সিনেমা হল অথবা বিকেলের আড্ডা, খেতে খেতে সময় পার করার জন্য জনপ্রিয় খাবার পপকর্ন। যুক্তরাজ্যে খাবারটি ঐতিহ্যগতভাবে প্রচলিত থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্বব্যাপী পপকর্নের চাহিদা বেড়েছে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান মিন্টেলের ২০১৬ সালের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ব্রিটেনে গত ৫ বছরে পপকর্ন বিক্রির পরিমাণ ১৬৯ শতাংশ বেড়েছে।

popcorn in bowl

কিন্তু এই পপকর্নের উদ্ভাবনের ইতিহাস কি? ইন্টারনেট ঘেটে দেখলে বিভিন্ন ধরণের উত্তর পাওয়া যাবে। আদিবাসী মার্কিনিদের ধারণা মতে, থ্যাঙ্কসগিভিং বা ধন্যবাদ জানানোর মাধ্যম হিসেবে এই খাবারের প্রচলন শুরু হয়। আবার এমনও শোনা যায়, আমেরিকায় উপনিবেশবাদীরা সকালের নাস্তায় পপকর্ন খেতে অভ্যস্ত ছিল। তবে এসব মতের পক্ষে কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। পপকর্ন উদ্ভাবনের আসল ঘটনাটি বেশ কৌতুহলোদ্দীপক।

আমেরিকায় পৌঁছানোর অনেক আগে থেকেই ইউরোপের মানুষ পপকর্নের সঙ্গে পরিচিত ছিল। প্রত্মতাত্ত্বিকেরা আমেরিকার ভূখন্ডের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এবং দক্ষিণাঞ্চলীয় বিভিন্ন গুহা ও বসবাসের স্থানে পপকর্নের অস্তিত্ব পেয়েছেন।

একবার ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেনের প্রতিষ্ঠাতা থমাস হার্পার গুডস্পিডের জন্য চিলির এক প্রত্নতত্ত্ববিদ প্রাচীন অনেকগুলো ভুট্টার দানা পাঠিয়েছিলেন।১৯৪১ সালে নিজের ‘প্লান্ট হান্টার্স ইন দ্য অ্যান্ডিস’ বইতে হার্পার লিখেন, 'এক সন্ধ্যায় ঘরে বসে আমি ইনকা সভ্যতা পূর্ববর্তী সেই পপকর্নের দানাগুলো একটি টিনের পাত্রের ওপর রেখে বৈদ্যুতিক স্টোভে গরম করতে থাকি। আশ্চর্য হয়ে দেখলাম, হাজার বছরের পুরোনো ভুট্টার দানাগুলো শব্দ করতে শুরু করে। দেখে মনে হচ্ছিল, দানাগুলো গত বছরের শস্য, কোন প্রতিবেশি আমাকে খেতে দিয়েছেন।

পপকর্নের শক্ত দানাগুলো ভুট্টার বাইরের অংশে আবৃত থাকে। দানার বাইরের আবরণ অন্যান্য শস্যের তুলনায় চারগুণ শক্ত হওয়ার কারণেই পপকর্ন তৈরি করা সম্ভব হয়। ভুট্টার দানার বাইরের আবরণ এরূপ শক্ত হওয়ায় এটি পুড়ে না গিয়েও দানার ভেতরে তাপ পৌঁছে দিতে পারে। ক্রমশ তাপমাত্রা বাড়তে থাকলে দানার ভেতরে থাকা এক প্রকার তরল পদার্থ বাষ্পে পরিনত হতে থাকে। দানার ভেতরে সৃষ্টি হওয়া এই বাষ্প এক পর্যায়ে বাইরের আবরণে চাপ সৃষ্টি করে।

তাপমাত্রা বাড়ার সাথে সাথে চাপও বাড়তে থাকে। ২০০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় বায়ুমণ্ডলের স্বাভাবিক চাপের চেয়ে ভেতরের চাপ নয়গুণ বেড়ে গেলে ওই আবরণটি ফেটে যায়। এরপরই দানাগুলো বড় আকার ধারণ করতে শুরু করে।

বিজ্ঞানীরা পরবর্তীতে দেখেন, কোন বায়ুশুন্য পাত্রে ভুট্টার দানায় তাপ দেয়া হলে পপকর্নগুলো দ্বিগুণ আকার ধারণ করে।

সর্বপ্রথম ১৮৮৫ সালে পপকর্ন তৈরির যন্ত্র দেখা যায়। ইলিনয়ের একজন কেক প্রস্তুতকারক চার্লস ক্রেটরস যন্ত্রটি উদ্ভাবন করেন। তিনি প্রথমে বাদাম ভাজার চুলা দিয়ে পরীক্ষা চালিয়েছিলেন। স্টিম ইঞ্জিনের সাহায্যে প্রথম দিককার পপকর্নগুলো তিনিই তৈরি করতেন। সেসময় চর্বি এবং মাখনের মিশ্রণ ঘটিয়ে ভুট্টার দানাগুলোকে তাপ দেয়া হতো। নাম রাখা হয়েছিল রোস্টি টোস্টি। পপকর্নগুলো দেখতে খুবই বাজে ছিল।

খাদ্য ইতিহাস লেখক অ্যান্ড্রু স্মিথ ১৮৯৩ সালে তার ‘পপড কালচার’ বইয়ে ক্রেটরর্সের পপকর্ন বানানোর গাড়িটির কথা উল্লেখ করেছেন। সেখানে তিনি লেখেন, 'আমি আর আমার সহকারি 'ওয়ার্ল্ডস ফেয়ার' মেলায় চিৎকার করেছিলাম: নতুন স্বাদ উপভোগ করুন। মাখনে মাখানো পপকর্ন-নতুন উদ্ভাবন! বিনামূল্যে নিয়ে যান এক প্যাকেট।'

স্মিথ তার বইতে আরো লেখেন, 'এই কথা বলার সাথে সাথেই আশেপাশের লোকজন গাড়িটির ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়ে। ক্রেটারর্স তার পপকর্নগুলো উপরে ছুড়ে দিতে থাকে। এতে লোকজনের ভীড় আরো বাড়তে শুরু করে।’ 

ক্রেটার্সের বতর্মানে ‘সি ক্রেটার্স কোম্পানি’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এটিই মূলত যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান পপকর্ন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান।

বর্তমানে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার হিসেবে পপকর্ন জনপ্রিয়তা পেয়েছে। পপকর্নের প্যাকেটে স্বাস্থ্য নির্দেশক কিছু লেখা না থাকলেও মিন্টেলের প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাজ্যে স্বাস্থ্যকর খাবার হিসেবেই এটির প্রচলন শুরু হয়।

Discover extraordinary stories from around the world with our exceptional news coverage. From uplifting human interest stories to groundbreaking scientific discoveries, we bring you the best of the best. Stay informed about the latest breakthroughs in technology, medicine, and beyond, and explore the world's most fascinating cultures and communities. Get inspired and informed with our exceptional news coverage.