এক দশক আগেও বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে বড় ধরনের আশা করার লোক দেশের বাইরে খুব বেশি ছিলো না। কিন্তু এখন পরিস্থিতি অন্য রকম। দেশের বাইরেও এখন মাশরাফি-মুশফিকদের নামে শ্লোগান ওঠে। দেশের বাইরে, হাজার হাজার কিলোমিটার দূরের একজন মানুষও লাল-সবুজ জার্সি পরে ছুটে আসেন স্টেডিয়ামে। বাংলাদেশের ক্রিকেট এই পর্যায়ে আসার পিছনে চারটি ম্যাচ রেখেছে অবিশ্বাস্য অবদান। ওই চারটি ম্যাচ যেনো জিয়ন কাঠি। যে কাঠির ছোঁয়ায় বাংলাদেশের ক্রিকেট পেয়েছে সঞ্জীবনী সুধা।

bangladesh beat pakistan in 1999 world cup

৩১ মে ১৯৯৯, নর্দাম্পটন। প্রতিপক্ষ পাকিস্তান।
পাকিস্তান তখন তারকায় ঠাসা দল। আর বাংলাদেশ তখনো সেই অর্থে কোনো তারকা ক্রিকেটার পায়ইনি। আকরাম খান, আমিনুল ইসলাম বুলবুলরা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তারকা ছিলেন বটে, কিন্তু বৈশ্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে তারা তখনো ছোট দেশের বড় তারকার বাইরে আর কিছুই নন। পাকিস্তান ততোদিনে একটা বিশ্বকাপ জিতে ফেলেছে। আর বাংলাদেশ সবেমাত্র পা রেখেছে বিশ্বকাপের উত্তপ্ত ময়দানে।

সেই ম্যাচে বাংলাদেশের পক্ষে বাজি ধরার লোক গোটা বাংলাদেশেও ছিলো না। কিন্তু মাঠে ঘটে গেলো ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম এক অঘটন। ঘটে গেলো? নাকি ক্রিকেটপ্রেম এবং দেশাত্ববোধের চেতনায় ঘটনাটা ঘটিয়ে দিয়েছিলেন আকরাম খান আর খালেদ মাহমুদ সুজনরা? দ্বিতীয়টিই নিশ্চয়!

ওই ম্যাচে, বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম জয়টাই মূলত লিখে দেয় বাংলাদেশের বর্তমান ক্রিকেট ভাগ্যের বড় একটা অংশ। ওই জয়ের উপর ভর করেই টেস্ট স্টাটাসের দাবির পক্ষে জোরালো যুক্তি পেয়ে যায় বাংলাদেশ এবং পরের বছরই ক্রিকেটের কুলিন সদস্যদের দলে ওঠে যায় বাংলাদেশের নাম। ২০০০ সালেই বাংলাদেশ পেয়ে যায় টেস্ট স্টাটাস। যদিও টেস্ট খেলার মতো পরিস্থিতি তখনো অর্জন করতে উঠতে পারেনি বাংলাদেশের ক্রিকেট। তারপরও পাকিস্তানকে হারিয়ে দেয়ার ম্যাচটা বাংলাদেশকে এগিয়ে দেয় লম্বা একটা পথ।

bangladesh beat australia in 2005

১৮ জুন ২০০৫, কার্ডিফ। শিকারের নাম অস্ট্রেলিয়া।
বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে হারানোর ছয় বছর পর, কার্ডিফে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে শোরগোল ফেলে দেন হাবিবুল বাশার-আশরাফুলরা। অস্ট্রেলিয়া তখন প্রবল পরাক্রমশালী এক প্রতিপক্ষ। তাদেরকে হারানোর আগেও অবশ্য ভালো দুটি জয় আছে বাংলাদেশের। একটি ২০০৪ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। যেটি এসেছিলো একের পর এক ৪৭টি ম্যাচের পর; যার মধ্যে ৪৫টিই ছিলো পরাজয়। পাকিস্তানের বিপক্ষে বিশ্বকাপে জেতার পর পরপর্তী জয় পেতে বাংলাদেশকে অপেক্ষা করতে হয় পাক্কা পাঁচটা বছর! একই বছর ভারতকে প্রথমবার হারানোর স্বাদটাও পায় বাংলাদেশ। কিন্তু দুই দুটি জয়ের তুলনায় অনেক বড় ছিলো অস্ট্রেলিয়াকে হারানোর ঘটনাটি।

কার্ডিফের সেই জয়ে বিশ্ব কাঁপান আশরাফুল। মেহরাব হোসেন অপির পর মাত্র দ্বিতীয় বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান হিসেবে ওয়ানডেতে সেঞ্চুই করেন তিনি। আশরাফুলের সেই সেঞ্চুরি বাংলাদেশের ক্রিকেটের রূপকথার গল্পে সবচেয়ে সুন্দর গল্পগুলোর একটি। পাকিস্তানের মতো অস্ট্রেলিয়াকে হারানোকেও বিশ্ব দেখেছিলো অঘটন হিসেবে। বিশ্বের কাছে অঘটন হলেও, বাংলাদেশের কাছে কার্ডিফের জয় হলো এমন এক ঘটনা, যা লিখে দেয় বাংলাদেশের বিশ্বাসের ব্যাকরণ।

bangladesh beat india in 2007

১৭ মার্চ ২০০৭, পোর্ট অব স্পেন। ভারত খেলো ধরা।
১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে হারানোর সুখস্মৃতি নিয়ে ২০০৩ সালের বিশ্বকাপ খেলতে নেমেছিলো বাংলাদেশ। কিন্তু এই বিশ্বকাপটা বাংলাদেশকে ফেরায় একদম শূন্য হাতে। হাবিবুল বাশাররা তাই প্রতিজ্ঞা করেছিলেন ২০০৭ সালের বিশ্বকাপ নিয়ে। দলে ছিলো একঝাক তরুণ মুখ। সেই তরুণরাই ১৭ মার্চ পোর্ট অব স্পেনে হারিয়ে দেন ভারতকে। তামিম-মুশফিক-সাকিবের হাফ সেঞ্চুরি এবং তাদের সঙ্গে মাশরাফির অলরাউন্ড পারফর্মের কাছে মাথা নোয়ায় সৌরভ গাঙ্গুলি, শচিন টেন্ডুলকার, বিরেন্দর শেবাগ ও রাহুল দ্রাবিড়দের ভারত।

এই জয়টা থেকেই অঘটনকে অস্বীকার করা শুরু করে বাংলাদেশ। বড় দলকে হারানো যখন অভ্যাসে পরিণত হয়, তখন নিশ্চয় তা আর অঘটন থাকে না বরং শক্তিমত্তার প্রদর্শনী হয়ে দাঁড়ায়!

২০০৭ সালের বিশ্বকাপে প্রভিডেন্সে দক্ষিণ আফ্রিকাকেও হারান হাবিবুল বাশাররা। কিন্তু ভারতকে হারানোর তুলনায় তা বড় ছিলো না। ভারতের ব্যাটিং লাইন তখন ক্রিকেট ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা। তখনকার বাংলাদেশের জন্য ওই ভারতকে হারানোটা সত্যিকার অর্থে একটা অঘটনই ছিলো। যদিও ততোদিনে বাংলাদেশের সমর্থকরা অঘটনকে অস্বীকার করার সাহস অর্জন করে ফেলেছেন।

bangladesh beat england in 2015

৯ মার্চ ২০১৫, অ্যাডিলেড। ইংলিশরা কুপোকাত।
পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া ও ভারতকে হারানোর ফাঁকে ফাঁকে বাংলাদেশ আরো অনেকগুলো বিখ্যাত জয় পেয়েছে। যার মধ্যে আছে ২০১১ সালের বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের মতো দলকে হারানোর স্মৃতিও। ঠিক পরের বিশ্বকাপে আবার ইংল্যান্ডকে হারান মাশরাফিরা। অ্যাডিলেডের সেই জয়টা নিঃসন্দেহে ২০১১ সালের জয়ের তুলনায় সুবিশাল। কারণ এই জয়ে ভর করে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠে যায় বাংলাদেশ।

এই জয় মাশরাফি-সাকিব-মাহমুদুল্লাহদের বিশ্বাসের পাহাড়টাকে করে দেয় অবিচল-অটল। যার ফল আসে বিশ্বকাপের পর দেশের মাটিতে একের পর এক পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজ জয়ে। বাংলাদেশ পরিণত হয়ে যায় ওয়ানডের নতুন মহাশক্তিতে।

ওয়ানডে সাফল্যের ইতিহাস দেখতে গেলে মণিমুক্তার এমন আরো অনেক জয় ঝলমল করে উঠবে নিশ্চয়। কিন্তু এই চারটি জয় আসলে একেকটা মাইলফলক। এই চারটি জয় আসলে শক্তিমাণ হয়ে উঠার পথে একেকটা সদর্প পদক্ষেপ। তারপরও নিশ্চয় তর্ক থাকবে। তা থাকুক। তর্ক থাকাই যে প্রমাণ করে সাফল্যের ঝুলিটা ক্রমেই ফুলে ফেঁপে উঠছে!

Stay on top of the latest sports news, including cricket and football, from around the world. Get comprehensive coverage of matches, tournaments, and leagues— along with expert analysis and commentary from our team of sports journalists. Whether you're a die-hard fan or a casual observer, you'll find everything you need to know about your favorite sports here.

Sports, cricket, and football are popular topics in the world of sports. Cricket is a bat-and-ball game played between two teams of eleven players and is particularly popular in South Asian countries. Football, also known as soccer, is a team sport played with a spherical ball between two teams of eleven players and is widely popular worldwide. Sports enthusiasts follow the latest news, matches, tournaments, and leagues in these sports and analyze and comment on the performances of players and teams.