তরিকুলকে জেলে রেখে ক্লাস-পরীক্ষা নয়: মানববন্ধনে সহপাঠীরা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ৪৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মোঃ তরিকুল ইসলামকে নির্যাতনের প্রতিবাদে এবং তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহারের চেয়ে নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছে বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

৯ জুলাই, সোমবার বেলা ১০টার দিকে কাজী মোতাহার হোসেন ভবনের সামনের সড়কে দাঁড়িয়ে আইন বিভাগের শিক্ষাক্ষার্থীদের ব্যানারে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। মানববন্ধনে সংহতি জানিয়ে বিভাগের শিক্ষকরাও তরিকুলের মুক্তি দাবি করেছেন।

আইন বিভাগের ছাত্র তারিকুলকে গত ২ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে কতিপয় ছাত্র তুলে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবন ভাঙচুর মামলায় কেরানীগঞ্জ থানায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। সহপাঠীকে আটক করায় প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত ফার্স্ট টার্ম পরীক্ষা বর্জন করেছে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

মানববন্ধনে তরিকুলের সহপাঠীরা বলেন, ‘তরিকুলকে জেলে রেখে আমরা ক্লাশ-পরীক্ষায় বসবো না। তাকে অন্যায়ভাবে আটক রাখা হয়েছে। তরিকুলের জন্য আমরা ন্যায় বিচার চাচ্ছি, তার মুক্তি চাচ্ছি।'

মানববন্ধনে সরব উপস্থিতি ছিল ছাত্রীদের, ছবি: প্রতিবেদক

আইন বিভাগের এক ছাত্রী বলেন, ‘তিন দিন নিখোঁজ থাকার পরে আমরা জানতে পারি যে, ওকে কেন্দ্রীয় কারাগারে রেখেছে। গতকালকে জানতে পেরেছি যে, তাকে কয়েক দিনের রিমান্ড দিয়েছে এবং ১০ তারিখ শুনানি হবে। আমরা আইন পড়ে জানতে পারি যে, ‘একজন মানুষকে যখন বন্দী করা হবে তখন অবশ্যই সাথে সাথে তার পরিবারকে জানাতে হবে’। কোন প্রমাণ ছাড়া তরিকুলকে যে নির্যাতন করা হয়েছে আমরা তার নিন্দা জানাচ্ছি এবং মুক্তি কামনা করছি।’

তারিকুলের বাবা সেনাবাহিনীর সাবেক সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার শফিকুল ইসলাম মানববন্ধনে উপস্থিত হয়ে বলেন, ‘আমার ছেলে ঐতিহ্যবাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসেছে। সেন্ট্রাল লাইব্রেরি থেকে আমার ছেলেকে ছাত্রলীগের ছেলেরা ধরে নিয়ে শাহবাগ থানায় দিয়েছে। আমি চারদিন ঘুরাঘুরি করেও তার সন্ধান পাই নাই। পরবর্তীতে গোপন সূত্রে আমি জানতে পারলাম, ও কেন্দ্রীয় কারাগারে আছে। আমার ছেলেকে যেন রিমান্ডের নামে কোন নির্যাতন করা না হয়। আমি এ ঘটনার নিন্দা জানাচ্ছি আর আমার ছেলের মুক্তি দাবি করছি।’

মানববন্ধনে সংহতি জানিয়ে আইন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নাইমা হক বলেন, ‌‘তরিকুল এই বিভাগের শিক্ষার্থী। তাই শিক্ষার্থীদের এই ন্যায্য দাবির সঙ্গে আমরা একমত।’ শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা বর্জনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘পরীক্ষা নিয়ে আমরা কিছু বলছি না। শিক্ষার্থীরা থাকলে পরীক্ষা হবে।’

মানববন্ধনে অংশ নিয়েছেন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা, ছবি: প্রতিবেদক

এ সময় অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমরা শিক্ষকরা প্রস্তুত আছি আমাদের দায়িত্ব পালনের জন্য। এখন শিক্ষার্থীরা যদি না আসে তাহলে আমাদের কিছু করার নেই।’ তারিকুলের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তাকে একটি ন্যায্য দাবির আন্দোলন থেকে মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। এরপরে একটি পুরোনো মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। যেটা পুরোপুরি অসঙ্গতিপূর্ণ। এ রকম একটা ঘটনায় আমরা বিবেকবান মানুষ হিসেবে চুপ করে থাকতে পারি না। তাই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এখানে এসে দাঁড়িয়েছি।’

মানববন্ধনে শতাধিক শিক্ষার্থী বিভিন্ন ধরণের প্ল্যাকার্ড বহন করেন। সেগুলো হলো- তারেকের নিঃশর্ত মুক্তি চাই, মিথ্যা মামলা মিথ্যা মামলা আর কত আর কত? নো ক্লাস নো এক্সাম উইথআউট তারেক, মিথ্যা মামলার নামে প্রহসন বন্ধ কর, মিথ্যা মামলায় আজ তারেক বন্দি, আমি কি নিরাপদ?