সন্তান উচ্চ শিক্ষিত হবে, পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করে নামকরা প্রতিষ্ঠানে উঁচু দরের চাকরী করবে, এটাই যেন এখন প্রতিটি বাবা-মায়ের সন্তানের কাছে কাম্য। কিন্তু শিক্ষার প্রধান উদ্দেশ্য যে ভালো মানুষ হওয়া এবং ছাত্রজীবন শেষ করে লব্ধ শিক্ষাকে উপযুক্ত ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা, এই মানসিকতা এক প্রকার বিলুপ্ত হতে বসেছে। তাই পৃথিবীর প্রায় সর্বত্রই বাবা-মায়েরা সন্তানকে শিক্ষিত করে তুলতে নির্ভরশীল একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ওপর।

sarang goutam

কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা একজন মানুষ তার ব্যবহারিক জীবনে কতোটুকু প্রয়োগ করতে পারে তা নিয়ে সন্দিহান সরকারি স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা এক দম্পতি। আজ থেকে ত্রিশ বছর আগে তাই তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তাদের অনাগত সন্তানকে কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার বেড়াজালে বন্দি করবেন না। তারা স্বপ্ন দেখেছিলেন এমন একটি স্কুলের যেখানে তাদের সন্তানের স্কুল হবে প্রকৃতি। আর সেই স্বপ্নের নাম দিয়েছিলেন সারাং, যেখানে নেই কোন বাধাধরা নিয়ম, নেই প্রথাগত শিক্ষিত হওয়ার প্রমাণপত্র, নেই সবার জন্য একই সিলেবাস।

এই স্বপ্ন বাস্তবায়নে গোপালকৃষ্ণ ও বিজয়ালক্ষ্মী নামের এক দম্পতি ১৯৯৪ সালে সরকারি স্কুলে শিক্ষকতা ছেড়ে দিয়ে সারাং গড়ে তোলার কাজ শুরু করেন আর তাদের প্রথম সন্তান গৌতম হলো সারাংয়ের প্রথম ছাত্র। তারপর ধীরে ধীরে তাদের ঘনিষ্ঠ কয়েক পরিবারের শিশু, প্রতিবেশি ও দরিদ্র ঘরের শিশুরা সারাংয়ের ছাত্র হলো।

এই প্রকৃতি থেকে শিক্ষা নেয়ার এই স্কুলে কেউ ছিল না কারো সহপাঠী, তারা একে অন্যের ভাই-বোন। তাদের জীবনটা আটকে যায়নি বইয়ের পাতায়, স্কুলের বাউন্ডারিতে, নির্ধারিত পোশাকে। কালো বোর্ডে বোঝা না বোঝায় চোখের চাহুনি রুদ্ধ না করে তারা  তাকিয়েছিল অসীমের দিকে, আর সেটাই ছিল তাদের পাঠ্য বিষয়বস্তু।

গোপালকৃষ্ণ ও বিজয়ালক্ষ্মী ছাত্রদের বিশাল ক্যানভাস দিতে ভারতের কেরালা রাজ্যের পালাক্কাদ অঞ্চলে প্রথমে এক একর অনুর্বর জমি কেনেন। তারা মনে করেছিলেন, শিক্ষার জন্য এটিও সবচেয়ে উপযুক্ত জায়গা। পরে তারা সেখানে আরও ১২ একর জমি কেনেন। এই জায়গাটি ছিল পাহারের ঢালের ওপর যা পতিত এবং ভূগর্ভস্থ পানিতে ডুবে যায়। যেখানে খুব সামান্য সংখ্যক গাছ ছিল এবং পানির একমাত্র উৎসও শুকিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এই দম্পতির দৃষ্টিতে জায়গাটি ছিল জীবন ও বেঁচে থাকা সম্পর্কে শিশুদের শেখার জন্য একদম নিখুঁত।

sarang gautham anuradha

সারাংয়ে এই দম্পতি জমির এক অংশে সবুজ বন বানাতে চেয়েছিলেন এবং বাড়ি নির্মাণ ও খাদ্যের জন্য ফসল উৎপাদনের জন্য বাকি অংশ ব্যবহার করার পরিকল্পনা করেছিলেন। শিশুরা নিজে হাতে সারাংয়ের বাঁশ, কাঁটাগাছ, কাদামাটি দিয়ে নিজেদের বাড়ি বানায়। তারা অনুর্বর জমিকে উর্বর করে তোলার কাজে শেখে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, গণিত, ভূগল, জরিপ, ভূমিক্ষয় রোধে করণীয়, জল সংরক্ষণ, শেখে শিল্প ও সংস্কৃতি নিজ নিজ পছন্দ ও রুচি মতো। সবচেয়ে কঠিক শিক্ষাটি হয় বনে আগুন লাগা রোধ করার উপায় বের করতে গিয়ে। আর এসব শিক্ষার মধ্য দিয়ে শিশুদের পরিশ্রমে মাত্র ১৫ বছরের মধ্যে সারাং ভরে ওঠে সবুজে। এই সবুজের অধিবাসী হয় হরিণ, খরগোশ, কাঠবিড়ালী আর বিরল প্রজাতির বহু প্রাণী।

বর্তমানে সারা বিশ্বের অসংখ্য শিশু সারাংয়ে আসে প্রকৃতি থেকে জীবনের শিক্ষা নিতে। বর্তমানে গৌতমের বয়স ৩৬ বছর এবং তিনি স্ত্রী ও তিন সন্তানসহ সারাংয়কে আরও জীবনের নির্যাসে পরিপূর্ণ করার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তার স্ত্রী প্রকৌশলী অনুরাধা বলেন, 'যেসব বাবা-মা তাদের সন্তানকে প্রথাগত শিক্ষার বাইরে প্রকৃত শিক্ষার সংস্পর্শে রাখতে চায় তারা সারাংয়ে আসে। এখানে নেই কোন রুটিন, নেই নিয়মিত ক্লাস। সারাংয়ের অনেক শিশু বাহ্যিক উপস্থিতি ছাড়াও এখান থেকে শিক্ষা নিচ্ছে।'

Discover extraordinary stories from around the world with our exceptional news coverage. From uplifting human interest stories to groundbreaking scientific discoveries, we bring you the best of the best. Stay informed about the latest breakthroughs in technology, medicine, and beyond, and explore the world's most fascinating cultures and communities. Get inspired and informed with our exceptional news coverage.