ইমরুলের ‘তিন’ নিয়ে তুলকালাম

২৮ ম্যাচের টেস্ট ক্যারিয়ারে ইমরুল কায়েস ব্যাটিং করছেন ৫৬ ইনিংসে। এর মধ্যে ছয়টি ইনিংস বাদ সব ইনিংসে তিনি খেলেছেন দুই নম্বরে। তামিম ইকবালের সঙ্গে তার ওপেনিং জুটি বাংলাদেশের ইতিহাসের সেরা। টেস্টে দলের দ্বিতীয় ইনিংসে সবচেয়ে বড় ওপেনিং জুটির বিশ্বরেকর্ডটিও তাদেরই দখলে। কিন্তু হঠাৎ করেই মুমিনুলকে নামিয়ে দেয়া হয়েছে তিন নম্বরে। মঙ্গলবার অনুশীলনের ফাঁকে সংবাদ সম্মেলনে এসে ইমরুলকে দেখতে হলো তার 'তিন’ নিয়ে তুলকালাম।

সংবাদ সম্মেলনে ইমরুলকে একের পর এক প্রশ্ন করা হয় দুই থেকে তাকে তিনে সরিয়ে দেয়া নিয়ে। জবাবে ইমরুল অসন্তোষ প্রকাশ করেননি বটে, তবে তার কথাবার্তায় এটা স্পষ্ট হয়েছে যে, তিন নম্বর জায়গাটাতে তিনি ব্যাটিং করে যাচ্ছেন কেবল কোচের পরিকল্পনার কারণেই। ওপেনিংয়ে তার বদলে তামিমের সঙ্গে চান্দিকা হাথুরুসিংহে পছন্দ করছেন সৌম্য সরকারকে।

এ প্রসঙ্গে ইমরুল বলেন, ‘হয়তো পরিকল্পনাটাই এমন। সৌম্য গত কয়েকটি ইনিংসে ভালো খেলেছে। কোচ তাই মনে করছেন, সৌম্যই এই জায়গায় ভালো।’

সৌম্য সরকার প্রথমবার ওপেনিংয়ে সুযোগ পান নিউজিল্যান্ড সফরে, ক্রাইস্টচার্চ টেস্টে। ওয়েলিংটনে এর আগের টেস্টে দীর্ঘ সময় কিপিংয়ের পর ব্যাটিংয়ে ডাইভ দিতে গিয়ে আঘাত পান ইমরুল। ছিটকে যান দল থেকে। তার অনুপস্থিতির কারণেই মূলত ওপেনিংয়ে সুযোগ পান এর আগে চার ইনিংস সাত নম্বর এবং এক ইনিংস ছয় নম্বরে খেলা সৌম্য।

টেস্টে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ মোট ২৫টি ভিন্ন ভিন্ন জুটি দেখেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশিবার বাংলাদেশের হয়ে টেস্ট ব্যাটিং শুরু করেছেন তামিম-ইমরুল। ৪৮ ইনিংসে ৪৭.৯৩ গড়ে তারা করেছেন ২২০৫ রান। বাংলাদেশের অন্য কোনো ওপেনিং জুটির টেস্টে হাজার রানও নেই। এই জুটিতে সেঞ্চুরি হয়েছে মোট চারবার, হাফ সেঞ্চুরি আছে আটবার। অন্য কোনো জুটিতে একটির বেশি সেঞ্চুরি এবং চারটির বেশি হাফ সেঞ্চুরি নেই।

এমন ছন্দময় জুটি ভেঙে তিন নম্বরে নামিয়ে দেয়ায় ইমরুল কি নিজেকে একটু দুর্ভাগাও ভাবছেন না— এমন প্রশ্ন গিয়েছিলো বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যানের দিকে। উত্তরে ইমরুল বলেন, ‘না। সে রকম নয়। জাতীয় দলের হয়ে খেলতে পারাটাই সৌভাগ্যের ব্যাপার। ব্যাটিংয়ের জায়গা নিয়ে নিজের একটা পছন্দ তো থাকেই। কিন্তু দলের চাওয়া পূরণ করাটাই বড় ব্যাপার। আমিও ওপেনিং বা তিন নম্বর; যে কোনো পজিশনে খেলতে রাজি আছি।’

দীর্ঘ সময় ওপেনিং করা থেকে হঠাৎ করে তিন নেমে যাওয়াটা যে সহজ ব্যাপার নয়, সেটাও ব্যাখ্যা করেছেন ইমরুল। তিনি বলেন, ‘প্যাড পরে বসে থাকতে হয়। এ সময় একটা অস্থিরতা কাজ করে। কখন মাঠে নামতে পারবো, সেটাই মনে হয় শুধু। তামিমকে হঠাৎ করে নিচে নামিয়ে দিলে তার সমস্যা হবে। তারপরও মানিয়ে নিতে হচ্ছে। দলের জন্য খেলতে হচ্ছে।’

তিন নিয়ে যে তুলকালাম চলছে, ইমরুল অবশ্য তা মনে রাখতে চান না। ইমরুল মনে রাখতে চান না এলোমেলো অতীতকেও। ইমরুল বরং চোখ রাখছেন সামনের দিকে। তার নিশ্চয় অজানা নয় যে, অতীত বা বর্তমান লুণ্ঠিত হলেও ভবিষ্যত থাকে সুরক্ষিত। ইমরুলের সব মনোযোগ আসলে ওই ভবিষ্যতের দিকেই।