সজীব: যারা মিথ্যা সংবাদ ছাপাবে না, তাদের ভয় নেই

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, যে সকল সাংবাদিকের মিথ্যা সংবাদ ছাপানোর উদ্দেশ্য নেই, তাদের ভয়েরও কিছু নেই। রোববার রাতে ভ্যারিফাইড ফেসবুক পেজে প্রধানমন্ত্রীর ছেলে জয় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কিছু অংশের সমালোচনাকারীদের উদ্দেশে তার মতামত ব্যক্ত করেন।

জয় বলেন, সরকারি অফিসের কম্পিউটারে হ্যাকিং এবং গোপনে নজরদারির ক্ষেত্রে আইনের দরকার জনগণের তথ্য ও গোপনীয়তা রক্ষার স্বার্থেই। এই আইনের আগে হ্যাকিং ও তথ্য চুরির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কোনো আইনি ভিত্তি দেশে ছিল না। তাহলে এই আইনের সাহায্য ছাড়া কিভাবে হ্যাকিং ও তথ্য চুরির বিচার হবে?

জনগণের জাতীয় পরিচয়পত্রসহ নাগরিকদের অনেক রকম তথ্য সরকারি কম্পিউটারে সংগৃহীত থাকে জানিয়ে তিনি বলেন, ব্যাংক হিসাব, স্বাস্থ্য বিষয়ক তথ্য, জমির রেকর্ড সবকিছুই আজকাল ডিজিটালাইজ করে সংগ্রহ করা হচ্ছে। এগুলো যদি হ্যাক করা হয়, তার দায়ভার কে নেবেন? দায় কিন্তু তখন সরকারের উপরই আসবে। তাই, তথ্য প্রযুক্তি উপদেষ্টা হিসেবে আমি এই আইন প্রণয়নের সুপারিশ করি হ্যাকিং ঠেকানোর জন্য।

এই আইনের মাধ্যমে সাংবাদিকদের কাজ কঠিন হবে স্বীকার করে সজীব বলেন, কিন্তু কারো দুর্নীতি ফাঁস করার জন্য একজন সাংবাদিকের কি সরকারি অফিসের কম্পিউটার হ্যাক করে নাগরিকদের সংবেদনশীল তথ্য চুরির অধিকার থাকা উচিত?

যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নেও বেআইনিভাবে সাংবাদিকদের তথ্য সংগ্রহ করার সুযোগ দেয় না উল্লেখ সকরে তিনি বলেন, সরকারি অফিসে গোপনে নজরদারি করা সবদেশেই আইনবহির্ভূত, সাংবাদিকদের জন্যও। সাংবাদিকদের তাদের তথ্য অন্যান্য সূত্র থেকে জোগাড় করতে হয়।

তিনি বলেন, প্রেস ক্লাব, সম্পাদক পরিষদসহ সাংবাদিকদের কোনো সংগঠনই কিন্তু তাদের নিজেদের নৈতিকতার সনদ বা আচরণবিধি প্রয়োগ করতে পারেননি। সম্পাদক পরিষদের বর্তমান প্রধান মাহফুজ আনাম, যিনি টেলিভিশনের পর্দায় স্বীকার করেছেন ১/১১ এর সময় আমাদের প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মিথ্যা ও উদ্দেশ্যমূলক সংবাদ প্রচারের কথা।

তিনি আরো বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে হলে তাকে বাধ্য করা হতো সাংবাদিকতা পেশা থেকে পদত্যাগ করতে। শুধু তাই নয়, তাকে আর কোনোদিন সম্পাদক বা সাংবাদিক হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হতো না। বাংলাদেশে কিন্তু সম্পাদক পরিষদ উল্টো তার পক্ষ নিয়েই তাকে তাদের জেনারেল সেক্রেটারি নির্বাচিত করেছে। বিষয়টি আমাকে অবাক করে। যেহেতু, ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্র মিশন এই আইন নিয়ে তাদের মতামত তুলে ধরেছে, আমি আশা করবো তারা মাহফুজ আনামের স্বীকারোক্তির পরেও একটি প্রথম সারির পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বরত থাকা নিয়েও তাদের মতামত জানাবেন। তা নাহলে, তাদের কার্যকলাপ হবে একপেশে ও আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার শামিল।

এ বিষয়ে সম্পাদক পরিষদের নৈতিকতা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী তথ্য প্রযুক্তি উপদেষ্টা বলেন, পরিষ্কারভাবেই, তাদের নৈতিকতা বলে কিছু নেই। বস্তুতঃ সম্পাদক পরিষদ বলতে চায়, তাদেরকে সরকারের বিরুদ্ধে নোংরা, মিথ্যা প্রচারণা চালাতে দিতে হবে এবং সত্য অবলম্বন না করেই তাদের অপছন্দের রাজনীতিকদের সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করতে দিতে হবে। তারা যদি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এমন পরিকল্পনা করেন, তাহলে দেশের ভবিষ্যত কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়?

তিনি আরো বলেন, যেহেতু গণমাধ্যমের সম্পাদকেরা তাদের নিজেদের তৈরি নৈতিক নির্দেশনাই মানতে রাজি নন, তাহলে আমরা সত্য-মিথ্যা নির্ধারণের ভার আদালতের হাতেই তুলে দেই। গ্রেপ্তার মানেই জেল নয়। সরকারের প্রমাণ করতে হবে যে আসামি জেনেশুনে মিথ্যা তথ্য প্রকাশ করেছেন। প্রমাণের দায়ভার সরকারের। যেসকল সাংবাদিকের মিথ্যা সংবাদ ছাপানোর উদ্দেশ্য নেই, তাদের ভয়েরও কিছু নেই।

সজীব বলেন, সম্পাদক পরিষদ যদি এসকল ধারার সংশোধন চান, তাহলে তাদের নিজেদের নৈতিকতার নীতিমালা বাস্তবায়ন করতে হবে। যে সম্পাদক বা সংবাদকর্মী মিথ্যা সংবাদ ছেপেছেন, তাকে অবশ্যই দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিতে হবে এবং ভবিষ্যতে যাতে আর কোনদিন সংবাদ তৈরি বা প্রচারের কাজ করতে না পারেন সেই ব্যবস্থা করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, যেসব কূটনৈতিক মিশন এই আইনটি নিয়ে আপত্তি তুলেছেন তাদেরকে আমি একটি প্রশ্ন করতে চাই: সাংবাদিকরা কি আপনাদের দূতাবাসের ভেতরে গোপনে নজরদারি করার যন্ত্রপাতি নিয়ে আসতে পারবেন?

এসবের বিরুদ্ধে আইন থাকার ওপর গুরুত্বারোপ করে সজীব বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতিকরণ ধারাটির বিষয়ে যাদের আপত্তি রয়েছে, তারা আসলে বাঙালি নন। তারা গোপনে জামায়াত সমর্থক রাজাকার।

হলোকাস্ট ডিনায়াল আইন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের হলোকাস্ট ডিনায়াল আইনের উপর ভিত্তি করেই এই ধারাটি প্রণয়ন করা হয়েছে। ১৬টি ইউরোপিয়ান দেশে হলোকাষ্টে “স্বীকৃত সংখ্যা” থেকে কম মানুষ মারা গিয়েছে এই কথা বললেও কারাদণ্ড দেয়া হয়। এর মধ্যে অনেক দেশ আছে যাদের দূতাবাসগুলো বাংলাদেশে আমাদের এই আইন নিয়ে আপত্তি তুলেছে।

এই আনের আওতায় ধর্ম প্রসঙ্গে সজীব বলেন, আইনের কিছু অংশ অনলাইনে মিথ্যা বা গুজবের মাধ্যমে সহিংসতা বা ধর্মীয় উন্মাদনা উস্কে দেয়ার বিরুদ্ধে। আপনাদের মনে আছে, রামুতে, ফেসবুকে পবিত্র কোরানের পুড়িয়ে দেয়ার মিথ্যা পোস্টের মাধ্যমে পুরো একটি বৌদ্ধ অধ্যুষিত গ্রামে আক্রমণ চালিয়ে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছিল। এই ধরনের ঘটনা আমাদের দেশে একাধিকবার ঘটেছে। অতিসম্প্রতি ছাত্রদের আন্দোলনের সময়ও আমরা দেখেছি কিভাবে অনলাইনে গুজব রটানোর মাধ্যমে সহিংসতা উস্কে দেয়া হচ্ছিলো। এই আইন ছাড়া আমরা এই ধরণের সহিংসতা উস্কে দেয়ার ঘটনাগুলো কিভাবে প্রতিহত করবো? ইউএনবি।