ কেজি ডাল, ৫ কেজি সয়াবিন তেল, ৫ কেজি ছোলা ও ১ কেজি খেজুর ক্রয় করতে পারছেন।

প্রতি কেজি সয়াবিন তেল ৮৫ টাকা, চিনি ৫৫ টাকা, ডাল ৫৫ টাকা, ছোলা ৭০ টাকা এবং খেজুর ১২০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।

কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবিরের অভিযোগ, কিছু মুনাফা লোভীর কারণে বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে।

‘সরকার বলছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের পর্যাপ্ত মজদু আছে। যদি তা সত্য হয় তাহলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল বৃদ্ধির কোনো কারণ দেখি না। কিন্তু কিছু ব্যবসায়ী কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছেন,’ যোগ করেন তিনি।

তার মতে, পেয়াজ, রসুন ও আদার দাম ইতোমধ্যে বাড়া শুরু হয়েছে। ‘এটা ক্রেতাদের জন্য খারাপ সংবাদ।’

কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামে টিসিবি ও বাজার দরে খুব একটা পার্থক্য নেই জানিয়ে হুমায়ুন কবির বলেন, এই স্বল্প পার্থক্যের কারণে গ্রাহকরা টিসিবি থেকে পণ্য কিনতে আগ্রহী হন না। টিসিবিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম আরো কমাতে হবে।

একেএম মঈনুদ্দিন ও এম জাহাঙ্গীর আলম...