আপনি পড়ছেন

কে জানতো চরাঞ্চলে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর শিশুদের শিক্ষালাভে বাংলাদেশি এক তরুণের উদ্যোগ আজ বিশ্বের মডেল হবে। কিন্তু সেটিই বাস্তব। বাংলাদেশের পাবনা, সিরাজগঞ্জ ও নাটোরের তিন জেলাজুড়ে বিশাল একটি বিলের নাম ‘চলনবিল’। এই বিলে বছরের ৭ মাস পানি থাকে। এতে বছরের বেশির ভাগ সময় চলনবিল অঞ্চলের শত শত স্কুল বন্ধ হয়ে যায়। বিলের পানি গ্রামে উঠে গেলে এ অঞ্চলের হাজার হাজার শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

floating school

এ সব শিক্ষার্থীর কথা বিবেচনা করে ২০০২ সালে চলনবিলের শিশুদের পড়ালেখার বিকল্প হিসেবে পরীক্ষামুলকভাবে ‘ভাসমান স্কুল’ তৈরি করেন বিল এলাকার তরুণ বাসিন্দা নাটোরের গুরুদাসপুরের রেজওয়ান। তার উদ্যোগের সফলতায় দেশের চরাঞ্চলে এবং বিভিন্ন দেশে ‘ভাসমান স্কুল’ পরিচালিত হচ্ছে। যা ‘নৌকাস্কুল’ নামে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছে।

জলবায়ুর ঝুঁকিতে থাকা বিশ্বের বহু দেশ আজ রেজওয়ানের এই উদ্যোগ গ্রহণ করছে। তার উদ্যোগ, চিন্তা ও ধারণা নিয়ে ভারত, চীন, কম্বোডিয়া, নাইজেরিয়া, ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম ও জাম্বিয়ার মতো দেশ চরাঞ্চল, নদীবিধৌত অঞ্চল ও উপকূলীয় এলাকায় ‘ভাসমান স্কুল’ চালু করছে। শুধু তাই নয়- যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, স্লোভানিয়ার মতো উন্নত দেশের প্রাথমিক শিক্ষার পাঠ্যক্রমেও যুক্ত হয়েছে রেজওয়ানের এই স্কুল ভাবনা।

floating school 1

‘ভাসমান স্কুলের’ প্রতিষ্ঠাতা রেজওয়ান জানান, ২০০২ সালে চলনবিলের স্কুল শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার বিষয়ে বিকল্প স্কুল হিসেবে এই ‘ভাসমান স্কুলের’ চিন্তা তার মাথায় আসে। এরপর নিজের স্কলারশিপের মাত্র ৫০০ মার্কিন ডলার ও একটি ল্যাপটপ দিয়ে স্কুলের যাত্রা শুরু করেন তিনি। প্রথমে একটি ‘নৌকাস্কুল’ করে শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের ব্যাপক সাড়া পান। পরে এর পরিধি বাড়াতে নিজ উদ্যোগে ‘স্বনির্ভর সংস্থা’ নামে একটি অলাভজনক উন্নয়ন ও স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন গড়ে তোলেন।

প্রথম এক বছর তিনি বিভিন্ন স্থানে ই-মেইল করতে থাকেন সাহায্যের আশায়। তার এই ধারণা খুবই পছন্দ করে ‘বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন’ নামের একটি বিদেশি সংস্থা। সেখান থেকে পেয়ে যান পাঁচ হাজার মার্কিন ডলার অনুদান। তারপর থেকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি এই স্বেচ্চাসেবি সংগঠককে। এরপর থেকেই প্রতিবছর বাড়তে থাকে নৌকায় তৈরি ‘ভাসমান স্কুলের’ সংখ্যা।

রেজওয়ান বর্তমানে তার গড়া স্বেচ্ছাসেবি ‘স্বনির্ভর সংস্থার’ চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, তার আইডিয়া (ধারণা) নিয়ে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন এনজিও এর কার্যক্রম শুরু করেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ঝুঁকিতে থাকা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তার মডেল বাস্তবায়ন করছে।

তিনি বলেন, নৌকা স্কুলের ছাদে বসানো হয়েছে সৌরবিদ্যুৎ প্যানেল। এই বিদ্যুতে সন্ধ্যার পরও স্কুলের কার্যক্রম চালানো হয়। গ্রামেও আলো দেয়া যায়। সাধারণ বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষের মতোই নৌকার ভেতরে শ্রেণিকক্ষ। এছাড়া পাঠাগার, কম্পিউটার ল্যাব সবকিছুই সংযুক্ত। শুধু তাই নয়, নৌকাস্কুলগুলো চলনবিলের ভূমিতে স্থাপন করা সরকারি স্কুলগুলোর চেয়ে আরও বেশি আধুনিক। ভাসমান এসব স্কুলে কম্পিউটারসহ শিক্ষায় ব্যবহৃত ইলেকট্রনিকস অনেক ডিভাইস দ্বারা সুসজ্জিত।

একটি নৌকাস্কুলের দৈর্ঘ্য ৫৫ ফুট ও প্রস্থ ১১ ফুট। এক সঙ্গে ৩০ জন শিশু পাঠ নিতে পারে একটি স্কুলে। শিশু থেকে ৪র্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পাঠ দান করানো হয়। একই নৌকায় তিনটি শ্রেণির শিক্ষার্থীদের তিন সময় ভাগ করে ক্লাস নেয়া হয়। শুধু তাই নয়, শিশুদের পাশাপাশি তাদের মাধ্যমিক স্কুল, কলেজের শিক্ষার্থীরা এমনকি লেখাপড়া জানা অভিভাবকরাও কম্পিউটারসহ তথ্য-প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত হচ্ছেন।

‘স্বনির্ভর সংস্থার’ পরিচালক সুপ্রকাশ পাল জানান, চলনবিল অঞ্চলের চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া ও ফরিদপুর উপজেলার ২২টি ইউনিয়নের প্রায় এক হাজার শিশুকে ‘ভাসমান স্কুলে’ শিক্ষা দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি প্রতিটি ইউনিয়নে সপ্তাহে একদিন করে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ও কৃষিসেবা দেয়া হয়।

তিনি বলেন, বিনামূল্যে শিক্ষা ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা, সে সঙ্গে ৩৬ প্রকারের ওষুধও বিনামূল্যে দেয়া হচ্ছে। তিনটি নৌকায় সপ্তাহে একদিন একজন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ এবং প্রতিটিতে তিনজন করে স্বাস্থ্য সহকারী থাকেন।

সংস্থাটির পরিচালক জানান, সংস্থার নিয়ন্ত্রণে ২২টি ভাসমান স্কুল ৬৬ শিফটে পরিচালিত হচ্ছে। ২০০ শিক্ষক-কর্মচারী বেতনভুক্ত কাজ করছে। প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করতে ৭০ জন নারী শিক্ষক রয়েছেন। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত পাঠদান চলে। প্রতিটি নৌকায় তিনজন শিক্ষক, একজন মাঝি ও একজন কম্পিউটার অপারেটর থাকেন।

তিনি বলেন, এ পর্যন্ত ২২টি ভাসমান স্কুল থেকে ১৪ হাজার শিক্ষার্থী পাশ করে বের হয়ে বিভিন্ন স্কুল কলেজে ভর্তি হয়েছে। অনেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন।

জানা গেছে, ভাসমান স্কুল উদ্ভাবন ও বাস্তবায়নে ইতিমধ্যেই উদ্যোক্তা রেজওয়ান ১৫টি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন। পুরস্কারের অর্থে নৌকাস্কুলগুলোতে সৌরবিদ্যুতের মাধ্যমে গ্রামও আলোকিত করার প্রকল্প নিয়েছে স্বনির্ভর সংস্থা। এছাড়া ভাসমান স্বাস্থ্য ক্লিনিক ও কৃষি বিষয়ক ট্রেনিং সেন্টারের কাজও করছে এই এসব ভাসমান নৌকাস্কুল গুলোতে।

ভাসমান স্কুলের সফল উদ্যোক্তা ও স্বনির্ভর সংস্থার চেয়ারম্যান রেজওয়ান বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ভবিষ্যতে তলিয়ে যেতে পারে অনেক জনপদ। এছাড়া বাংলাদেশসহ বন্যাকবলিত বিভিন্ন দেশের জলমগ্ন অঞ্চলে জীবনযুদ্ধ একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। ভাসমান স্কুলকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এখন একটি মডেল হিসেবে দেখা হচ্ছে।

তিনি বলেন, বর্তমানে ‘যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, স্লোভানিয়ার মতো উন্নত দেশের প্রাথমিক শিক্ষার পাঠ্যক্রমে যুক্ত হয়েছে এই স্কুল ভাবনা। তবে শুধু ভাসমান স্কুলেই থেমে থাকেনি সংস্থাটির কার্যক্রম। এখন ভাসমান স্বাস্থ্য ক্লিনিক ও কৃষি বিষয়ক ট্রেনিং সেন্টারের কাজও করছে এই নৌকাগুলো। তিনি শিক্ষা বিস্তার যুদ্ধে সফল হতে চান। এজন্য সব শ্রেনি পেশার মানুষের সহযোগিতা কামনা করেন। ইউএনবি।

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.