ঘ ইউনিনের ভর্তি পরীক্ষায় তেলেসমাতি কারবার

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলে তেলেসমাতি কাণ্ড ঘটেছে। শুরু থেকেই প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে অভিযুক্ত এই ইউনিটের পরীক্ষা নিয়ে নানা ধরণের অভিযোগ ছিল। নানা অভিযোগের মধ্যেও গত মঙ্গলবার ঘ ইউনিটের ফল প্রকাশ হয়। এতে এবার ২৬.২১ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছেন।

১২ অক্টোবর পরীক্ষার দিন সকালেই ঘ ইউনিটের প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ ওঠে। গুরুতর অভিযোগের মধ্যেই ফলাফল প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। প্রকাশিত ফলাফলে মেধাতালিকায় থাকা কিছু শিক্ষার্থীর ঘ ইউনিট ও তাদের নিজ ইউনিটের ফলাফলে ব্যাপক পার্থক্য দেখা গেছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঘ ইউনিটে প্রথম হওয়া পরীক্ষার্থী তার নিজের ইউনিটে ফেল করেছেন।

অনুসন্ধানে আরো অবাক করা তথ্য জানা গেছে। ঘ ইউনিটে মেধাতালিকায় থাকা প্রথম ১০০ জনের মধ্যে প্রায় ৭০/৮০ জন শিক্ষার্থী তাদের নিজ নিজ অনুষদের ভর্তি পরীক্ষায় ফেল করেছেন। রাতারাতি পরীক্ষায় ঈর্ষণীয় সাফল্য পাওয়ার কারণে স্বাভাবিকভাবেই ঘ ইউনিটের ফলাফল প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।

এবার ঘ ইউনিটে ব্যবসায় শাখা বিভাগে প্রথম স্থান অধিকার করেছেন জাহিদ হাসান আকাশ। অথচ ব্যবসায় শিক্ষা শাখার এই শিক্ষার্থী তার নিজের গ ইউনিটের পরীক্ষায় ফেল করেছিলেন। গ ইউনিটের পরীক্ষায় আকাশ বাংলায় পেয়েছিলেন ১০.৮, ইংরেজিতে পেয়েছিলেন ২.৪০। অথচ এই আকাশই রাতারাতি কীভাবে পড়লেন যে, ঘ ইউনিটে বাংলায় পেলেন ৩০-এর ৩০, ইংরেজিতে পেলেন ৩০-এ ২৭.৩০।

ব্যবসায় শিক্ষা শাখার এই শিক্ষার্থী তার নিজের গ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় ১২০ নম্বরের মধ্যে পেয়েছিলেন মাত্র ৩৪.৩২ (ফেল)। আর ঘ ইউনিটের পরীক্ষায় ১২০ নাম্বারের মধ্যে পেলেন ১১৪.৩০। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গত ২০ বছরের রেকর্ড। বাণিজ্য শাখায় দ্বিতীয় স্থান অধিকারকারী পেয়েছেন ৯৮.৪০। প্রথম এবং দ্বিতীয়-এর মধ্যে নাম্বারের এমন পার্থক্য নজিরবিহীন।

ঢাবির ঘ ইউনিটে বিজ্ঞান বিভাগে প্রথম হয়েছেন তাসনিম বিন আলম। বিজ্ঞান শাখার তাসনিম তার নিজের অনুষদ ক ইউনিটে পেয়েছিলেন ১২০ নম্বরের মধ্যে ৪৩.৭৫ (ফেল)। সেই একই ছাত্র ঢাবি ঘ ইউনিটে ১২০ নম্বরের মধ্যে পেলেন ১০৯.৫০। এমন অবস্থা শুধু আকাশ আর তাসনিমের ক্ষেত্রেই নয় ঘ ইউনিটের মেধা তালিকায় থাকা প্রথম ১০০ জনেরই রেজাল্টের তারতম্য এমন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামানের কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'পরীক্ষা জালিয়াতি হলে কোন ছাড় দেয়া হবে না। জালিয়াতির ঘটনা যখন যে অবস্থাতেই চিহ্নিত হবে, তখনই ভর্তি বাতিলসহ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।'