ফিরোজ রশীদ: বাজেটে বিষ ও মধু উভয়ই আছে

জাতীয় পার্টির (জাপা) সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেছেন, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ব্যাংক লুটপাটকারী এবং কতিপয় ধনীদের সহায়তা করার জন্য বিষ ও মধু মিশিয়ে বাজেট তৈরি করেছেন। এতে কোনো রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দর্শন নেই। এই বাজেট আওয়ামী লীগের নীতি ও আদর্শবিরোধী।

মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটের কড়া সমালোচনা করে এসব বলেন জাপা নেতা।

তিনি বলেন, ‘মুহিত দেশের ১২২টি ধনী পরিবারের পক্ষে বাজেট পেশ করেছেন যাদের ৮০ শতাংশ সম্পদ রয়েছে। তিনি ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাটকারীদের জন্য ২.৫ শতাংশ কর্পোরেট ট্যাক্স কমিয়েছেন। সুতরাং এটি একটি ভেজাল মিশ্রিত বাজেট।’

কর্পোরেট ট্যাক্স হ্রাস করতে অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাব বাতিলের জন্য ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা এটি মেনে নিতে পারি না যে আপনি লুটপাটের সুযোগ তৈরি করতে করদাতাদের অর্থ দিয়ে ব্যাংকগুলোকে ভর্তুকি দেবেন। ’

কেন মুহিত ব্যাংক লুটপাটকারীদের কাছে মাথা নত করেন প্রশ্ন করে ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘এটি একটি ভারসাম্যহীন এবং বৈষম্যমূলক বাজেট। কারণ অর্থমন্ত্রী ব্যাংক লুটপাটকারী এবং ধনীদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। বাজেটে বৈষম্য কমানোর জন্য কোনো পদক্ষেপ নেই।’

তিনি আরো বলেন, অব্যবস্থাপনা ও লুটপাটের কারণে মানুষের এখন ব্যাংকের প্রতি কোনো আস্থা নেই। ব্যাংকগুলো এখন দেশের জনগণের পরিবর্তে কিছু পরিবারের প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।

সরকারকে ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান জাতীয় পার্টির এমপি যাতে নতুন বাজেট থেকে মানুষ উপকৃত হতে পারে। ‘আমরা বাজেটটি পাস করতে পারছি না যা লুটপাটকারী এবং কিছু ধনী ব্যক্তিদের জন্য সুযোগ তৈরি করবে’, যোগ করেন তিনি।

রশীদ বলেন, যাদের জন্য অর্থমন্ত্রী বাজেট তৈরি করেছেন তারা (ধনীরা) ভোট দেয়ার পরিবর্তে বিদেশে যাবেন। কিন্তু যেসব নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত লোকদের তিনি উপেক্ষা করেছেন তারা ভোট দেয়ার জন্য দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াবেন।

জাপা নেতা আরো বলেন, প্রশাসনে এখন কোনো শৃঙ্খলা নেই কারণ সব সরকারি কর্মকর্তারা এখন পক্ষপাতিত্বের মনোভাব দেখান যেন তারা আওয়ামী লীগের সমর্থক কর্মকর্তায় পরিণত হয়েছেন। তারা জনগণকে সেবা দেয়ার বিষয়ে বিরক্ত। এটি জাতির জন্য একটি অশুভ সংকেত। আমাদের অবশ্যই প্রশাসনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে।

বাজেট বক্তব্যে জাতির কাছে এরশাদের অবদানের স্বীকৃতি না দেয়ার জন্য অর্থমন্ত্রীর সমালোচনা করে রশীদ বলেন, ‘তিনি আমলা হিসেবে এটি করেছেন। একজন আমলা এবং একজন রাজনীতিবিদের মধ্যে এটি মৌলিক পার্থক্য। আমলারা সবকিছু সহজেই ভুলে যান। অন্যদিকে রাজনীতিবিদরা একে অপরকে শ্রদ্ধা করে ও ভালোবাসে এবং তাদের অবদানের কথা স্মরণ রাখে। এসময় জাপার চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের আমলের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কথা স্মরণ করেন ফিরোজ রশীদ।