পরিবার কিংবা বন্ধুদের সাথে অভিমান করে আত্মহত্যা করার ঘটনা সমাজে অহরহ ঘটছে। প্রেমে ব্যর্থ হয়েও তরুণ-তরুণীদের মধ্যে আত্মহত্যা করার ঘটনা কম নয়। প্রতিটি মৃত্যুই প্রতিটি পরিবারের জন্য কষ্টের, নির্মম বেদনাদায়ক। আর তা যদি হয় আত্মহত্যা তবে কষ্টের সাথে সমাজে মুখ দেখানোও হয়ে পড়ে লজ্জাজনক। নিজেকে শেষ করে দেয়ার ঘটনা এখন আর অভিমান কিংবা প্রেমে ব্যর্থতার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। আপনার প্রিয় সন্তান যে কোন সময় আত্মহত্যা করে বসতে পারে প্রযুক্তির আশীর্বাদে! আদর করে হাতে তুলে দেওয়া ট্যাব বা মোবাইল ফোনে যে গেমস খেলছে তা খেলেই সে হয়ে উঠতে পারে আত্মঘাতি!

blue wheel game

‘ব্লু হোয়েল সুইসাইড গেম’ নামে একটি গেম খেলে তেমনি মরণ নেশায় মত্ত হয়ে উঠেছে শিশুরা। এই গেমটি মানুষকে আত্মহত্যা করতে উদ্বুদ্ধ করে। শুরুর দিকে আকর্ষণীয় ও তাক লাগানো হলেও শেষের দিকে এটি আত্মনির্যাতনের ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে। শুরুর দিকে নেশায় পড়ে গিয়ে গেমসটি খেলা শুরু করলে শেষের দিকে এসে খেলোযাড় আর নিজের প্রতি নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারে না। গেমটিতে এমন কিছু ডেয়ার বা চ্যালেঞ্জ উপস্থাপন করে, যা পরে খেলোয়াড়কে আত্মহত্যার দিকে ধাবিত করে।

গেমটিতে প্রতিযোগীদের মোট ৫০টি আত্মনির্যাতনমূলক ধাপ শেষ করতে হয়। ধাপগুলোয় আছে হাত-পা কাটার মতো বিপজ্জনক কাজ। নিজেকে ক্ষত করলেই চলবে না ধাপ এগিয়ে নিতে হলে উপযুক্ত প্রমাণ হিসেবে আত্মনির্যাতনের ছবি তুলে তা গেমিং পেজে আপলোড করতে হয়। তবেই চ্যালেঞ্জপূর্ণ হয়েছে বলে ধরা হবে। এ গেমের শেষ ধাপে অর্থাৎ ৫০তম ধাপে বড় বিল্ডিংয়ের ছাদ থেকে ঝাঁপ মারার নির্দেশ দেয়া হয়। সেই নির্দেশ অনুসরণ করতে গিয়েই কিছুদিন আগে ছাদের ওপর থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন মনপ্রীত সিংহ নামে ভারতের এক কিশোর। সে মুম্বাইয়ের একটি স্কুলের ক্লাস নাইনের ছাত্র ছিল।

২০১৩ সালে রাশিয়ায় শুরু হয় ওই মারণখেলা। প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে দু’বছর পর অর্থাৎ ২০১৫ সালে। নীল তিমিরা মারা যাওয়ার আগে জল ছেড়ে ডাঙায় ওঠে। যেন আত্মহত্যার জন্যই। সেই থেকেই এ গেমের নাম হয়েছে ‘ব্লু হোয়েল’। দ্য হিন্দু,ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, ডেইলি মেইল, দ্যা সান, দ্যা সাইবেরিয়ান টাইমসসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলো এ গেম খেলে আত্মহত্যা করেছে এমন কয়েক জনের ছবিও প্রকাশ করেছে।

আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলো থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে গত তিন মাসে রাশিয়া এবং পার্শ্ববর্তী দেশসমূহে মোট ১৬ জন তরুণীর আত্মহত্যা করেছে বলে জানা গেছে। এদের মধ্যে গত ফেব্রুয়ারিতে সাইবেরিয়ার দুই স্কুল ছাত্রী ইউলিয়া কনস্তান্তিনোভা (১৫) এবং ভেরোনিকা ভলকোভা (১৪) একটি বহুতল ভবনের ছাদ থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করে। একই মাসের একই সপ্তাহে একাতারিনা(১৫) নামে আরেক কিশোরি ফ্ল্যাট থেকে নিচে লাফিয়ে পড়ে গুরুতর আহত হয়। ধারণা করা হচ্ছে, নিহত ওই ১৬ তরুণীই এই গেমের ৫০তম ধাপের শর্ত অনুযায়ী আত্মহত্যা করেছে। রাশিয়া পুলিশের ধারণা, এ গেম খেলে গোটা বিশ্বে এখন পর্যন্ত অন্তত ১৩০ জন আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছে।

এ মারণ গেম পেজের অ্যাডমিন ফিলিপ বুদেকিন নামে রাশিয়ার ২১ বছরের এক যুবক। আটটি দলের সহায়তায় এ গেমটি সে নিয়ন্ত্রণ করত। পুলিশের হাতে আটক হওয়ার পর ফিলিপ এই গেম চালানোর কথা স্বীকার করেছে। তবে এ কাজের জন্য তিনি নিজেকে অপরাধী মনে করেন না! তার মতে যারা সমাজে বেঁচে থাকতে ইচ্ছুক না বা যাদের বেঁচে থাকা উচিত নয় তাদেরকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতে সে সহায়তা করেছে।

ভারত, রাশিয়া, ইউরোপ এবং আমেরিকায় এ মরণ খেলা দিন দিন ছড়িয়ে পড়লেও বাংলাদেশে এখনো এ খেলা জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি। তবে আশঙ্কা করা হচ্ছে, যে কোন সময়ই এ ধরনের মরণ খেলা ছড়িয়ে পড়তে পারে বাংলাদেশেও। মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, সন্তানের হাতে ট্যাবে গেম খেলতে দেয়ার আগে বাবা-মার উচিত পাসে বসে লক্ষ করা সে কি খেলছে। দিনে নির্দিষ্ট সময়েরে বেশি সন্তানের হাতে ট্যাব বা মুঠোফোন দেয়া সন্তানের জন্য অমঙ্গল বয়ে আনতে পারে বলে মত দিয়েছেন তারা।

Stay ahead of the curve with the latest news and insights on technology, mobile computing, laptops, and outer space. Our team of expert writers brings you in-depth analysis of the latest trends and breakthroughs, along with hands-on reviews of the newest gadgets and devices. From the latest smartphones to the mysteries of the cosmos, we've got you covered.