মান্না: নির্বাচন কমিশন সরকারের ‘দাসে’ পরিণত হয়েছে

বর্তমান নির্বাচন কমিশন সরকারের দাস বলে মন্তব্য করেছেন মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি বলেছেন, ‘নির্বাচন কমিশন (ইসি) এখন সরকারের দাস। খুলনায় যে নির্বাচন হয়েছে তার ফলাফল দেখেছেন? মৃত ব্যক্তি ভোট দিয়ে চলে যায়! বোঝেন তাহলে, কী রকম নির্বাচন হয়েছে! এরপর গাজীপুরে কী হয়েছে আপনারা দেখেছেন।’

৭ জুলাই, শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘জনপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ আইনের ৯০ বি ধারা বাতিল, নতুন রাজনৈতিক দল, গণতন্ত্র ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিকাশে নির্বাচন কমিশন ও সরকারেই প্রধান অন্তরায়’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সভায় নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মান্না ছাড়াও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও গণসংহতি আন্দোলনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এ তিনটি রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেছে। এর মধ্যে মান্নার নাগরিক ঐক্যকে নিবন্ধন না দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিয়েছে ইসি।

২০০৮ সালে দল নিবন্ধন বিধি হওয়ার পর থেকে অনিবন্ধিত কোন দল নির্বাচনে অংশ নিতে পারে না। এমন পরিস্থিতিতে গণসংহতি ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টিকেও নিবন্ধন দেওয়া হবে না বলে গুঞ্জন রয়েছে। তাই প্রেস ক্লাবে আয়োজিত ওই মতবিনিময় সভা থেকে দলগুলোর নেতারা নিবন্ধন বিধি সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন।

‘নাগরিক ঐক্যে’কে নিবন্ধন না দেওয়ায় দলটির আহ্বায়ক ও ডাকসুর সাবেক ভিপি মান্না বলেন, ‘গাজীপুরে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করার পর কমিশন উত্তর দিয়েছে যে, সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো সংজ্ঞা নেই! তাহলে এই কমিশন কী আপনাদের (রাজনৈতিক দল) নিবন্ধন করতে দেবে? যে নিজেই জানে না কী রকম করে খেলতে হয়, সে যদি এখন মেসির দোষ দেখে, সে যদি নেইমারের দোষ দেখে, তাহলে বলতে হবে পাগল। আমাদের নির্বাচন কমিশনে যারা আছেন, তারা কোন নির্বাচন সুষ্ঠু, তাই জানেন না! তাহলে দল কোনটা সুষ্ঠু, সেটা বোঝেন কী করে?’

আওয়ামী লীগ মানুষের ভোটের অধিকারের বিরুদ্ধে তারা দাঁড়িয়েছে মন্তব্য করে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি সাইফুল হক বলেন, ‘যে আওয়ামী লীগ এক সময় মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকারের জন্য লড়াই করেছে, সে আওয়ামী লীগ এখন ভোটাধিকারকে ভয় পাচ্ছে! আওয়ামী লীগের বিল্ডিংটা উপরের দিকে উঠছে, কিন্তু তাদের নীতি-নৈতিকতা, রাজনীতি, গণতন্ত্র, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, স্বেচ্ছাচারিতা একটা চূড়ান্ত পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। এটা তাদের ঐতিহাসিক রাজনৈতিক পরাজয়।’

নির্বাচন কমিশন নতুন রাজনৈতিক দলের সুস্থ বিকাশে বাধা সৃষ্টি করছে অভিযোগ করে গণসংহতির প্রধান সমস্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘এই নিবন্ধন আইন গণতান্ত্রিক নয়। এটি রাজনৈতিক দলের মৌলিক অধিকার খর্ব করার শামিল বলে মনে করি। এটি বৈষম্যমূলক গণবিরোধী একটি আইন। এই আইনের সংস্কার অবশ্যই আনতে হবে।’

ছাত্র ফেডারেশনের সাবেক সভাপতি সাকি তার বক্তব্যে এ আইনের বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে লড়াই করতে প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানান। প্রেস ক্লাবে আয়োজিত ওই আলোচনা সভায় উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, ডাকসুর সাবেক ভিপি ও জাসদ নেতা মুশতাক হোসেন, সাবেক সাংসদ তাসনীম রানা, বাংলাদেশ কংগ্রেসের সভাপতি কাজী রেজাউল হোসেন প্রমুখ।