‘অভিমান করে নয়, গেম খেলে ১৩০ জনের আত্মহত্যা’ শিরোনামে গত ২৬ সেপ্টেম্বর টোয়েন্টিফোর লাইভ নিউজ পেপারে একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশের সপ্তাহখানেকের মাথায় রাজধানীতে ঘটে গেল ভয়ংকর একটি অপমৃত্যু। নিজেই নিজের জীবন কেড়ে নিয়েছেন হলিক্রস স্কুলের অষ্টম শ্রেণির মেধাবী শিক্ষার্থী অপূর্বা বর্ধন স্বর্ণা। পরিবারের ধারণা, স্বর্ণা ব্লু হোয়েল গেম খেলে আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছে।

blue wheel game

ব্লু হোয়েল একটি সুইসাইডাল গেইম অর্থাৎ গেমটি খেললে মৃত্যু অনিবার্য। কিন্তু একটি গেম খেললে কিভাবে মৃত্যু হয়? স্বাভাবিকভাবে ‘ব্লু হোয়েল’ (Blue whale) এর অর্থ নীল তিমি। সাধারণত নীল তিমিরা মৃত্যুর আগে সাগরের তীরে উঠে আসে 'আত্মহত্যা' করতে। আর এ গেম যারা খেলেন তারাও যেন মৃত্যুপুরীর ডাঙ্গায় উঠে আসেন নিজের জীবন শেষ করতে।

মৃত্যুর বিষয়টি মাথায় রেখেই গেমের নাম রাখা হয়েছে ‘Blue whale’ বা নীল তিমি। এই ব্লু হোয়েল গেমটিতে ব্যবহার করা হয়েছে চমৎকার গ্রাফিক্স, ব্যাক গ্রাউন্ড মিউজিকে ব্যবহার করা হয়েছে ভীষণ করুন ও আবেগী সুর! গেমের মিউজিক শুনলেই শরীরের রক্ত হীম হয়ে যাবে। ‘ব্লু হোয়েল’ গেমটির ৫০টি লেভেল রয়েছে। গেম ইনস্টলকারীকে বাধ্য করা হয় সবগুলো স্তর খেলার জন্য। ২০১৩ সালে F57 নামক রাশিয়ান হ্যাকার টিম গেমটি তৈরি করে। তবে ২০১৫ সালে VK. com নামক সোশ্যাল মিডিয়ায় এ গেমটি তুমুল জনপ্রিয়তা অর্জন করে। শুরু হয় প্রচুর ডাউনলোড। তবে ২০১৭ সালেই গেমটি খেলে প্রথম মৃত্যুরে ঘটনা ঘটে।

এ মারণ গেমটির অ্যাডমিন ফিলিপ বুদেকিন নামে রাশিয়ার ২১ বছরের এক যুবক। সে সাইকোলজির (মনোবিজ্ঞান) ছাত্র ছিলো এবং ভার্সিটি থেকে বহিষ্কার হয়েছিলো। আটটি দলের সহায়তায় এ গেমটি সে নিয়ন্ত্রণ করত। রাশিয়ান পুলিশের হাতে আটক হওয়ার পর ফিলিপ এই গেম চালানোর কথা স্বীকার করেছে। তবে এ কাজের জন্য তিনি নিজেকে অপরাধী মনে করেন না! তার মতে যারা সমাজে বেঁচে থাকতে ইচ্ছুক না বা যাদের বেঁচে থাকা উচিত নয় তাদেরকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতে সে সহায়তা করেছে। সে জানায় হতাশাগ্রস্থদের পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন করে দেবার জন্যই সে গেমটি বানিয়েছে। হতাশা গ্রস্থদের পৃথিবীত বেঁচে থাকার কোন অধিকার নেই।

এখন পর্যন্ত রাশিয়ায় গেমটি খেলে মৃতের সংখ্যা ১৫১ জন এবং রাশিয়ার বাইরে মৃত্যুর ঘটনা ৫০ টি। জুলিয়া ওভা ও ভের্নিকা ওভা নামক দুই বোন প্রথম এই গেইমের শিকার। গেমটির ৫০ তম লেভেলে গিয়ে ছাদ থেকে লাফিয়ে তারা সুইসাইড করেছিলো। জুলিয়া ওভা মৃত্যুর ঠিক আগে সোশাল নেটওয়ার্কে নীল তিমির ছবি আপলোড দিয়ে লিখেছিলো– ‘The end!’

‘ব্লু হোয়েল’ গেম ওপেন করা মাত্র জানতে চাওয়া হবে ‘গেমটি খেলা শুরু করলে আপনি কোনোভাবেই এর থেকে বেরিয়ে আসতে পারবেন না, আপনি সর্বশেষে মৃত্যু বরণও করতে পারেন। আপনি কি এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে আগ্রহী?’ আপনি ইয়েস (হ্যাঁ) বা নো (না) অপশনের মধ্যে ‘ইয়েস’ অপশন ক্লিক করা মাত্রই পা দিয়ে দেবেন মৃত্যু ফাঁদে।

গেমটির প্রথম দশটা লেভেল খুবই আকর্ষনীয়। গেমটি প্রথমে কিছু মজার মজার নির্দেশনা দিবে। যেমন- রাত তিনটায় ঘুম থেকে উঠে হরর ছবি দেখা, চিল্লাচিল্লি করা, উঁচু ছাদের কিনারায় হাঁটাহাঁটি করা, পছন্দের খাবার খাওয়া ইত্যাদি নির্দেশনা দিতে দিতে গেমটির এডমিন হাতিয়ে নেবেন খেলোয়ারের ব্যক্তিগত সব তথ্য। প্রথম ১০টি ধাপ পার করার পর ১৫ ধাপ পর্যন্ত চলবে তথ্য হাতানোর কাজ! ১৫ ধাপ পর কঠিন মিশন দেয়া শুরু হবে! যেমন- ব্লেড দিয়ে হাত কেটে নীল তিমির ছবি আঁকতে বলতে পারে!

প্রথম ২০টি চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করার পর অ্যাডমিন তার কৌশল পরিবর্তন করতে শুরু করে। প্রথম বিশ ধাপে সংগ্রহ করে ফেলা তথ্যের উপর ভিত্তি করে মোহাক্রান্ত বা হিপনোসিস পদ্ধতির প্রয়োগ করতে শুরু করবে। আপনি তখন ভাববেন এই গেম ছাড়া আপনার বেঁচে থাকা অসম্ভব। গেমারকে শীতের দিনে খালি গায়ে ঘোরার নির্দেশ দিবে কিংবা বলা হবে, বাবার পকেট থেকে টাকা চুরি করা, বন্ধুর মোবাইল চুরি বা সবচেয়ে প্রিয় বন্ধুর সাথে দুর্ব্যবহার করার নির্দেশ দেয়া হবে! এসব মিশনের প্রমাণ হিসেবে ছবি বা ফটো এডমিনকে পাঠাতে হবে! আর এভাবেই কৌশলে বন্ধু ও পরিবারের সদস্যদের থেকে আলাদা করে ফেলা হবে।

২৫ লেভেল পর নির্দেশনা আসবে মাদক বা ড্রাগ নেবার! এভাবেই সম্মোহিত করে করে ৩০ লেভেল পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হবে। ৩০তম ধাপ অতিক্রম করার পর গেম এডমিন হঠাৎ গেমারের সাথে চিট করা শুরু করবে! ৩১তম লেভেলে গেমার হয়ে উঠবে ক্রেজী! তারপর কিছুদিন গেমারকে সারপ্রাইজ দিয়ে হঠাৎ এডমিন বলবে একত্রিশ তম লেভেল আনলকড! গেমারের নগ্ন ছবি চাওয়া হবে এই স্তরে! তখন হিপনোসিস ও মাদকের কারণে নিজের নগ্ন ছবি পাঠাতেও চিন্তা করবে না গেমার। একই সাথে ড্রাগ নেবার মাত্রাও বাড়াতে থাকবে গেমারের।

এরপর নির্দেশনা আসবে ভালোবাসার মানুষের সাথে সেক্স করার এবং গোপনে ছবি তুলে তা গেমে আপলোড করার বা নিজের শরীরে একাধারে শ'খানেক সুঁই ফোটাতে এবং ফটো আপলোড করে পাঠাতে। এভাবেই গেমার চলে যাবে ৪০ তম লেভেলে! এবার গেমার ভীত হয়ে গেম এডমিনকে অনুরোধ করবে মুক্তি দেয়ার জন্য! গেমার তখন চরম মাত্রার হতাশ হয়ে একাকী কাঁন্না-কাটি করে হাতজোর করে মুক্তি চেয়েও মুক্তি পাবে না। গেমটি আনইনস্টল করতে চাইলেই শুরু হবে ব্ল্যাকমেইলিং!

এডমিন তখন গেমারের পাঠানো সকল তথ্য ফাঁস করে দেয়ার হুমকি দেবে। গেমার বাধ্য হয়ে প্রবেশ করবে ৪১তম স্তরে! ৪১ থেকে ৪৯তম লেভেলে গেমার প্রচণ্ড হতাশ আর মাদকাসক্ত হয়ে পড়বে। ৫০ তম স্তরে গেমারকে মুক্তির জন্য শর্ত দেয়া হবে! বলা হবে- নিজের শরীরে অ্যানাসথেসিয়ার ড্রাগ ক্যাটামিন পুশ করে এডমিনকে ছবি পাঠাতে হবে এবং ১০ তলার চেয়েও উঁচু কোনো ভবনের ছাদের একেবারে কিনারায় দাঁড়িয়ে যদি সেলফি আপলোড দিতে পারে তবেই গেমার মুক্ত!

গেমার সেটা আর পারবে না। কারণ শরীরে পুশ করা ক্যাটামিন ততোক্ষণে গেমারের মস্তিষ্কে চলে যাবে! মোবাইলের স্ক্রীণে তখন নির্দেশ আসবে– 'নিচের দিকে তাকাও! লাফ দাও, মুক্তি পাও!' গেমার মুক্তি পেতে গিয়ে করে বসবে আত্মহত্যা। এভাবেই উঠতি বয়সের তরুণ-তরুণী হার মানে ব্লু হোয়েল গেমের কাছে। সমাপ্তি ঘটে মানব জনমের।

Stay ahead of the curve with the latest news and insights on technology, mobile computing, laptops, and outer space. Our team of expert writers brings you in-depth analysis of the latest trends and breakthroughs, along with hands-on reviews of the newest gadgets and devices. From the latest smartphones to the mysteries of the cosmos, we've got you covered.