বাংলা সনের উৎপত্তি নিয়ে দু’টি মত রয়েছে। ধারণা করা হয় প্রাচীন বঙ্গদেশের রাজা শশাঙ্ক বাংলা সন চালু করেন। রাজা শশাঙ্কের রাজত্বকাল ছিলো আনুমানিক ৫৯০ থেকে ৬২৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত। সুতরাং সে সময় বাংলা সন চালু হলে হিজরি সাল নয় বরং জুলীয় বর্ষপঞ্জী কিংবা গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জীর সাথে তাল মিলিয়েই বাংলা সনের সূচনা হয়েছে বলে ধরে নেয়া যায়।

bengali year

দ্বিতীয় মতটিই সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মত হিসেবে বিবেচিত হয়। ধারণা করা হয়, ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দে মুঘল সম্রাট আকবর বাংলা সনের গোড়াপত্তন করেন। ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দে প্রথম গণনা শুরু হলেও বাংলা সনের আরম্ভ ধরা হয় সম্রাট আকবরের সিংহাসনে আরোহনের সময়কাল অর্থাৎ ১৫৫৬ সাল থেকে। আরবি হিজরি সালের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলা সনের সূচনা হয় এবং প্রাথমিক লগ্নে এই গণনা পদ্ধতি ‘তারিখ-ই-এলাহি’ নামে পরিচিত ছিলো।

মূলত বাদশাহ আকবরের রাজত্বকালে রাজস্ব আদায়ে কিছু সুবিধার জন্যই এই বাংলা সনের জন্ম ঘটে। হাজারও দেব-দেবীর পূজাকারী এই ভারতের হিন্দুরা তখন সৌর বছর অনুযায়ী তাঁদের দিন গণনা করতো। কিন্তু মুসলিম মোঘল শাসকগণ আরবি চন্দ্র বছর অনুযায়ী দিন গণনা করতে অভ্যস্ত ছিলো। ফলে স্থানীয় কৃষকদের চাষাবাদের সময় আর বাদশাহের রাজস্ব আদায়ের দিনক্ষণে বিরাট সমস্যা সৃষ্টি হয়।

এই সমস্যার সমাধান খুঁজতে গিয়েই বাদশাহ আকবর প্রখ্যাত বৈজ্ঞানিক এবং জ্যোতির্বিদ আমির ফাতুল্লাহ শিরাজী’র পরামর্শে বাংলা সনের গোড়াপত্তন করেন।

বাংলা সন যেহেতু হিজরি সালের পিছন পিছন এগিয়ে যায় তাই চন্দ্র ও সৌর বছরের মাঝে সময়ের একটা পার্থক্য থেকেই যায়। এই সমস্যা নিরসনের জন্য ১৯৬৬ সালের ১৭ই ফেব্রুয়ারী ভাষাবিজ্ঞানী ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহের নেতৃত্বে বাংলা একাডেমীর তত্ত্বাবধায়নে বাংলা সনে একটু পরিবর্তন আনা হয়।

পরিবর্তন অনুযায়ী বৈশাখ থেকে ভাদ্র মাস পর্যন্ত প্রত্যেক মাস কে ৩১ দিন এবং আশ্বিন থেকে চৈত্র মাস পর্যন্ত ৩০ দিনের হিসাবে গননা করা শুরু হয়। এছাড়া চার বছর পর পর ফাল্গুন মাসকে এক দিন বাড়িয়ে ধরা হয় শুধুমাত্র লিপ ইয়ারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য।

নববর্ষকে ঘিরে মুসলিম মোঘল শাসনামলে কোনরকম বাড়াবাড়ি না থাকলেও পুণ্যাহের দিন (রাজস্ব আদায়ের দিন) অল্পস্বল্প আনন্দ-ফূর্তি করা হতো। কালক্রমে সেই আনন্দ-ফুর্তিই বর্তমানের রূপ পেয়েছে।

এই হচ্ছে বাংলা সনের উৎপত্তির ঘটনা। বলে রাখা ভালো, যদি দ্বিতীয় মতটি সঠিক হয়, তাহলে বাংলা সনের বয়স খুব বেশি নয়।

Discover extraordinary stories from around the world with our exceptional news coverage. From uplifting human interest stories to groundbreaking scientific discoveries, we bring you the best of the best. Stay informed about the latest breakthroughs in technology, medicine, and beyond, and explore the world's most fascinating cultures and communities. Get inspired and informed with our exceptional news coverage.