আইসিইউতে অচেতন নার্গিসের সঙ্গে সেলফি তুলে সমালোচনায় আ.লীগ নেত্রীরা

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা বদরুলের চাপাতির আঘাতে ক্ষতবিক্ষত সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী খাদিজা আক্তার নার্গিস। অপারেশনের পর স্কয়ার হাসপাতালের আইসিইউতে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে মেয়েটি। সেই নার্গিসকে আইসিইউ-তে তাকে দেখতে গিয়ে সেলফি তুললেন 'কড়া' সাজের তিন আওয়ামী লীগ নেত্রী। এরপর থেকেই বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়।

গতকাল বুধবার গুরুতর আহত নার্গিসকে দেখতে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালের আইসিইউতে যান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের তিন নারী নেত্রী। সেখানে গিয়ে ছবি তুলেই সমালোচনায় বিদ্ধ হন তারা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবিতে দেখা যায়, যিনি ছবিটি তুলছেন তার ঠোঁটে গাঢ় লিপস্টিক ও গায়ে আইসিউইউ গাউন। তার সঙ্গে থাকা দুজনও আইসিইউ-এর অ্যাপ্রোন পরিহিত অবস্থায় আছেন। আর তাদের ঠিক পেছনেই অচেতন খাদিজা আক্তার নার্গিস।

মৃত্যুর সঙ্গে লড়তে থাকা খাদিজাকে দেখতে গিয়ে তারা পরিবেশ-পরিস্থিতি বিবেচনা না করেই হাল আমলের ক্রেজ 'সেলফি' তোলেন ওই তিন নারী নেত্রী। ছবিটি তোলেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য সাবিনা আক্তার তুহিন। সঙ্গে ছিলেন যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সাংসদ অপু উকিলসহ আরেকজন নারী নেত্রী। পরে সেই ছবিটি বুধবার সন্ধ্যায় নিজের ফেসবুক ওয়ালে পোস্ট করেন সাবিনা আক্তার তুহিন। এরপরই শুরু হয় তুমুল সমালোচনা।

আইসিইউ (ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট)-এর মতো স্পর্শকাতর জায়গায় তোলা ছবিটি নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন, ভর্ৎসনা করেছেন বিশিষ্টজনসহ জনসাধারণ। বিষয়টি নিয়ে যুদ্ধাপরাধীর বিচারের দাবিতে শাহবাগ থেকে গড়ে ওঠা আন্দোলন 'গণজাগরণ মঞ্চে'র মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার তার অফিসিয়াল ফেসবুক পাতায় নেত্রীদের তোলা ছবিটি পোষ্ট করে ক্যাপশন দিয়েছেন, 'আইসিইউতে খাদিজার সাথে ছাত্রলীগ নেতা বদরুলের নেত্রীদের সেলফি..... আসুন আমরা লজ্জায় মরে যাই।'

মুকিমুল আহসান হিমেল নামের এক গণমাধ্যমকর্মী ছবি দুটি পোষ্ট করে ক্যাপশন দিয়েছেন, 'ছাত্রলীগের কেউ একজন কুপিয়েছে তো কি হয়েছে, আওয়ামী লীগের মহিলা এমপিরা তো দেখতে গিয়েছে। একে খাদিজার সাথে সেলফি বলে তাদের বিব্রত করবেন না, এ তাদের ভালবাসার তৈলচিত্র!!'

রম্য লেখক ইশতিয়াক আহমেদ লিখেছেন, 'প্রিয় নেত্রীগন, আপনাদের সেলফিতে স্থান পেয়ে খুব ভালো লাগছে। আমার কোনো ক্ষমতা ছিলোনা বলে বদরুল এভাবে মেরেছে। এখন নিশ্চয়ই সে ভয় পাবে। তার কেন্দ্রীয় নেত্রীরা আমার পাশে। আমার জন্য দোয়া করবেন, আপনারা। - খাদিজা' অনেকে এভাবেই তাদের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।

সমালোচনার মধ্যেই সাংসদ সাবিনা আক্তার তুহিন সেই সেলফিটি নিজের ওয়াল থেকে সরিয়ে নেন। রাত সাড়ে ১২টার কিছু সময় ১১টি ছবি আপলোড করেন। ছবিগুলো মূলত বিভিন্ন সময় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে আওয়ামী লীগের নারী কর্মীদের সংঘর্ষ কিংবা নির্যাতনের ছবি।

ছবিগুলোর ক্যাপশনে সংসদ সদস্য তুহিন লিখেছেন— 'যখন বিএনপি-জামায়াতের অত্যাচারের এই ছবিগুলো দেই তখন শেয়ার হয় না ইমরান এইচ সরকারদের কাছে। আমরা আওয়ামী লীগের নারী কোন প্রতিবাদ হয় নাই কখনও। আমরা ভুক্তভোগী তাই নারীর কষ্ট বুঝি, তাই পাশে গিয়েছি। ছবিটি যদিও সেলফি না ছোট ভাই শাহাদাতের তোলা। মনে হচ্ছে, কতগুলো খুন করেছে আর যে খাদিজাকে না বাঁচিয়ে ভিডিও করলো এ ব্যপারে সবাই নিশ্চুপ। বেগম জিয়া সারা বছর গোলাপী লিপিষটিক দেয় এটা চোখে পড়ে না উনি তারপরও খাঁটি মুসলিম। আমরা ভদ্র ড্রেস পরে গেছি তারপরও কত কথা।'

এ বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে সাবিনা আক্তার তুহিনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া গেছে। ফোন ধরেননি অপু উকিল। পরে ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও কোন জবাব আসেনি। তবে একটি অনলাইন গণমাধ্যমকে তিনি বলেছেন, 'খাদিজা মারা গেছে-এ রকম অপপ্রচার চালানো হচ্ছিল। আজকে আমরা দেখতে গেছি, সে যে সুস্থ হয়ে উঠছে তা বোঝাতে ফেইসবুকে ছবি দিয়েছে তুহিন।'

আপনি আরো পড়তে পারেন

প্রধানমন্ত্রী: চাল বিতরণ কর্মসূচিতে অনিয়ম হলেই ব‌্যবস্থা

মির্জা ফখরুল: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো এখন ছাত্রলীগের কার্যালয়

ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে ৪ পুলিশ প্রত্যাহার

সন্ত্রাসবাদ ছেড়ে আত্মসমর্পণ করছেন 'জঙ্গিরা'

বাংলাদেশ থেকে ইলিশ মাছ নিতে চায় থাইল্যান্ড