ভেঙে গেছে বাঁধ, মৌলভীবাজারে ৪ শতাধিক গ্রাম প্লাবিত

কয়েকদিনের ভারী বর্ষণ ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে মনু ও ধলাই নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে প্রবল বেগে পানি প্রবেশ করে বিস্তৃর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

কুলাউড়া উপজেলায় টিলাগাঁও, শরিফপুর ও হাজীপুর ইউনিয়নের ৫টি ভাঙন ও কমলগঞ্জ উপজেলার কমলগঞ্জ পৌর এলাকা, মুন্সীবাজার ইউনিয়ন, আদমপুর ও মাধবপুর ইউনিয়নের ৮টি ভাঙন দিয়ে প্রবেশ করছে বন্যার পানি।

তলিয়ে গেছে এসব এলাকার বাড়ি-ঘর, রাস্তা-ঘাট সহ ফসলী জমি। পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন ওই এলাকার অন্তত লক্ষাধিক মানুষ। বাড়ি-ঘর তলিয়ে যাওয়ায় অনেকেই নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন।

বন্যার পানিতে নিমজ্জিত থাকায় শমসের নগর-চাতলাপুর ইমগ্রেশন চেকপোস্ট সড়ক, মুন্সীবাজার-কমলগঞ্জ-কুরমা সড়ক ও শমশেরনগর-কুলাউড়া সড়কের একাংশ তলিয়ে যাওয়ায় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।

এসব সড়কে কোথাও কোথাও দেড় থেকে ৩ ফুট বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে যানবাহন চলাচলে চরম দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে।

এদিকে মনু নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বুধবার রাতে কুলাউড়ার শরীফপুর ইউনিয়নের বাঘজুর ও তেলিবিল গ্রাম, বৃহস্পতিবার সকালে চাতলাপুর সেতুর উত্তরপাশে ও দুপুরে হাজীপুর ইউনিয়নের মিঞারপাড়া এলাকায় নদী ভাঙনের ফলে পানি দ্রুত গতিতে গ্রামে প্রবেশ করে।

ফলে ১৫টি গ্রামের প্রায় ৪ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েন। শরীফপুরের বটতলা থেকে চাঁনপুর পর্যন্ত প্রায় ২ কি.মি. সড়ক ৩ ফুট পানিতে নিমজ্জিত হওয়ায় এবং কুলাউড়া-শমশেরনগর সড়কে টিলাগাঁও এলাকা পানিতে নিমজ্জিত হওয়ায় কুলাউড়া-শমশেরনগর ও বাংলাদেশ-ভারত সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

মৌলভীবাজার-২ আসনের সংসদ আব্দুল মতিন, কুলাউড়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুল ইসলাম ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চৌধুরী মো. গোলাম রাব্বি শরীফপুর ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন।

তারা বলেন, এ ইউনিয়নের পানিবন্দী মানুষজনের জন্য জরুরি ভিত্তিতে ত্রাণ প্রদানসহ আর্থিক সহায়তার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। তাছাড়া জরুরি ভিত্তিতে সড়ক যোগাযোগ চালু রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে কাজ করা হবে বলেও তারা জানান।

জেলা প্রশাসক মো. তোফায়েল ইসলাম জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে তাৎক্ষণিক বিতরণের জন্য কুলাউড়া উপজেলায় ৫০ টন, কমলগঞ্জ উপজেলায় ৪৫, রাজনগরে ১০ টন ও শ্রীমঙ্গলে ৫ টন চাল বরাদ্দের প্রক্রিয়া চলছে। এ ছাড়াও কুলাউড়া ও কমলগঞ্জে নগদ এক লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী রনেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী বলেন, ভারতে প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। মনু নদীর বাঁধ উপচিয়ে পানি এসে বাঁধ ভেঙে গেছে। নদীতে পানির গতি অত্যধিক। মনু নদীর পানি মনু রেলওয়ে ব্রিজের কাছে বিপদ সীমার ১৭৭ সেমি, শহরের চাঁদনীঘটে ৪৫ সেমি ও কমলগঞ্জের ধলাই নদীর পানি ৫৩ সেমি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে মনু নদীর শহর প্রতিরক্ষা বাঁধ উপচিয়ে পানি প্রবেশ করতে পারে।