হৃদয় বা হৃদপিণ্ড (হার্ট) মানুষের শরীরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। এটি আমাদের সারা শরীরে রক্ত সরবরাহ করে থাকে। রক্ত ফুসফুস থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করে সমস্ত শরীরে পৌঁছে দেয় আর শরীরের কোষগুলো সেই অক্সিজেন গ্রহণ করে। যা আমাদের বেঁচে থাকার জন্য অতীব প্রয়োজন।

no heart attackফাইল ছবি

বাংলাদেশে বর্তমানে যে সকল রোগে মানুষের মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে হার্ট অ্যাটাক (হৃদরোগ)। বাংলাদেশ ও সমগ্র বিশ্বে হার্ট অ্যাটাক বর্তমানে একটি আশঙ্কাজনক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ১ কোটি ৭০ লাখ লোক হৃদ্রোগের কারণে মারা যায়।

হার্ট অ্যাটাক কি? হার্ট অ্যাটাক একটি বিশেষ রোগ। হার্ট পাম্পের মাধ্যমে আমাদের সারা শরীরের রক্ত সঞ্চালন করে। হার্টের নিজস্ব রক্ত চলাচলের পদ্ধতি রয়েছে, এর কিছু নিজস্ব রক্তনালি আছে। এই রক্তনালিগুলোর মধ্যে চর্বি বা কোলেস্টেরল জমে এক বা একাধিক নালি যদি হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে হার্টের বেশ কিছু অংশে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। বন্ধ হয়ে গেলে হার্টের কাজ করার ক্ষমতাও বন্ধ হয়ে যায়। এটিই হলো হার্ট অ্যাটাক।

সহজভাবে বলা যায়, রক্তনালি বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে হার্টের কার্যক্ষমতা যে বন্ধ হয়ে গেল, সেটিই হচ্ছে হার্ট অ্যাটাক।

হার্ট অ্যাটাক হলে বুকে প্রচণ্ড ব্যাথা অনুভূত হয়। এই ব্যাথা ২০-৩০ মিনিট বা তারও বেশিসময় পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রোগী হাসপাতালে পৌঁছার আগেই মৃত্যুবরণ করে। তাই এটি একটি মেডিকেল ইমার্জেন্সি।

হার্ট অ্যাটাক রোগে যারা মৃত্যুবরণ করে তাদের বেশির ভাগ মানুষই কিন্তু প্রথম ঘণ্টার মধ্যে মারা যান। তাই হার্ট অ্যাটাক সম্বন্ধে আমাদের একটি ব্যক্তিগত ধারণা থাকা দরকার। 

হার্ট অ্যাটাক যার হয় তাকে হাসপাতালে পৌঁছানোর আগে রোগীর পাশে যারা থাকেন তাদের কিছু বিষয় জেনে রাখা দরকার।

no heart attack2ফাইল ছবি

হার্ট অ্যাটাক শুধু বাংলাদেশের নয়, সমগ্র বিশ্বের সমস্যা। এ ক্ষেত্রে সচেতনতার অভাব একটি বড় কারণ। হৃদরোগ এক দিনে হয় না। দীর্ঘদিন ধরে জীবনযাপনে বেপরোয়া হওয়ার কারণে রোগটি হয়।

হার্ট অ্যাটাক মোকাবেলায় দুই ধরনের সচেতনতা প্রয়োজন। প্রথমত, রোগ প্রতিরোধ বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। দ্বিতীয়ত, হার্ট অ্যাটাক হলে সঙ্গে সঙ্গে দক্ষ চিকিৎসকের মাধ্যমে চিকিৎসা নিতে হবে।

হার্ট অ্যাটাকের কারণে ২৫ শতাংশ মানুষের আকস্মিক মৃত্যু হয়। তারা হাসপাতালে আসার কিংবা চিকিৎসা নেয়ার সুযোগ পায় না। হাসপাতালে যারা আসে, তাদেরও মৃত্যুহার কম নয়।

সাম্প্রতিক একটি জরিপে দেখা যায়, হার্ট অ্যাটাকের পর হাসপাতালে আসা রোগীদের মৃত্যুর হার প্রায় ৭ দশমিক ৬ শতাংশ। কয়েক বছর আগেও এটি ১১ শতাংশ ছিল।

সচেতনতা ও আধুনিক চিকিৎসার কারণে বর্তমানে হাসপাতালে আসা রোগীদের মৃত্যুর হার কিছুটা কমেছে।

হার্ট অ্যাটাকের কারণ: আসুন, জেনে নেই প্রধানত কি কি কারণে মানুষের হার্ট অ্যাটাক হতে পারে-

ক. অতিরিক্ত মাত্রায় ধূমপান করলে বা অ্যালকোহল গ্রহণ করলে।

খ. দীর্ঘদিন ধরে অতিরিক্ত মাত্রায় তেল বা চর্বি জাতীয় খাবার খেলে।

গ. সবসময় মানসিক চাপের মধ্যে থাকলে।

ঘ. রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে গেলে।

ঙ. উচ্চ রক্তচাপ হলে।

চ. ডায়াবেটিস বেড়ে গেলে।

ছ. কায়িক পরিশ্রম না করা।

হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ: বুকে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভূত হওয়া, বুক ভার লাগা, বমি বমি ভাব হওয়া, প্রচণ্ড ঘাম হওয়া, মাথা ঝিমঝিম করা, উচ্চ রক্তচাপ কিংবা ডায়াবেটিস বেড়ে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট হওয়া, পেট জ্বালা-পোড়া করতে পারে বিশেষ করে পেটের উপরের অংশে জ্বালা-পোড়া হতে পারে, অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে, চোখে ঝাপসা দেখা যেতে পারে।

এগুলো সম্পর্কে মানুষকে সচেতন থাকা জরুরি। লক্ষণগুলো প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে নিকটবর্তী হাসপাতালে চলে যেতে হবে।

 no heart attack3

হার্ট অ্যাটাক হলে তাৎক্ষণিক করণীয়: 

ক. হার্ট অ্যাটাক হয়েছে বুঝতে পারলে রোগীকে তাৎক্ষণিক এসপিরিন জাতীয় ওষুধ খাইয়ে দেয়া ভালো। এতে রক্ত জমাট বাঁধা বন্ধ হবে।

খ. জিহ্বার নিচে নাইট্রোগ্লিসারিন স্প্রে দিতে হবে।

হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধে করণীয়:

ক. ধূমপান বন্ধ করা।

খ. অ্যালকোহল অথবা মাদক নেয়া বন্ধ করা।

গ. মানসিক চাপমুক্ত থাকার চেষ্টা করা।

ঘ. ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে রাখা।

ঙ. ডায়বেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা।

চ. রক্তের চর্বি অর্থাৎ কোলেস্টেরলের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখা।

ছ. নিয়মিত ব্যায়াম করা, প্রতিদিন অন্তত ২০-৩০ মিনিট।

জ. শরীরের ওজন কমানো।

no heart attack4 

হার্ট অ্যাটাক বাংলাদেশ ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বড় ধরনের মৃত্যুঝুঁকিতে পরিণত হয়েছে। এ ঝুঁকি মোকাববেলায় ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টি এবং আধুনিক চিকিৎসা খু্বই জরুরি। জীবনযাপনের ক্ষেত্রে সচেতন হয়ে হার্ট অ্যাটাক থেকে দূরে থাকা সম্ভব।

Get the latest news on lifestyle, health, food, and more from our team of expert writers. From fitness tips and nutrition advice to travel guides and entertainment news, we cover the topics that matter most to you. Whether you're looking to improve your health, broaden your horizons, or just stay up-to-date with the latest trends, you'll find everything you need here.