‘বহিরাগত’ কী না জানতে চেয়ে হামলা, ঢাবিতে ছাত্রীসহ আহত ২

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ‘বহিরাগত’ সন্দেহে দুই শিক্ষার্থীর ওপর হামলা হয়েছে। হামলাকারীরা সূর্যসেন হল ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে। ১৪ জুলাই, শনিবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার ভবন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। তবে হামলায় আহত দুজনই বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। তারা হলেন- লিনা ও আসাদ।

লিনা টোয়েন্টিফোর লাইভ নিউজপেপারকে বলেন, ‘১০-১২ জন ছেলে আচমকা এসে আমাদের কাছে জানতে চায় আমরা ক্যাম্পাসের কি না? আমরা ক্যাম্পাসের জানালে তারা আমাদের তুই সম্বোধন করে জানতে চায়, কোন ইয়ারে পড়ি, কোন হলে থাকি। আমি আইডি কার্ড দেখানোর পর আমার বন্ধুকেও একইভাবে জেরা করে। আসাদ তখন তাদের পরিচয় জানতে চাওয়া মাত্রই তারা চড় থাপ্পড় দিতে শুরু করে।’

তিনি বলেন, ‘ক্যাম্পাসের পরিচয় দেওয়ার পরেও, হলের নাম বলার পরেও এমন কি আমরা দুজনেই আইডি কার্ড দেখানোর পরেও তারা হামলা করে। আমি আটকাতে গেলে, আমাকেসহ মারতে শুরু করে। ওরা আসলে প্রথম থেকেই মারমুখি আচরণ করতে থাকে। কোন কারণ ছাড়া আমাদের ওপর এভাবে হামলা চালিয়েছে। মেরে চলে যাওয়ার সময় যখন আমার বন্ধু বললো, কেন এভাবে মারলো। তখন আরেক দফা লাঠি দিয়ে মারে। লাঠির আঘাতে আমার পা কেটে রক্তাক্ত হয়েছে। আমরা ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থী, তারপরেও অকারণে এভাবে মারলো।’

মারধর করা শেষে হামলাকারীরা সূর্যসেন হলের মধ্যে চলে যায় বলে জানান তিনি। ক্ষোভের সঙ্গে তিনি বলেন, ‘মল চত্ত্বরে তখন অনেকে খেলছিলো, কেউ বাঁচাতে আসেনি। আমরা হাঁটাহাঁটি করছিলাম। আমার ক্যাম্পাসে আমি হাঁটতে পারবো না? আমি যতক্ষণ না এর বিচার পাব ততক্ষণ আমি কোন চিকিৎসা নেব না।’

অর্থনীতি বিভাগের এই ছাত্রী বলেন, ‘আমার জানা দরকার কেন আমার ওপর হামলা হল? কেন আমি ক্যাম্পাসে অনিরাপদ? তাদের কী অধিকার আছে আমার গায়ে হাত তোলার? এত অনিরাপত্তার মধ্যে কিভাবে চলাচল করবো আমরা? চিনি না জানি না এসে এভাবে হামলা করলো।'

হামলার শিকর আসাদ বলেন, ‘আমরা রেজিস্টার ভবনের সামনে রিকশা নেওয়ার জন্য যাচ্ছিলাম। সেখানে বেশ কয়েকজন ছেলে এসে খুব বাজে আচরণ করে। বাজে আচরণ করার কারণ জানতে চাইলে আমাকে মারধর করে। নীলা আমাকে বাঁচাতে এলে তার ওপরও হামলা চালায়। আমি হামলাকারীদের পরিচয় জানতে সূর্যসেন হলে গেলে সেখানে আমাকে স্ট্যাম্প দিয়ে মারধর করে। আমার মাথায় প্রচণ্ড আঘাত করা হয়েছে।’

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, হামলায় সূর্যসেন হল শাখা ছাত্রলীগের সদস্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আল ইমরান পলাশ, ইংলিশ ফর স্পিকারস অব আদার ল্যাঙ্গুয়েজেস (ইসোল) বিভাগের অর্পন, উইমেন এন্ড জেন্ডার স্টাডিজের সিফাতুল্লাহ এর নেতৃত্বে প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের বেশ কয়েকজন হামলায় অংশ নিয়েছে।

নাহিদ হাসান শাহিন টোয়েন্টফোর লাইভ নিউজপেপারকে  বলেন, ‘ঘটনার সময় আমি ছিলাম না। পরে হলে এসে জেনেছি। প্রভোস্ট স্যার তদন্ত কমিটি করে দিয়েছেন। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ছাত্রলীগের কেউ জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এদিকে রাত ৯টার দিকে ভুক্তভোগী ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরকে হামলার ঘটনা জানালে প্রক্টর পাল্টা প্রশ্নে ‘এত রাত পর্যন্ত বাইরে কেন’ তা জানতে চেয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে প্রক্টর অধ্যাপক একেএম গোলাম রাব্বানি টোয়েন্টফোর লাইভ নিউজপেপারকে বলেন, ‘আমি তাকে বলেছি, এত দেরি করে কেন জানানো হল। ঘটনা সঙ্গে সঙ্গে জানালে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারতাম।’ 

প্রক্টর বলেন, ‘ঘটনা জানার পরপরই প্রক্টরিয়াল টিম ভিক্টিমদের উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে এবং ওই ছাত্রীকে তার হলে পৌঁছে দিয়েছে। সূর্যসেন হলের প্রভোস্টকেও এ বিষয়ে জানানো হয়েছে। জড়িতদেরকে কোন ধরণের ছাড় দেওয়া হবে না।’