তিন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন এখন বাংলাদেশের নিচে!

নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের ক্রিকেট। উত্থান- পতনের নানামাত্রিক উপাখ্যান শেষে ধরা দিচ্ছে সাফল্যের স্বর্ণালী সময়। এরই একটা নীরব ঘোষণা হয়ে আপাতত দাঁড়িয়ে গেছে আইসিসির র‍্যাঙ্কিং। ছয় নম্বরে থেকে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি শুরু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের নিচে পড়ে আছে তিন তিনটি বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দল! এতো দুর্দান্ত সময় আর কবে পেয়েছেন বাংলাদেশি সমর্থকরা?

গতকাল সমাপ্ত হওয়া আয়ারল্যান্ড ত্রিদেশীয় সিরিজের শেষ ম্যাচে পাঁচ উইকেট হাতে রেখেই নিউজিল্যান্ড উড়িয়ে দিয়েছেন মাশরাফিরা। এর মাধ্যমে প্রথমবারের মতো দেশের বাইরের কোনো ভেন্যুতে নিউজিল্যান্ডকে হারানোর স্বাদ পেয়েছে বাংলাদেশ।

এই একটি জয় মাশরাফিদের দিয়েছে আরো অনেক কিছু। এই জয় থেকে পাওয়া চার পয়েন্টে ভর করে বাংলাদেশ পৌঁছে র‍্যাঙ্কিংয়ের ছয় নম্বরে। এতোদিন ছয় নম্বরে ছিলো সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিন শ্রীলঙ্কা। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি শুরুর ঠিক আগে যে , তাতে শ্রীলঙ্কা আর বাংলাদেশের মোট পয়েন্ট সমান হলেও ভগ্নাংশের ব্যবধানে এগিয়ে আছেন মাশরাফিরা। যা শ্রীলঙ্কার চেয়ে এগিয়ে রেখে বাংলাদেশকে।

বাংলাদেশের নিচে পড়ে আছে আরো দুই সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন পাকিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজও। পাকিস্তানকে বেশ আগেই পিছনে ফেলেছেন মাশরাফিরা। ওয়েস্ট ইন্ডিজ তো পিছনে পড়ে আছে আরো আগে থেকেই!

অথচ এই তিন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশের প্রবল প্রতিপক্ষ ছিলো বছর কয়েক আগেও। পরিসংখ্যানের পাতায় চোখ বুলালে এখনো এই তিন দলের সঙ্গে বাংলাদেশের শক্তির পার্থক্যটা ফুটে উঠবে।

আইসিসি র‍্যাঙ্কিংয়ে সদ্য মাশরাফিদের পিছনে পড়ে যাওয়া শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত ওয়ানডে খেলেছে ৪১টি। এর মধ্যে জয় মাত্র পাঁচটিতে। পাকিস্তানের বিপক্ষে একদিনের ক্রিকেটে বাংলাদেশ খেলতে নেমেছে মোট ৩৫ ম্যাচ। তাতে জয় মাত্র চারটি। ১৯৯৯ সালে প্রথম জয় পাওয়ার পর পাকিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় জয় পেতে বাংলাদেশকে অপেক্ষা করতে হয়েছে সুদীর্ঘ দেড় দশকের বেশি!

এই তিন বিশ্বচ্যাম্পিয়নের মধ্যে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি জিতেছে ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে। সেই তাদের বিপক্ষে বাংলাদেশ খেলেছে ২৮ ম্যাচ। জয় মাত্র সাতটিতে।

পরিসংখ্যানের এমন হতশ্রী চেহারাই বলে দিচ্ছে, এই তিন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশের জন্য ঠিক কতোটা প্রবল প্রতিপক্ষ। কিন্তু গত কয়েক বছরে সুদীর্ঘ প্রতীক্ষার ফলাফল পেতে শুরু করেছে বাংলাদেশ। শেষ হতে শুরু করেছে কোটি কোটি সমর্থকের বেদনার প্রহর। আইসিসির বর্তমান র‍্যাঙ্কিং যেনো নীরবে দিচ্ছে সেই ঘোষণাই।

মাশরাফিরা নিশ্চয় চাইছেন র‍্যাঙ্কিংয়ের এই উর্ধ্বাহোরণকে আরো দীর্ঘায়িত করতে। যেমন তামিম ইকবাল বলে রেখেছেন যে, তারা কেবল চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির গ্রুপ পর্বের তিন ম্যাচ খেলতে যাননি ইংল্যান্ডে। বরং এই আসরে যতোটা সম্ভব, ঠিক ততোটাই খেলতে চান তারা।

তামিমের এমন ঘোষণায় যে অবিশ্বাস্য সাহসের দীপ্তিময় প্রকাশ ঘটেছে, তা নিশ্চয় কেবল তার কথা নয়। বরং পুরো বাংলাদেশ দলই মুখিয়ে আছে একটা বড় কিছুর জন্য। সেই বড় কিছুটা কী— এই প্রশ্নটা উঠে যাচ্ছে, সঙ্গে মনের ভিতরে উঁকি দিচ্ছে স্বপ্নের রেণু ছড়ানো নানা উত্তরও।

সেই উত্তরগুলো হয়তো এখনো কেউ সাহস করে বলে দিতে পারছেন না— তবে মনের ভিতরে উঁকি দেয়া সেই স্বপ্নের রূপটা সত্যি সত্যি ধরে ফেলা কি অসম্ভব? নিশ্চয় নয়। তিন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন পিছনে ফেলে দেয়ার কীর্তির পর বাংলাদশ যে এখন আরো বড় কিছুর জন্য প্রস্তুত, এমন কথা বলা নিশ্চয় আর বেশি বাড়াবাড়ি নয়!