হেল্প এইজ ইন্টারন্যাশনালে সংগ্রামী প্রবীণ বাংলাদেশি বদির উদ্দিন

হেল্প এইজ ইন্টারন্যাশনাল প্রবীণদের সঙ্গে এবং প্রবীণদের জন্য কাজ করা বৈশ্বিক একটি সংস্থা। মূলত প্রবীণদের সুরক্ষা এবং তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করে সংস্থাটি। হেল্প এইজ তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইটে বাংলাদেশের প্রবীণ নাগরিক বদির উদ্দিনের একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশ করেছে।

‘না বলা গল্পগুলো: বদির উদ্দিন, বাংলাদেশ’ শিরোনামের সাক্ষাৎকারে তার পরিচয় দিতে গিয়ে বলা হয়, বদির উদ্দিন বাংলাদেশের প্রবীণদের অধিকারের জন্য তাদের সংগঠিত করা, যোগাযোগ স্থাপন, তদবির এবং প্রচার-প্রচারণার কাজ করে থাকেন।

নিজের সম্পর্কে বদির উদ্দিন বলেন, আমি বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলীয় জেলা রংপুরের হাবু গ্রামে বসবাস করি। এটা প্রত্যন্ত এবং কৃষিপ্রধান এলাকা। স্ত্রী এবং এক সন্তানকে নিয়ে থাকছি, সন্তান প্রতিবন্ধী। আমি একজন কৃষক, এটাই আমার একমাত্র আয়ের উৎস। তবে আমি এখন কৃষিকাজের জন্য শারীরিকভাবে সক্ষম নই, টাকায় লোক খাটাতে হয়। সরকার থেকে সামান্য ভাতা পেয়ে থাকি।

প্রবীণদের অধিকার আদায়ের প্রচারণায় নিজের সম্পৃক্ততার কথা বলতে গিয়ে বদির উদ্দিন বলেন, একটি ঘটনা আমাকে বিশেষ করে ক্ষুব্ধ করে। আমার এলাকায় ত্রাণের খাদ্য বিতরণ করা হচ্ছিল। খাদ্য সংগ্রহে সবাই লাইনে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু কিছু বয়োবৃদ্ধ মানুষ দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে না পারে পাশে বসে পড়েন। তাদেরকে ত্রাণ দেয়া হয়নি এবং খাদ্য না নিয়েই তারা বাড়ি ফিরেছিল। আমি ওই দিন খুবই মর্মাহত হয়েছিলাম। তখন আমি প্রবীণদের অধিকার আদায়ে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেই।

তিনি বলেন, ২০১৩ সালে আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবসে হেল্প এইজ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। ওই অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে প্রবীণ মানুষ এবং তাদের অধিকার সম্পর্কে জানতে পারি। এরপর প্রবীণদের একটি সমিতির সঙ্গে যুক্ত হই এবং প্রবীণদের অধিকার রক্ষায় প্রচারণা শুরু করি। আমি মনে করি, প্রবীণরা এতে যুক্ত হলে এবং নিজেদের অধিকারের বিষয়ে প্রচারণা চালালে নীতিনির্ধারকরা শুনবেন।

কেবল বয়স্ক হওয়ার কারণেই নিজের জীবনে বঞ্চনার একটি ঘটনা তুলে ধরে বদির উদ্দিন বলেন, এটা ২০০৯ সালের ঘটনা। আমি একটি রাজনৈতিক দলের কমিটির চেয়ারপারসন ছিলাম। কিন্তু দল পুনর্গঠনের সময় আমাকে কেবল আমার বয়সের জন্য বাদ দেয়া হলো। তরুণদের বেছে নেয়া হলো শুনে আমি মর্মাহত হলাম। আমি বললাম, তোমাদের যখন বয়স হবে, তখন তোমাদের জ্ঞান ও প্রজ্ঞা বাড়বে। কিন্তু তারা আমার কোনো কথা শুনলো না, এমনকি আমার অবদানের কোনো স্বীকৃতিও দিলো না।

অনেক প্রবীণ মানুষ তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা বয়স্ক ভাতার জন্য সঠিক বয়োবৃদ্ধদের নির্বাচন, ইউনিয়ন পরিষদের স্ট্যান্ডিং কমিটিতে প্রবীণদের জন্য পদ রাখা, স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া এবং বিষেশ করে প্রবীণ নারীরা যাতে সমাজ এবং উন্নয়নে অংশ নিতে পারে সেজন্য কাজ করে যাচ্ছি।

প্রবীণ অধিকার আদায়ের এই সংগ্রামী বলেন, এজন্য আমরা চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী গঠন, পরস্পরের যোগাযোগ রক্ষা, তদবির করা, প্রচার-প্রচারণা, সংবাদমাধ্যমে দাবি-দাওয়া তুলে ধরা এবং পলিসি ডায়ালগের মাধ্যমে সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে প্রায় প্রতিবছর দেখা করছি।