‘আর সাড়া দিচ্ছে না, শিক্ষার্থীরা এখন ক্লাশ করতে চায়’

কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীরা আর সাড়া দিচ্ছে না এমন ইঙ্গিত দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান দাবি করেছেন ‘শিক্ষার্থীরা এখন ক্লাশ করতে চায়’। উপাচার্য এমন এক সময় এ মন্তব্য করলেন যখন সারাদেশে আন্দোলনকারীরা ক্লাশ-পরীক্ষা বর্জনের ডাক দিয়েছেন।

৮ জুলাই, রোববার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য লাউঞ্জে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘পরীক্ষা দিতে বাধা দেয়, ক্লাস করতে বাধা দেয়, এগুলো একটি বড় মাপের অশুভ তৎপরতা। ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করা মানে শিক্ষার্থীদের মৌলিক অধিকারের বিপক্ষে দাঁড়ানো।’

২০০৪, ২০০৫ ও ২০০৬ মেয়াদে তিন দফায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করা এই অধ্যাপক বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনে বাধ্য করার মতো একটি অশুভ তৎপরতা বিশ্ববিদ্যালয়ে তৈরি হয়েছে। তবে ইতোমধ্যে ইতিবাচক পরিবর্তন বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটে গেছে। সেটি হলো শিক্ষার্থীরা নিয়মিত ক্লাস করতে চায়।’

কোটা আন্দোলনকারীদের ফেসবুক লাইভে কথা বলা নিয়ে উপাচার্য বলেন, ‘তাদের ভিডিও বার্তার ধরণ আর জঙ্গিদের ধরণ এক রকম। তারা কোন অশুভশক্তি, কোন রাজনৈতিক শক্তি, আমরা জানি না। সেটা বের করবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আমরা সহায়তা করবো।’

জঙ্গিদের কর্মকাণ্ড ও কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের কর্মকাণ্ডের ধরণ এক বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘কয়েকটি সুস্পষ্ট ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের কাছে প্রতীয়মান হয় যে, একটি বড় অপশক্তি ক্রিয়াশীল আছে।’

আন্দোলনকারীদের ফেসবুক লাইভে দেওয়া ভিডিও বার্তাকে উদাহরণ হিসেবে দেখিয়ে উপাচার্য বলেন, ‘আমাকে কয়েকজন সহকর্মী একটি লাইভ ভিডিও দেখিয়েছে। সেই ভিডিও দেখার পর মনে হল, তালেবান-বোকোহারাম জঙ্গিগোষ্ঠী গোপন জায়গা থেকে যেমন ভিডিও বার্তা ছড়িয়ে বিভিন্ন উস্কানি, নাশকতা এবং বিভিন্ন অপপ্রয়াস চালায়, তেমনি তাদের ভিডিওটি ঠিক তারই প্রতিচ্ছবি।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৮তম উপাচার্য বলেন, ‘একটি চেয়ারে বসে, সেখান থেকে বিভিন্ন কর্মপন্থা নির্দেশ দিচ্ছে, কর্মসূচি পালনের অনুরোধ জানাচ্ছে। এই বার্তায় একটা কথা আছে- ‘আমরা মৃত্যুকে ভয় পাবো না।’ খুব কঠিন, কঠিন উগ্র চরমপন্থা, চরম মতার্দশ-ভাবাদর্শ প্রচারের ভিডিও নিজে দেখেছি। এরকম ভিডিও দুই-তিন ঘণ্টা পরপর ছাড়ে।’

কোটা সংস্কার আন্দোলনে বাইরের ‘অপশক্তি’ ঢুকে গিয়ে ষড়যন্ত্র করছে, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আর একটি বিষয় কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বাইরে থেকে অন্যান্য অপশক্তি ঢুকে যাচ্ছে। সেটার প্রমাণ হলো লন্ডন থেকে ফোন দিয়ে এই আন্দোলনকারীদের সাথে যোগাযোগ রেখে এটাকে একটি নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের কাঠামো দেওয়া যায় কিনা সে ব্যাপারে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।’

‘সব কিছু মিলিয়ে রাজনৈতিকভাবে এটাকে উস্কে দিয়ে বিভিন্নভাবে ফায়দা লোটার অপতৎপরতার চেষ্টার তথ্যগুলো আমাদের কাছে আছে। শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনের উপর ভর করে রাজনৈতিকভাবে ফায়দা লোটার অপপ্রয়াস লক্ষ্য করা যাচ্ছে’ বলেও যোগ করেন অধ্যাপক আখতারুজ্জামান।