পবিত্র রমজান মাসে গোটা বিশ্বের মুসলিমরা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত যাবতীয় অন্যায় কাজ ও খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকেন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভৌগোলিক অবস্থান ও দূরত্বভেদে রোজার কর্মঘণ্টায় পার্থক্য হয়ে থাকে। আমাদের দেশে বর্তমানে প্রায় ১৫ ঘণ্টা সিয়াম সাধনা করতে হয় মুসল্লিদের। দিনের অধিকাংশ সময় পানাহার থেকে বিরত থাকায় অনেকেই দুর্বল হয়ে পড়েন। কিংবা খাদ্যমাণ অনুযায়ী খাবার না খাওয়ায় স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ারও আশঙ্কায় থাকেন। কী করে এই রমজানে সুস্থ থাকা যায় সে বিষয়ে টোয়েন্টিফোর লাইভ নিউজপেপারের সঙ্গে কথা বলেছেন, বিআরবি হাসপাতাল লিমিটেডের সিনিয়র ডায়েটেশিয়ান ও পুষ্টিবিদ নুসরাত জাহান। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন- এম.এস.আই খান

nutritionist nusrat jahan

টোয়েন্টিফোর লাইভ নিউজপেপার: স্বাগতম। আজকে আমরা কথা বলব রমজানের খাদ্যাভাস ও পুষ্টিমান নিয়ে।

নুসরাত জাহান: টোয়েন্টিফোর লাইভ নিউজপেপারকে ধন্যবাদ। এখনকার রোজায় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রায় ১৫ ঘণ্টাই না খেয়ে থাকতে হয়। এ কারণেে ইফতার ও সেহরিতে সচেতনভাবে খাদ্যমাণ অনুযায়ী পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা উচিত। অনেকেই রমজানে তিন বেলা খান না। ইফতার করার পরে একবারে ভোররাতে সেহরি করে থাকেন। প্রাপ্ত বয়স্ক একজন মানুষের দিনে কমপক্ষে ২০০০ কিলো ক্যালরি প্রয়োজন। যা দুই বেলা খেয়ে পাওয়া যায় না। কারণ আমাদের এক বেলায় ১০০০ কিলো ক্যালরি খাওয়া হয় না। তাছাড়া এক বেলা বেশি খেলে বদ হজমের সম্ভাবনা থাকে।

টোয়েন্টিফোর লাইভ নিউজপেপার: ইফতারে আমাদের দেশে ভাজা-পোড়া খাওয়ার একটা প্রবণতা রয়েছে। এটা কতটা স্বাস্থ্যকর?

নুসরাত জাহান: ইফতারে সাধারণত বেশিরভাগ মানুষ ডুবো তেলে ভাজা-পোড়া জিনিস খায়। আর না হলে বিরিয়ানি, তেহারি বা হালিমের মত খাবার খায়। কিন্তু বাজারে বাণিজ্যিকভাবে রান্না করা এ খাবারগুলোর স্বাস্থ্যমান ও পুষ্টিমান নিয়ে সংশয় রয়েছে। কেউ যদি এ ধরণের খাবার খেতে খুবই পছন্দ করেন তবে বাসায় তৈরি করে খাওয়াটাই উত্তম। বাসায় অলিভ অয়েল তেল দিয়ে বা অন্য তেল কম পরিমাণে দিয়ে রান্না করলে তা অধিক পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যকর হয়। বাসায় পেয়াজু বা ভাজা-পোড়া করলে টিস্যু দিয়ে অতিরিক্ত তেল শুষে নিয়ে পরিবেশন করলে সুস্থ মানুষের ক্ষেত্রে তেমন কোন ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। ছোলা বুট সিদ্ধ করে বা হালকা তেল দিয়ে রান্না করে খাওয়া যেতে পারে। তবে খুব বেশি মশলা দেয়া ঠিক নয়। সাথে পর্যাপ্ত পরিমাণ সালাদ বা সবজি থাকলে ভাল হয়।

টোয়েন্টিফোর লাইভ নিউজপেপার: এখন গরমের মৌসুম চলছে। এ সময় দেহে পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে। রোজাদাররা এ সমস্যায় কী করতে পারেন?

নুসরাত জাহান: হ্যাঁ, গরমের মধ্যে রোজায় পানিশূন্যতার একটা সম্ভাবনা থেকে যায়। কারণ অনেকেই রাত ১০টা বা ১১টার মধ্যে শুয়ে পড়েন এবং ভোর রাতে সেহরি খেতে ওঠেন। এ দুই সময় ছাড়া মাঝখানে আর পানি খাওয়ার সুযোগ হয় না। যেহেতু দিনের বড় একটা অংশ পানি ছাড়া থাকতে হয় এবং দিনে আমাদের দেড় থেকে দুই লিটার পানি পান করা প্রয়োজন। তাই সেহরি ও ইফতারে এমন খাবার খাওয়া উচিত যাতে পানিজাতীয় খাবারটা ওই খাবার থেকে চলে আসে। শরবত, ডাবের পানি, দই-চিড়া, বিভিন্ন ধরণের ফলমূল বিশেষ করে পানিজাতীয় যে ফলগুলো রয়েছে, এছাড়া স্যুপ জাতীয় খাবার খাওয়া যেতে পারে।

টোয়েন্টিফোর লাইভ নিউজপেপার: সেহরিতে কী ধরণের খাবার খাওয়া উচিত? কোনগুলো পরিহার করা উচিত?

নুসরাত জাহান: সেহরিতে ভাতের সঙ্গে ডাল, ডিম, মাছ, মাংস, সবজিসহ স্বাস্থ্যকর যে কোন খাবারই খেতে পারেন। অধিক ঝাল ও অধিক চর্বি জাতীয় খাবার পরিহার করা উচিত। পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। যারা বিভিন্ন রোগে ভুগছেন তাদের চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাবার খেতে হবে। আর একটা বিষয়ে বলব, ভোররাতে অনেকে তাড়াহুড়ো করে খায়, খাবার ভাল করে চিবিয়ে খায় না। এটা করা যাবে না। কারণ পরবর্তী দিনটা চলবে এই সেহরির খাবার দিয়ে। সেহরির খাবারটা যদি ‍সুন্দর ও স্বাস্থ্যসম্মত না হয় সেক্ষেত্রে কিন্তু পরবর্তী দিনের কাজগুলো আমরা করতে পারব না। মাথা ঘুরাতে পারে, মাথায় ঝিম ঝিম অনুভব হতে পারে, বমি বমি ভাব হতে পারে, মেজাজ খিটখিটে হতে পারে, রোজার মাস শেষ হলে বদহজম বা পেটে সমস্যা দেখা দিতে পারে। এ কারণে সেহরিতে ভাল করে চিবিয়ে এবং সহজ পাচ্য খাবার খেতে হবে। তাহলে আমরা রমজানে সুস্থ ও স্বাভাবিক থাকতে পারব।

টোয়েন্টিফোর লাইভ নিউজপেপার: আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

নুসরাত জাহান: আপনাকে ও পাঠকদের ধন্যবাদ।

Get the latest news on lifestyle, health, food, and more from our team of expert writers. From fitness tips and nutrition advice to travel guides and entertainment news, we cover the topics that matter most to you. Whether you're looking to improve your health, broaden your horizons, or just stay up-to-date with the latest trends, you'll find everything you need here.