স্মার্টফোনের জগতে নতুন বিপ্লব নিয়ে হাজির হয়েছে বিশ্বখ্যাত চীনা ব্র্যান্ড হুয়াওয়ে। সম্প্রতি তারা বাজারে এনেছে তাদের ‘পি’ সিরিজের নতুন ফ্লাগশিপ ফোন ‘পি-টোয়েন্টি’। ফোনটি ব্যবহারকারীদের সম্পূর্ণ নতুন রকম অভিজ্ঞতা দিবে বলেই দাবি হুয়াওয়ের।

huawei p 20 in the market

গত কয়েক বছরে স্মার্টফোনের বেশিরভাগ উন্নতি সাধন হয়েছে এর নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ক্যামেরা এবং পর্দার আকৃতিতে। এ ছাড়া উন্নতমানের প্রসেসর ও মেটালের ব্যবহারেও এসেছে নতুন নতুন সব ব্যাপার। যা স্মার্টফোনকে করে তুলেছে আরো আকর্ষণীয় ও আরো কার্যকর।

সম্প্রতি বাজারে এসেছে স্যামসাংয়ের ‘এস’ সিরিজের নতুন ফ্লাগশিপ ফোন ‘এস-নাইন’। যাকে মনে করা হচ্ছে আইফোন-টেন এর প্রতিদ্বন্দ্বী। মজার ব্যাপার হলো, হুয়াওয়ে পি-টোয়েন্টিকে মনে করা হচ্ছে আইফোন-টেন ও স্যামসাং এস-নাইনের প্রতিদ্বন্দ্বী!

huawei p 20 in the market 2

নিরাপত্তা, ক্যামেরা ও পর্দার আকৃতি, সঙ্গে দ্রুত গতির প্রসেসর এবং মজবুত গঠন; এই কয়েকটি মৌলিক বিষয় বিবেচনায় হুয়াওয়ে প্রায় এক অনন্য ফোনে পরিণত হয়েছে।

নিরাপত্তা
আজকাল স্মার্টফোন আর শখের কোনো বস্তু নয়। বরং ব্যক্তিগত গুরুত্বপূর্ণ কাজ থেকে শুরু করে অফিসের মহাগুরুত্বপূর্ণ কাজেও স্মার্টফোন হয়ে উঠেছে অত্যন্ত জরুরি অনুষঙ্গ। ফলে এর নিরাপত্তা নিয়েও ব্যবহারকারীরা সব সময় উদ্বিগ্ন থাকেন।

সেই উদ্বেগ দূর করে দিতে পারে অ্যান্ড্রয়েডের সর্বশেষ সংস্করণ চালিত পি-টোয়েন্টি। এতে দ্রুতগতির ফিঙ্গার প্রিন্টের সঙ্গে যোগ করা হয়েছে চেহারা দিয়ে ফোন লক করার প্রযুক্তিও। যার ফলে ফোন হারালেও ব্যক্তিগত তথ্য-উপাত্তের নিরাপত্তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়তে হবে না। এই প্রযুক্তি অবশ্য নতুন কিছু নয়। তবে এর অন্তর্ভুক্তি নিঃসন্দেহে পি-টোয়েন্টি কিনতে ইচ্ছুক ব্যবহারকারীদের জন্য দারুণ সুসংবাদ।

ক্যামেরা
হালের নতুন ট্রেন্ড হলো স্মার্টফোন ফটোগ্রাফি। এই খাতে দারুণ সম্ভাবনা থাকলেও স্মার্টফোনের ক্যামেরার প্রযুক্তিগত উন্নতিটা যেনো সীমিত হয়ে পড়েছিলো। কিন্তু হুয়াওয়ে ও লেইসার যুগ্ম-প্রকৌশলে পি-টোয়েন্টির ডাবল লেন্সের ক্যামেরা হয়ে উঠেছে এক দুর্দান্ত জিনিস। ফলে দ্রুত গতির বিষয়বস্তুর ছবিও তোলা যাবে তা ঝাপসা হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা ছাড়াই। এ ছাড়া পি-টোয়েন্টির অটো ফোকাস এতো দ্রুত কাজ করে যে, বিষয়বস্তুর দিকে দীর্ঘক্ষণ ফোন ধরে রাখার বিরক্তিটা এবার ব্যবহারকারীরা ভুলেই যাবেন।

হুয়াওয়ে পি-টোয়েন্টির ক্যামেরায় ব্যবহার করা হয়েছে ওয়াড অ্যাপারচার লেন্স। এটি ১.৫৫ মাইক্রোমিটার সাইজের পিক্সেলে ছবি ধারণ করতে পারে। এর ফলে প্রতিটি শটে পর্যাপ্ত আলো ধারণ করা সম্ভব হয়। অর্থাৎ ছবি হয় আরো স্পষ্ট ও প্রাণবন্ত। বাস্তবে ক্ষেত্রে আলো কম থাকলেও পি-টোয়েন্টিতে ধারণ করা সম্ভব স্পষ্ট ছবি।

হুয়াওয়ের এই ফোনের ক্যামেরায় ব্যবহার করা হয়েছে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। যার ফলে আলা বা আঁধারের মাত্রা বুঝে ক্যামেরা নিজে থেকে কন্ট্রাস্ট সেট করে নিতে পারে। ফলে ছবির উজ্জ্বলতার উপর চোখ বন্ধ করে ভরসা করা যায়। কারণ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ছবিতে ততোটাই কন্টাস্ট সেট করে দিবে, যা নির্দিষ্টি একটি ছবির জন্য প্রয়োজন। ফলে ডিএসএলআর ক্যামেরা চালানোর মতো এর ব্যবহারকারীকে পেশাদার ক্যামেরাম্যান হতে হবে না।

পি-টোয়েন্টির ক্যামেরায় সুপার স্লো মোশনে ছবি ধারণ করা অত্যন্ত সহজ। এতে ৯৬০ ‘ফ্রেম পার সেকেন্ড’এ কোনো ভিডিওকে স্লো মোশনে পরিণত করা সম্ভব। এর ফলে জীবনের বহু মজার ঘটনাকে আরো ধীরে এবং গভীরভাবে উপলব্ধি করা যাবে। এর ২৪ মেগামিক্সেলের সেলফি ক্যামেরা দিয়ে তোলা সম্ভব দারুণ সব ছবি। দিনে বা রাতে, ছবিতে থাকবে সর্বোচ্চ সন্তুষ্টি।

এ ছাড়া কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার থ্রিডি পোট্রেট লাইটিংয়ের ব্যবহারে পি-টোয়েন্টির ক্যামেরা দিয়ে সাবজেক্টে রিয়াল টাইমে যোগ করা যাবে আলো-ছায়ার নানা রকম খেলা। এর ফলে ছবি হয়ে উঠবে আরো পেশাদার ও অসাধারণ।

প্রসেসর
হুয়াওয়ে পি-টোয়েন্টিতে ব্যবহার করা হয়েছে কিরিন ৯৭০ প্রসেসর। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্বলিত এই প্রসেসর পি-টোয়েন্টির ব্যবহারকারীকে দিবে অন্য পর্যায়ের স্মার্টফোন অভিজ্ঞতা।

পর্দার আকৃতি 
আইফোন-টেনের মতো পি-টোয়েন্টিতে যোগ করা হয়েছে ‘নচ’। নচ হলো পর্দার একেবারে উপরের দিকের মাঝখানে সামান্য জায়গা। যেখানে সেলফি ক্যামেরা ও অন্যান্য সেন্সর থাকে। এই নচের দুই পাশে থাকবে ব্যাটারি ও নেটওয়ার্কের চিহ্ন। অর্থাৎ পর্দার সর্বোচ্চ জায়গা ব্যবহারের চেষ্টা করেছে হুয়াওয়ে।

মূল কথা
পি-টোয়েন্টির আরো দারুণ দিক হলো এর মেটাল কাঠামো ও ব্যাটারি। কাঠামোর কারণে ফোনটির দীর্ঘ স্থায়িত্ব এ ধরনের অন্য যে কোনো ফোনের মতোই। হাত থেকে পড়ে ভেঙে যাওয়ার শঙ্কা এ কারণে অনেক কম। এ ছাড়া ৩৪০০ এমএইচ ব্যাটারি দিবে দীর্ঘক্ষণ ফোন সচল রাখার শক্তি। যার সঙ্গে থাকছে হুয়াওয়ের বিশেষ দ্রুত গতির চার্জ ক্ষমতা। চার জিবি মেমোরি ও ১২৮জিবি অভ্যন্তরীণ মেমোরির এই ফোনটি যে কোনো স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর কাছে হয়ে উঠতে পারে দারুণ উত্তেজনাকর এক ডিভাইস।

ফোনটি এরই মধ্যে কয়েকটি দেশের বাজারে চলে এসেছে। আগামী দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে চলে আসতে পারে বাংলাদেশের বাজারেও। প্রিমিয়াম এই ফোনটির দাম পড়তে পারে এক লাখ টাকার মধ্যে।

Stay ahead of the curve with the latest news and insights on technology, mobile computing, laptops, and outer space. Our team of expert writers brings you in-depth analysis of the latest trends and breakthroughs, along with hands-on reviews of the newest gadgets and devices. From the latest smartphones to the mysteries of the cosmos, we've got you covered.