বিপিএল বাংলাদেশকে কী দিচ্ছে?

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) পঞ্চম আসরের ১২টি ম্যাচ খেলা হয়ে গেছে। অন্তত একটা করে হলেও ম্যাচ জিতেছে সব দল। সর্বোচ্চ তিনটি জয় নিয়ে শীর্ষে আছে সিলেট সিক্সার্স। আসরের সবচেয়ে কম বাজেটের দল হয়েও তাদের এমন কীর্তি নিঃসন্দেহে বিস্ময়কর। কিন্তু বিস্ময় জাগাতে পারছেন না স্থানীয় ক্রিকেটাররা। প্রায় প্রতিটি দলের মূল জায়গায় খেলছেন বিদেশিরা। ফলে স্বাভাবিকভাবেই তারাই করছেন ম্যাচ জেতানো পারফর্ম। দুই একটা ব্যতিক্রম বাদ দিলে, এভাবেই চলছে বিপিএল। এই পরিস্থিতিতে তাই এমন প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক— বিপিএল আসলে কী দিচ্ছে বাংলাদেশকে?

বিপিএলের ঢাকা পর্বের দুই দিনের খেলা শেষে সোমবার ছিলো বিরতি। এই বিরতিতে সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়েছিলেন সাবেক বাংলাদেশ অধিনায়ক এবং বর্তমান প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু। বিপিএল থেকে বাংলাদেশ কী পাচ্ছে— এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিলো তাকে।

উত্তরে বাংলাদেশের ইতিহাসের এক সময়ের সাড়া জাগানো এই ব্যাটসম্যান বলেন, ‘আমরা যদি এই লিগ থেকে অন্তত দুই তিনজন ভালো পারফর্মার পাই, সেটা আমাদের জন্য অনেক বড় পাওয়া হবে, দেশের জন্য অনেক ভালো হবে। যেহেতু সব দলেরই মূল জায়গায় বিদেশিরা খেলছে, সেহেতু দেশি খেলোয়াড়দের জন্য পারফর্ম করা কষ্টকর। তাদের খুব পরিশ্রম করতে হচ্ছে।’

পরোক্ষভাবে হলেও মিনহাজুল স্বীকার করেছেন যে, বিপিএল থেকে বাংলাদেশের আসলে পাওয়ার কিছু আসছে কমই। এর মূল কারণ একাদশের মূল খেলোয়াড়েরা থাকছেন বিদেশি কোটা থেকে। ফলে বাংলাদেশিরা সেভাবে পারফর্ম করারই সুযোগ পাচ্ছেন না। যারা সেই সুযোগটা পাচ্ছেন, তাদের বেশির ভাগই আবার জাতীয় দলের বা জাতীয় দলের আশপাশের ক্রিকেটার। একেবারে নতুনদের উঠে আসার জন্য বিপিএল আদর্শ কোনো প্লাটফর্ম হয়ে উঠতে পুরোপুরি ব্যর্থ।

একাদশে পাঁচ বিদেশি নিয়ে আসর শুরুর আগে কথা বলেছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের ওয়ানডে অধিনায়ক এবং বিপিএলে রংপুর রাইডার্সের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। তিনি বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশি হিসেবে একজন বাংলাদেশি খেলোয়াড় কম খেলাতে পারায় আমি বলবো- দুঃখিত। তাদের জন্য একটা জায়গা নষ্ট হওয়া মানে সুযোগ নষ্ট হওয়া। একই সাথে আমাদের মনে হয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গিয়ে আমরা যে সমস্যায় পড়ি, সেটার অনুশীলন বিপিএল থেকে তরুণরা শিখে নিবে। পরে এটা জাতীয় দলের হয়ে খেলার সময় কাজে লাগবে।’

বিষয়টি নিয়ে বিপিএলের ঢাকা পর্ব শুরুর ঠিক আগে জাতীয় দলে দীর্ঘ দিন খেলা ওপেনার শাহরিয়ার নাফীস বলেছিলেন, ‘আমরা টুর্নামেন্টের আগে আশাবাদী হয়ে বলেছিলাম যে, পাঁচ বিদেশিতে কোনো সমস্যা হবে না। কিন্তু স্থির হয়ে যদি দেখেন, স্থানীয়দের পারফর্ম করার সুযোগ কিন্তু কম। যেমন সাকিব চারটা ওভার হয়তো করছে, কিন্তু ব্যাটিংয়ে সুযোগ পাচ্ছে না। ফ্রেঞ্চাইজি ক্রিকেটের কথা বলে আপনি যদি পাঁচ বিদেশিকে বেশি সুযোগ দেন আর ভাবেন যে বাংলাদেশ ক্রিকেটের উন্নতি হচ্ছে, তাহলে আমি মনে করি এটা ভুল। ব্যাটিংয়ে শীর্ষ তিন জায়গায় খেলছেন বিদেশিরা। প্রতিটি দলে ১০ থেকে ১২ ওভার বিদেশিরা করছেন। আশা করছি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড ব্যাপারটা নিয়ে ভাববে। আমাদের দলে অবশ্য সুযোগ পাচ্ছি। আমাদের দলের মতো সবাই যদি চিন্তা করে, আশা করি পরিবর্তন আসবে।’

পাঁচ বিদেশি খেলোনোর সিদ্ধান্তটা মূলত নেয়া হয়েছিলো বিপিএলে আট দলের অংশগ্রহণের সম্ভাবনা থেকে। কিন্তু এবারের আসরের সব কিছু চূড়ান্ত করার পর্যায়ে বাদ পড়ে যায় গত আসরে খেলা বরিশাল বুলস। ফলে এবারও বিপিএল হচ্ছে সাত দলেরই আয়োজন। কিন্তু পাঁচজন বিদেশি খেলানোর সিদ্ধান্তটা আর বদলানো হয়নি।

বিপিএল বাংলাদেশকে কী দিচ্ছে— এই প্রশ্নের উত্তরে আনন্দিত হওয়ার বিষয় তখনই আসবে, যখন স্থানীয় ক্রিকেটাররা এই টুর্নামেন্টে বলার মতো পারফর্ম করবেন। পঞ্চম বিপিএলে সেটা এখন পর্যন্ত অনুপস্থিত। কোটি কোটি টাকা খরচ করে যদি বিপিএলকে নতুন প্রতিভা অন্বেষণের মঞ্চ হিসেবে প্রতিষ্ঠিতই করা না যায়, তাহলে ‘এই বিপিএল দিয়ে বাংলাদেশ কী করিবে!’