আপনি পড়ছেন

সর্বশেষ ক্রিকেট বিশ্বকাপের আসর বসেছিলো অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড। সেখানে খুব বড় কিছু করার স্বপ্ন দেখার সাহস ছিলো না বাংলাদেশের। একে তো বিরুদ্ধ কন্ডিশনের চোখ রাঙানি, তার ওপর পরাক্রমশালী একেকটি প্রতিপক্ষ। এই অবস্থায় বাংলাদেশ খেলে ফেলে কোয়ার্টার ফাইনাল। বিশ্বকাপে এর চেয়ে বড় সাফল্য আর নেই লাল-সবুজ পতাকাধারীদের।

rubel hossain against india in nidahas trophy

রুবেল হোসেনের অনন্য অসাধারণ বোলিংয়ের কারণেই কোয়ার্টার ফাইনালের মঞ্চে বাংলাদেশের পা পড়ে। তার সামনেই নুইয়ে পড়ে ইংল্যান্ড। বাংলাদেশ মেলবোর্নে মুখোমুখি হয় ভারতের। সেখান থেকে অবশ্য ফিরতে হয় আশাভঙ্গের বেদনা সঙ্গে করে।

রোববার আরো একবার রচিত হলো আশাভঙ্গের বেদনার গল্প। এবারও প্রতিপক্ষ ভারত। ২০১৫ বিশ্বকাপে যার হাত ধরে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছিলো বাংলাদেশ, এবার সেই রুবেল হোসেন করলেন হতাশ। এক ওভারে ২২ রান দিয়ে ম্যাচটাই তুলে দিলেন ভারতের হাতে।

ম্যাচ শেষ হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই রুবেল হোসেন তার ফেসবুক পাতায় দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চেয়ে পোস্ট করেছেন। রুবেল বলেছেন, তিনি কখনোই ভাবেননি তার কারণেই ম্যাচটি হেরে যাবে বাংলাদেশ। তিনি তার হতাশার কথাও বলেছেন।

কিন্তু আসলেই কি রুবেল হোসেনের ক্ষমা চাওয়ার দরকার? খেলা মানেই যেখানে হার ও জিতের নিশ্চিত ব্যাপার থাকবে। টেস্ট তবু ড্র দিয়ে শেষ হয়। কিন্তু রঙিন পোশাকের ক্রিকেটে, বিশেষ করে কোনো বহুজাতিক আসরে ওই সুযোগ নেই। এ রকম প্রতিযোগিতায় এক দলকে হারতে হবে এবং অন্য দল জিতবে। খেলাটা যেহেতু শেষ পর্যন্ত জীবনের একটা মাত্র অংশ, সেহেতু জয়ের আনন্দ উদযাপনের পাশাপাশি হারের কষ্ট মেনে নেয়ার মানসিকতাও নিশ্চয়ই দরকার।

বাংলাদেশে দর্শকরা বছর কয়েক আগেও হয়তো কিছুটা এলোমেলো ছিলেন। দল হারলে তারা খেলোয়াড়দের গালমন্দ করতেন। কিন্তু এখন আর পরিস্থিতি সে রকম নেই। সমর্থকরা এখন জানেন, রুবেল হোসেনরা মাঠে নামেন জেতার জন্যই। প্রতিপক্ষ যেই হোক, তারা চোখে চোখ রেখে লড়াইয়ের ঝাঁজ ছড়াতে মোটেও পিছপা হন না। সুতরাং দলের হার শেষ পর্যন্ত ম্যাচেরই একটা নিশ্চিত ফল, যা মেনে নিয়ে খেলোয়াড়দের আরো উদ্যমী করে তোলাই সভ্য দর্শকদের দায়িত্ব।

{loadtweets}url=975471884639772672{/loadtweets}

তারপরও রুবেল হোসেন কেনো মনে করলেন যে, তার ক্ষমা চাওয়া উচিত? এর দুটি কারণ হতে পারে। একটি কারণ হলো, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রায় দশ বছর কাটিয়ে দেয়া রুবেল মনে করেন, এই ম্যাচটা তার জেতানো উচিত ছিলো, কিন্তু তিনি পারেননি। এই হতাশা বা এই দায়িত্ব পূরণের ব্যর্থতাই তাকে উদ্বুদ্ধ করেছে ক্ষমা চাইতে। যা একটি ইতিবাচক ব্যাপার।

অন্য কারণটি হতে পারে— রুবেল হয়তো ভেবেছেন এখনো এমন দর্শক আছেন, যারা ওই হারের দায় তার কাঁধে দিবেন। রুবেল হয়তো ভেবেছেন, দলকে হারানোর দায়ে মুণ্ডুপাত চলবে তার।

প্রথম কারণটি তবু মানা যায়, কিন্তু দ্বিতীয় কারণে যদি রুবেল ক্ষমা চেয়ে থাকেন, তাহলে দর্শকদের জন্যই তা লজ্জার ব্যাপার। যার হাত ধরে গর্বের কতো কীর্তি ধরা দেয়, সেই তাকে দর্শকরা অপমান করবেন!

দিন শেষে ক্রিকেট কেবলই একটা খেলা। যাতে মানুষ বিনোদিত হয়। ক্রিকেট না থাকলেও আমাদের জীবন চলবে। সুতরাং এই খেলার ব্যর্থতায় যেনো কোনো ক্রিকেটারকে ক্ষমা চাইতে না হয়, তা নিশ্চিত করা দর্শকদের দায়িত্ব। ক্রিকেটাররা যাতে মনে করেন, জয়ের দারুণ সময়ে দর্শকরা যেমন তাদের নাম ধরে স্লোগান ধরেন, তেমনি যেনো হারের চোরাবালিতে পা ডোবার সময়েও দর্শকরা তাদের টেনে ধরেন পরম ভালোবাসায়।

তারপরও যদি রুবেলরা দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে ক্ষমা চেয়ে বসেন, তাহলে যেনো দর্শকরা রুবেলদের কাঁধে হাত রেখে বলে দেন, ‘না রুবেল, আপনার ক্ষমা চাইতে হবে না!

প্রিয় পাঠক, ভিন্নমতে প্রকাশিত লেখার বিষয়বস্তু, রচনারীতি ও ভাবনার দায় একান্ত লেখকের। এ বিষয়ে টোয়েন্টিফোর লাইভ নিউজপেপার কোনোভাবে দায়বদ্ধ নয়। ধন্যবাদ।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর