রাজধানীতে এবার গরমে অনেকেই 'চিকুনগুনিয়া' রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ভাইরাসজনিত এই রোগ ডেঙ্গু জ্বরের মতোই এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ায়। যদিও এই রোগটি প্রাণঘাতি নয় তবে আক্রান্ত রোগীর শরীরে নানা ধরণের অসঙ্গতি দেখা দেয়। ১৯৫২ সালে সর্বপ্রথম তানজানিয়ায় রোগটি ছড়িয়ে ছিল বলে জানা যায়। আমাদের দেশে রোগটিকে ল্যাংড়া জ্বরও বলা হয়ে থাকে।

chikungunya test

চিকুনগুনিয়া রোগটি চিকুনগুনিয়া ভাইরাসের কারণে হয়ে থাকে। তানজানিয়াতে মহামারী চলাকালীন রোগটিকে ডেঙ্গু জ্বর থেকে আলাদা করা যায়নি। ভাইরাসটি প্রথমে আফ্রিকা ও এশিয়াতে পাওয়া যায়। উপমহাদেশে সর্বপ্রথম ভারতে ২০০৪-২০০৬ সালের দিকে এই রোগটির আবির্ভাব ঘটে। চিকুনগুনিয়া ভাইরাসটি মশার কামড়ের মাধ্যমে মানুষের দেহে প্রবেশ করে। সাধারণত বৃষ্টি ও বৃষ্টিপরবর্তী সময়ে রোগটির প্রাদুর্ভাব ঘটে। চার থেকে আট বছর পর পর রোগটির প্রাদুর্ভাব দেখা যায়।

এডিস মশা যেমন ডেঙ্গুর বাহক তেমনি চিকুনগুনিয়া ভাইরাসেরও বাহক। জমে থাকা পরিষ্কার পানিতে এডিস মশা বংশ বিস্তার করে। বাসার আশে পাশের যে কোন স্থানে জমে থাকা পানিতে এরা প্রজনন ঘটায়। যেমন- খালি পাত্র, ফুলের টব, গাছে তৈরি হওয়া কোনো গর্ত, এসির জমে থাকা পানি ইত্যাদি। মনে রাখবেন, এই মশার ধর্মই হচ্ছে শুধুমাত্র দিনের বেলায় মানুষকে কামড়ানো। মশা কামড়ানোর তিন থেকে সাতদিনের মধ্যে এর সংক্রমণ দেখা দেয়।

চিকুনগুনিয়া রোগের বেশ কিছু লক্ষণ বা উপসর্গ রয়েছে। এই রোগ হলে সাধারণত ১০১ ডিগ্রী ফারেনহাইটের বেশি জ্বর থাকে। শারীরিক দূর্বলতা, গিড়ায় গিড়ায় ব্যাথা হওয়া, গিড়া ফুলে যাওয়া, চামড়ায় র‍্যাশ হওয়া ও সাথে চুলকানী, চোখে ব্যাথা, মাথা ব্যাথা, পিঠে ব্যাথা, মাংসপেশীতে ব্যাথা, মুখে ঘা হওয়া, রক্তপাত, প্রস্রাব কমে যাওয়া, বমি হওয়া, ডায়েরিয়া ইত্যাদি উপসর্গগুলো দেখা দেয় চিকুনগুনিয়া ভাইরাসে আক্রান্ত হলে।

চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত রোগীকে প্রচুর পরিমানে পানি খাওয়াতে হবে। যেমন- ডাবের পানি, স্যালাইন অথবা শুধুমাত্র পানির সাথে লবন মিলিয়েও খাওয়া যেতে পারে। এছাড়া, সিলেনিয়াম, জিংক, ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড, ভিটামিন 'ই' ও ভিটামিন 'সি' সমৃদ্ধ খাবার বেশি বেশি খেতে হবে। এই রোগে কলা ও আপেল বেশ উপকারী। সবুজ শাকসবজি ও স্যুপ জাতীয় তরল খাবার খেতে হবে বেশি বেশি। 

চিকুনগুনিয়া জ্বর হলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খেতে হবে। গিড়ায় ব্যাথা হলে বরফ লাগাবেন তবে এই ব্যাথায় গরম সেঁক দেয়া যাবে না। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন ব্যাথার ঔষধ অথবা অ্যান্টিবায়োটিক খাবেন না।

চিকুনগুনিয়া রোগে আক্রান্ত হওয়ার ফলে রক্তচাপ কমে গেলে, প্রস্রাব কম হলে, রক্তপাত হলে, অজ্ঞান হয়ে গেলে, ঔষধে গিড়ার ব্যাথা না কমলে রোগীকে তৎক্ষণাৎ হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। আর আক্রান্ত রোগী যদি বৃদ্ধ, শিশু অথবা গর্ভবতী হয়ে থাকেন তাহলে রোগীকে সাথে সাথেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

চিকনগুনিয়া রোগ শনাক্ত করতে চিকিৎসকরা কিছু টেস্ট করাতে দেন, যেমন: সেল কালচার, পিসিআর, অ্যান্টিবডি (IgM, IgG)। এছাড়া রক্তের পরীক্ষা, লিভারের পরীক্ষাও করাতে হয়।

চিকুনকুনিয়া ভাইরাসের ভ্যাকসিন বা টিকা এখনও বের না হওয়ায় আগে থেকেই সচেতনতার সাথে তা প্রতিরোধ করতে হবে। এর মধ্যে অন্যতম হলো মশার প্রজননস্থল ধবংস করতে হবে। খালি পাত্র, ফুলের টব, গাছে তৈরি হওয়া কোনো গর্তে অথবা এসির পানি জমতে দেয়া যাবে না। ঘরে মশানাশক ঔষধ (মশার কয়েল, ভ্যাপোরাইজার) ব্যবহার করতে হবে। দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় মশারী ব্যবহার করতে হবে।

Get the latest news on lifestyle, health, food, and more from our team of expert writers. From fitness tips and nutrition advice to travel guides and entertainment news, we cover the topics that matter most to you. Whether you're looking to improve your health, broaden your horizons, or just stay up-to-date with the latest trends, you'll find everything you need here.