মায়ের কোলই আইয়ুব বাচ্চুর শেষ ঠিকানা

মায়ের কোলেই চিরনিদ্রায় শায়িত হবেন বাংলা ব্যান্ড সঙ্গীতের কিংবদন্তী সংগীতজ্ঞ আইয়ুব বাচ্চু। শনিবার চট্টগ্রামের এনায়েত বাজারে পারিবারিক কবরস্থানে মায়ের কবরে তাকে দাফন করা হবে। এর আগে শুক্রবার বাদ জুমা জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে মরহুমের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এ তথ্য জানিয়েছেন আইয়ুব বাচ্চুর পরিবার।

আইয়ুব বাচ্চুর সহকর্মী ও সাংস্কৃতিক জোটের নেতারা জানান, আইয়ুব বাচ্চুর প্রতি সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় তার মরদেহ জাতীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে নেয়া হবে। জুমার নামাজের আগে সেখান থেকে তার কফিন জানাজার জন্য জাতীয় ঈদগাহ মাঠে নেয়া হবে। এরপর তার মরদেহ স্কয়ার হাসপাতালের হিমাগারে রাখা হবে।

এদিকে শুক্রবার রাতেই আইয়ুব বাচ্চুর মেয়ে রাজকন্যার অস্ট্রেলিয়া থেকে ঢাকায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে। তিনি ঢাকার ফেরার পর মরদেহ নিয়ে চট্টগ্রামের এনায়েত বাজারের উদ্দেশ্যে রওনা হবেন। এরপর আরেকবার জানাজা শেষে শনিবার সকালে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হবে।

এর আগে বৃহস্পতিবার সকাল নয়টায় রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন আইয়ুব বাচ্চু। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৫৬ বছর। বর্তমানে তার মরদেহ স্কয়ার হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।

জনপ্রিয় এই শিল্পীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা কিংবা ভারতের কলকাতার সঙ্গীতশিল্পী অনুপম রায়ও কিংবদন্তির মৃত্যুকে শোক প্রকাশ করেছেন।

আইয়ুব বাচ্চু দীর্ঘদিন ধরে হৃদযন্ত্রের অসুস্থতায় ভুগছিলেন। হার্টের ৩০ শতাংশ কার্যক্ষমতা নিয়ে স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন তিনি।

১৯৬২ সালের ১৬ আগস্ট চট্টগ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে আইয়ুব বাচ্চু জন্মগ্রহণ করেন। নব্বইয়ের দশক থেকে সঙ্গীত চর্চা শুরু করেন তিনি। ক্যারিয়ার শুরুর কিছুদিনের মধ্যেই গিটারের অবিশ্বাস্য দক্ষতা দেখিয়ে কোটি দর্শককে মাতাতে শুরু করেন। আইয়ুব বাচ্চু গান গাওয়ার পাশাপাশি সুর করা, গিটার বাজানোতেও সমান দক্ষ ছিলেন।

১৯৯২ সালে আইয়ুব বাচ্চুর ব্যান্ড এলআরবির প্রথম অ্যালবাম রিলিজ হয়। ২০১২ সালে রিলিজ হয় এলআরবির সর্বশেষ অ্যালবাম যুদ্ধ। ব্যান্ডের বাইরে বহু একক সঙ্গীতও করেছেন আইয়ুব বাচ্চু। দেশ-বিদেশের বহু ব্যান্ড ও শিল্পীর সাথে লাইভ কনসার্টেও সুরের মূর্ছনা ছড়িয়েছেন তিনি।

আইয়ুব বাচ্চুর বিখ্যাত গানের মধ্যে রয়েছে ‘চলো বদলে যাই’, ‘রুপালি গিটার’, ‘হাসতে দেখো, গাইতে দেখো’ ইত্যাদি। হার্ড রক, ব্লুজ, সফট রক, অল্টারনিভ রক ঘরানার এই সঙ্গীতশিল্পী দেশের বাইরেও সমান জনপ্রিয় ছিলেন। তার মৃত্যুতে সঙ্গীতাঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

তার মৃত্যুতে বাংলাদেশের সঙ্গীত জগত সত্যিকার অর্থে একজন অভিভাবক হারালো। তার মাধ্যমে বাংলাদেশের ব্যান্ড সঙ্গীত জগতের একটি বর্ণাঢ্য অধ্যায়েরও সমাপ্তি ঘটলো।